নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না: মির্জা ফখরুল

প্রকাশ: ২০১৭-১২-০৭ ২৩:২৭:১৩


bnpবিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আগামী নির্বাচন আয়োজনে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর এক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।

আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপিকে নাকে খত দিয়ে আগামী নির্বাচনে আসতে হবে। এবার আর নির্বাচনে না আসার ভুল বিএনপি করবে না। আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনে যাওয়া না–যাওয়া একটি রাজনৈতিক দলের অধিকার। নির্বাচন কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। নির্বাচন করা সাংবিধানিক অধিকার। নির্বাচন যোগ দেওয়া না–দেওয়াও একটি রাজনৈতিক দলের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন শুধু বিএনপির কথা নয়, সারা দেশের জনগণের কথা। আজকে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছ থেকে এই প্রশ্নগুলোই বারবার এসেছে যে সব দলের অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করা, এ প্রশ্নটি এখন জাতির কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো উদ্যোগ নেবেন না বলে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা তাঁর দায়। নির্বাচনের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা, সব দলকে নিয়ে আসার দায় তাঁর, যিনি সরকারপ্রধান। কারণ নির্বাচন করবেন কী করবেন না, নির্বাচন হবে কী হবে না—এটার দায়দায়িত্ব তাঁকেই বহন করতে হবে।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে যেন এখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া সম্ভব হয়, জনগণের অধিকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটাই বিএনপি চায়। প্রধানমন্ত্রী যদি দায়িত্বশীল ব্যক্তি হন, তবে তাঁকে অবশ্যই এই দিকেই চিন্তা করতে হবে। এই মাত্রাতেই চিন্তা করতে হবে, জনগণের মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা বুঝতে হবে। সেভাবেই তাঁকে কাজ করতে হবে।

বিএনপি সংঘাত চায় না দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সংঘাত চাই না। আমরা অস্থিতিশীলতা চাই না। এবারের নির্বাচনে যেন সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যতের ক্ষমতা পালাবদলের একটি শান্তিময় উপায় হয়, তা নিয়ে ভাবতে হবে।’ তিনি বলেন, এখন এই ঔদ্ধত্য ও দাম্ভিকতা, এটা দিয়ে ভবিষ্যতে দেশ শাসন চলবে না। দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যাবে না।

এ সময় সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই কথা বলেন এবং এত বেশি কথা বলেন যে তাঁর কথাগুলো জনগণের কাছে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, এটা জনগণের কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে। গত আট–নয় বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে জনগণের ওপর তারা যে অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন করেছে এবং করে চলেছে, সে ক্ষেত্রে ক্ষমা কাকে চাইতে হবে জনগণই বিচার করবে। সে কারণে খালেদা জিয়া আগেই বলে দিয়েছেন যে তাঁর ওপর, দলের এবং দেশের মানুষের ওপর যে অত্যাচার নিপীড়ন চলছে, এ বিষয়টি তিনি তাঁর ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

এর আগে চীনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঘণ্টা খানেক আলোচনা হয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম কংগ্রেস বিষয়ে তারা জানিয়েছে। তারা যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা জানিয়েছে। এ আলোচনায় খালেদা জিয়া সন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে চীনের সঙ্গে যে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে চীন দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া।