বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট নিয়ে আদেশ ২ জানুয়ারি

প্রকাশ: ২০১৭-১২-১৩ ১১:৫৬:১৯


appealঅধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধির বহু আলোচিত গেজেটটি প্রকাশ হলেও এক বিচারকের অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় তা জমা পড়েনি।
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ওই গেজেট গত সোমবার প্রকাশ করে সরকার, যা বুধবার এফিডেভিট আকারে বুধবার আপিল বিভাগে জমা দেওয়ার কথা ছিল রাষ্ট্রপক্ষের।

কিন্তু বুধবার সকালে আদালত বসার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে বলেন, বেঞ্চের পাঁচ বিচারকের মধ্যে একজন ব্যক্তিগত কারণে আসতে পারেননি।

এই শুনানি যেহেতু ফুল বেঞ্চে হয়ে আসছে, সেহেতু বুধবার আর হচ্ছে না জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশের পর ২ জানুয়ারি আদেশের জন্য পরবর্তী দিন ঠিক করে দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।

বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের দীর্ঘ টানাপড়েনের পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে সোমবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার আপত্তিতে তা বহু দিন ঝুলে ছিল।

এই শৃঙ্খলা বিধি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের কাছ থেকে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এই বিধিমালায় সব ‘ঠিকঠাক’ বলে মনে করলেও সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ এর ভেতরে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মৃত্যু’ দেখতে পাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের অন্যতম নেতা আমীর-উল ইসলাম বলেছেন, এই গেজেটের মধ্যে দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে তাকে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন করে ফেলা হয়েছে।

অন্যদিকে এই বিধিমালার গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাকেই আপাতত বড় পাওয়া বলছেন সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ।

মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়।

ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গত বছর ২৮ আগাস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ।

এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।

আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এর আগে শৃঙ্খলা বিধিমালার যে খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছিল, গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি সিনহা।

শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার পর ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

এরপর গত ১৬ নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সঙ্গে বৈঠক করে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ওই খসড়া নিয়ে মতপার্থক্য দূর হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় সোমবার গেজেট প্রকাশ করে সরকার।

বিচারকদের নিয়ন্ত্রণেই রাখল সরকার: ফখরুল

বিচারকদের চাকরিবিধি প্রণয়নের ফলে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা বেড়েছে বলে আইনমন্ত্রী দাবি করলেও তাতে ভিন্নমত জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য প্রণীত চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধির ফলে বিচার বিভাগে সরকারের নিয়ন্ত্রণই থাকছে।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার গেজেট সোমবার প্রকাশ করে সরকার।

এই বিধিমালায় আপত্তি জানিয়ে তা ফেরত পাঠিয়েছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। নানা নাটকীয়তার মধ্যে তার পদত্যাগের পর এই গেজেট প্রকাশ হল।

গেজেট প্রকাশের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনেই এই বিধিমালা করা হয়েছে। এটি আটকে রাখার জন্য বিচারপতি সিনহাকে দায়ী করেন তিনি।

আনিসুল হক মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “উচ্চ আদালতের সঙ্গে আলাপ-আলাচনা করেই বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আমার মনে হয় সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কোথাও ক্ষুণ্ন করা হয়নি, বরং একটু বৃদ্ধি করা হয়েছে।”

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম একই দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমরা বহু কথা বলেছি, বহু আন্দোলন করেছি, আইন পাস হয়েছে পার্লামেন্টে। সেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা তারা (সরকার) আবারও সেই প্রশাসনের কাছে নিয়ে গেল।

“অধস্তন আদালতের বিচারকদের যে শৃঙ্খলা বিধি করেছে, গেজেট করেছে গতকাল- সরকারের হাতেই থাকছে এর নিয়ন্ত্রণ। এটা একটা ভয়াবহ রকমের বিচ্যুতি, ভয়াবহ একটা চক্রান্ত।”

বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করেই এখন আওয়ামী লীগ সরকার ‘ভিন্নমত ও ভিন্নপথ’ নিয়ন্ত্রণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে অনেকগুলো। এখন আবার তার নামে বিদেশে সম্পত্তির কল্পিত গল্প তৈরি করে প্রচার করছেন তারা, যার কোনো ভিত্তি নেই।”

অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মামলার প্রসঙ্গ ধরে ফখরুল বলেন, “এভাবে যারা বিরুদ্ধে কথা বলবে, ভিন্নমত পোষণ করবে, যারা সত্য উচ্চারণ করবে, তাদেরকে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে শেষ করে দেওয়া হবে।”

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গিয়েই বিচারপতি সিনহাকে সরকারের বিরাগভাজন হয়ে দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

“এই বলার কারণে প্রধান বিচারপতি সিনহা সাহেবকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, তার পদ হারালেন। এই হচ্ছে বর্তমান স্বাধীন বিচার বিভাগের নমুনা।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটস প্রতিনিধি নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী পরিষদের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানের পর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আরেকটি আলোচনা সভায়ও একই কথা বলেন ফখরুল।

কমরেড মো. তোয়াহার ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী ও তানোরের নিহতদের স্মরণে ২০ দলীয় জোটের শরিক সাম্যবাদী দলের উদ্যোগে রিপোর্টার্স ইউনিটির আলোচনা অনুষ্ঠানটি হয়েছিল।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ ছাড়াও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপা নেতা রেহানা প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা এম এ রকীব,এনপিপি নেতা ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি নেতা আতাউর রহমান ঢালী, জহিরউদ্দিন স্বপন, ডিএল নেতা সাইফুদ্দিন মনি সভায় বক্তব্য রাখেন।