লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার
প্রকাশ: ২০১৭-১২-০৮ ১৭:৪৮:২৪
পেঁয়াজের দাম যেন লাগামছাড়া ঘোড়া। সপ্তায় সপ্তায় বাড়ছে দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরণের পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা! এদিকে চালের বাজার ফের উর্দ্ধমুখী। পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে। তবে গত সপ্তাহে হঠাৎ কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার পরে এ সপ্তাহে আবার কমে এসেছে। অন্যান্য পণ্যের দামে তেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।
গতকাল রাজধানীর মধুবাগ, মালিবাগ, শান্তিনগর, কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজারে গিয়ে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগেও এটি বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ এক সপ্তাহ আগে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দওে বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ওয়াহিদ আহসান রনির সঙ্গে। তিনি বলেন, মূলত ভারতে পেঁয়াজের সঙ্কট ও উচ্চমূল্যের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন এক কেজি পেঁয়াজ আমদানি করতে ৭৫ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া এলসি খোলার পরেও অনেকে পেঁয়াজ আনতে পারছে না। ভারতের ব্যবসায়ীরা সরবরাহ সঙ্কটের কারণে অপরাগতা প্রকাশ করছেন। তিনি বলেন, আমি নিজেও এলসি খোলার পরে পেঁয়াজ পাইনি। তবে দুইএক সপ্তাহের মধ্যেই শীতকালীন পেঁয়াজ চলে আসলে দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
এদিকে চালের বাজার ফের উর্দ্ধমুখী হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরণের চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। শান্তিনগরের ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন ধানার আসার পরে আমরা আশা করেছিলাম চালের দাম কিছুটা কমবে। তা না করে উল্টো দেখি বাড়ছে। তারা জানান, ভালো মানের মিনিকেট চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৩ থেকে ৬৬ টাকা কেজি দরে। যা এক সপ্তাহ আগেও ৬০ থেকে ৬৩ টাকা ছিল। এছাড়া নতুন নাজিরশাইল চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা দরে। আর পুরাতনটা বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে।
দাম বাড়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছে ব্রয়লার মুরগিও। গত সপ্তাহে যা ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি দওে বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয় ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া লেয়ার মুরগি ১৭০-১৭৫, পাকিস্তানি লাল মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া গরুর মাংস ৫০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে কাঁচা মরিচের দাম গত সপ্তাহে হঠাৎ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রির পরে এ সপ্তাহে তা কমে এসেছে। বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া গতকাল বাজারে বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০, টমেটো ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, নতুন আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, মুলা ২০ থেকে ২৫ টাকা, ধুন্দল ও শালগম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা, লাল শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা, পালংশাক ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
মাছের বাজারে আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই ও কাতলা মাছ ২৫০-৩৫০, সরপুঁটি ৩৫০-৪৫০, কাতলা ৩৫০-৪০০, তেলাপিয়া ১৪০-১৮০, সিলভার কার্প ২০০-২৫০, চাষের কৈ ২৫০-৩৫০, পাঙ্গাস ১৫০-২৫০, টেংরা ৬০০, মাগুর ৬০০-৮০০, প্রকার ভেদে চিংড়ি ৪০০-৮০০ কেজি দরে এবং মৌসুম শেষে বড় আকারের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-২০০০ টাকা দরে।
অন্যান্য মুদি পণ্যের মধ্যে ছোলা ৯০ টাকা, দেশি মুগ ডাল ১৩০ টাকা, ভারতীয় মুগ ডাল ১২০ টাকা, মাষকলাই ১৩৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১২৫ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভোজ্য তেলের দাম আগের মতোই রয়েছে। বাজারে ব্র্যান্ড ভেদে ৫ লিটারের বোতল ৫৩০-৫৪০, প্রতি লিটার বোতল ১-২ টাকা বেড়ে ১০৭ টাকা থেকে ১০৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া খোলা আটা ২৮ থেকে ৩০ টাকা, প্যাকেটজাত আটা ৩২ থেকে ৩৪ টাকা, খোলা ময়দা ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা এবং প্যাকেটজাত ময়দা ৪০ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।