প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে গুমের স্বীকারোক্তি: বিএনপি
প্রকাশ: ২০১৭-১১-২৪ ২১:০১:২৬
গুম নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে ‘গুমের পক্ষে স্বীকারোক্তি’ হিসেবে দেখছে বিএনপি।
শুক্রবার ঢাকার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “গতকাল প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন গুমের উপরে- এটা স্বীকার করে নিয়েছে যে, গুম হচ্ছে এবং তারা এই গুমের সাথে জড়িত।”
সম্প্রতি কয়েকজন ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়া নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ মানুষের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুললে তার প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “(গুম) কী কারণে হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে। এটা কি শুধু বাংলাদেশে?
“২০০৯ সালের একটি হিসাব, বৃটেনে দুই লাখ ৭৫ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক গুম হয়ে গেল। তার মধ্যে ২০ হাজারের কোনো হদিসই পাওয়া গেল না। আমেরিকার অবস্থা আরও ভয়াবহ।”
এর সমালোচনায় ফখরুল বলেন, “পার্থক্যটা নিতে হবে আপনাদেরকে, (তিনি) অন্যান্য দেশের তুলনা করেছেন। একটাকে বলা হয়, এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স, অর্থাৎ যেটা সরকারি পর্যায়ে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যাদেরকে গুম করা হয়।
“এই গুম মধ্য যুগে, বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই ঘটনাগুলো ছিল। এখন বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স চলছে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের প্রত্যেকের পরিবার অভিযোগ করে আসছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাদের তুলে নেওয়া হয়েছে।
“প্রতিপক্ষকে গুম করে ফেলা হচ্ছে আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনী দিয়ে- এটা কিন্তু অন্য কোনো গুমের ব্যাপার নয়।… উনারা (প্রধানমন্ত্রী) শিকার করে নিয়েছেন যে, এই গুমটা বাংলাদেশে হচ্ছে। এটা একটা ভালো কথা যে একটা সত্য স্বীকার করেছেন।”
ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ’ করতে এসব গুমের ঘটনা ঘটছে বলেই তা ঠেকাতে সরকারের কোনো উদ্যোগ থাকছে না।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, “৫৪ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের বাস। এইটুকু ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে এত মানুষের অবস্থান। অথচ এই সকল উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা কত। তাদের সব কিছু তো আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন, তারপরও সেই দেশে এতলোক গুম হয়, তার খোঁজ পাওয়া যায় না।”
সেই তুলনায় বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভালো দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা অবস্থা অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণে রেখে যখন কোনো ঘটনা ঘটছে, সাথে সাথে খোঁজ নিচ্ছি।”
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০১৩ সাল থেকে শত শত মানুষকে বেআইনিভাবে গোপন স্থানে আটকে রেখেছে বলে কিছু দিন আগেই অভিযোগ তুলেছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও গুমের অভিযোগ করে আসছে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও বলেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশে গুমের ঘটনা ঘটার কথা ‘স্বীকার’ করে নেওয়া হয়েছে।
“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও তো গুম হয়। তার মানে উনি স্বীকার করছেন যে অন্যদেশে হয়, আমার দেশেও হয়। অতত্রব তিনি এটার স্বীকৃতি দিলেন যে, গুম অন্যদেশে হয় বলে আমিও করি। সুতরাং গুমের দায় প্রধানমন্ত্রী নিজে স্বীকার করে নিলেন।”
রিজভীর অভিযোগ, বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী- কেউ বাদ নেই গুম থেকে।
“এরা যদি কোনো কারণে সরকারের স্বার্থের বাইরে কাজ করেন, তাহলেই তিনি গুম হন।”
৮১ দিন নিখোঁজ থাকার পর ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর মুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “উনি সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার একজন ঘনিষ্ঠজন।… প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করেছে যেটি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বাইরে গেছে।… তাকে ঘায়েল করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতির আত্মীয়-স্বজনদের ধরা হল, গুম করে দেওয়া হল।”
বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম নিখোঁজ হওয়ার পর আর না ফেরার কথাও মানববন্ধনে তুলে ধরেন রিজভী।
তিনি বলেন, “উনার ইচ্ছায় গুম হয়, উনার ইচ্ছায় অনেক দিন গুম থেকে কেউ কেউ বেরিয়ে আসে আর উনার ইচ্ছায় কেউ কেউ চিরস্থায়ীভাবে গুম হয়ে যায়।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধন হয়।
সংগঠনের অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, কাদের গণি চে্ৗধুরী, অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন মানববন্ধনে বক্তব্য দেন।