আর্জিনাই জামিলকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে বলেছিল: শাহীনের স্বীকারোক্তি
প্রকাশ: ২০১৭-১১-০৯ ১১:৩৩:৪৫
রাজধানীর বাড্ডায় প্রাইভেটকার চালক জামিল শেখকে ‘ ‘দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে’ বলেছিল তার স্ত্রী আর্জিনা বেগম।
আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে এ কথা জানিয়েছেন আর্জিনার পরকীয়া প্রেমিক শাহীন মল্লিক।
বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম সত্যব্রত সিকদারের আদালতে শাহীন জামিল শেখ ও তার মেয়ে নুসরাত জাহানকে জোড়া খুনের দ্বায় স্বীকার করেন।
এ সময় শাহীন বলেন, আর্জিনার সঙ্গে পরকীয়ার সূত্র ধরেই পরিকল্পিতভাবে জামিলকে হত্যা করা হয়। তবে ৯ বছরের নুসরাত ঘটনার শিকার হয়।
পরে শাহীনকে খাসকামরায় নিয়ে গেলে মহানগর হাকিম ওই হত্যাকাণ্ডের সবিস্তার বর্ণনা রেকর্ড করেন।
এর আগে শনিবার আদালতে হাজির করা হলে স্বামী ও সন্তান হত্যার ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে জবানবন্দি দেন আর্জিনা বেগম।
একই দিন আদালতে তার অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছিলেন শাহীন।
তবে মামলাটি তদন্তের স্বার্থে পুলিশ শাহীনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চায়। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তবে এক দিন আগেই (বুধবার) শাহীন আদালতে জবানবন্দি দিলেন।
শাহীন তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে বাবা-মেয়ে হত্যার সঙ্গে কোনোভাবেই তার (শাহীন) স্ত্রী সাহিদা জড়িত নয় বলে দাবি করেন। জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের মামলা তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যানুযায়ী শাহীন আদালতকে বলেছেন, দীর্ঘদিন পাশাপাশি থাকার কারণে আর্জিনা ও তার (শাহীন) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর্জিনাই প্রথম প্রস্তাব দেয় বলে শাহীন আদালতকে জানান।
শাহীন আদালতকে বলেন, বিষয়টি জানাজানি হলে জামিল তার স্ত্রী আর্জিনাকে মারধর করেন। এর একপর্যায়ে আর্জিনা বাবার বাড়ি চলে যান। প্রায় দুই মাস পর জামিলের এক ভগ্নিপতির মধ্যস্থতায় ওই বিবাদ মীমাংসা হয় এবং আর্জিনা জামিলের সংসারে ফিরে আসেন।
এরপরও তাদের (আর্জিনা-শাহীন) সম্পর্ক ভেঙে যায়নি দাবি করে শাহীন আদালতকে বলেছেন, মাসখানেক আগে আর্জিনা তাকে বিয়ে করার জন্য বলেন। এজন্য জামিলকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা আর্জিনাই তাকে বলেছিলেন বলে শাহীন আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী শাহীন তার এক বান্ধবীকে দিয়ে বাড্ডার একটি ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ কিনে আনেন। ঘটনার রাতে আর্জিনা সেই ওষুধ করলার সঙ্গে মিশিয়ে জামিলকে খাওয়ান।
জামিল ঘুমিয়ে পড়লে তিনি আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখা একটি কাঠ দিয়ে মাথায় আঘাত করেন।
জামিলকে মারার দৃশ্য দেখে ফেলায় তাদের ৯ বছরের মেয়ে নুসরাতকেও গলাটিপে মেরে ফেলে বলে আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানান।
এ সময় তার বন্ধু খোয়াজ নুসরাতের হাত-পা এবং আর্জিনা তার মেয়ের মুখে বালিশ চেপে ধরেন বলেও স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেছেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ৩০৬ ময়নারবাগ পাঠানভিলার তৃতীয়তলায় ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ জামিল শেখ (৩৮) ও তার মেয়ে নুসরাত জাহানের লাশ উদ্ধার করে।
নিহত জামিলের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের করপাড়া ইউনিয়নের বনপাড়া গ্রামে। তিনি তেজগাঁওয়ে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক ছিলেন।