পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা ওআইসির

প্রকাশ: ২০১৭-১২-১৪ ০০:৪৬:২৮


1513183873প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করেছে মুসলিম দেশগুলোর বড় সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)। গতকাল বুধবার বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনের পর ওআইসি এক বিবৃতিতে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী করার ঘোষণা দেয়। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বিশ্বকে অনুসরণ করার আহবান জানায় সংস্থাটি। বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে ‘বিপজ্জনক’ উল্লেখ করে ওআইসি পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলি শাসনের অবসান ঘটাতে জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানায়। ওআইসি জানায়, তারা দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানে বিশ্বাসী। এর আগে গতকাল ওআইসি মহাসচিব ইউসেফ আল হুথাইমিন মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে মুসলিম বিশ্বকে আহবান জানান। হুথাইমিন বলেন, ওআইসি আমেরিকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেছে এবং এর নিন্দা জানিয়েছে। এটা একদিকে আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন এবং অন্যদিকে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্বের মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে এই অঞ্চল তথা পুরো বিশ্বে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন হুথাইমিন। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়ায় নিজেদের ‘অযোগ্য এবং পক্ষপাতদুষ্ট’ হিসেবে প্রমাণ করেছে। শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো ভূমিকা গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি বলেন, জেরুজালেম সবসময়ই ফিলিস্তিনের রাজধানী ছিল এবং থাকবে।

এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না বলে জানায়। গত সোমবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে এই কথা জানান ইইউ’র পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মঘারিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপও জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আশা প্রকাশ করেছিলেন। মঘারিনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বলেন, এ বিষয়ে ইইউ’র অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং এক্ষেত্রে তারা ‘আন্তর্জাতিক ঐকমত্যকেই’ অনুসরণ করবে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের একমাত্র বাস্তবসম্মত সমাধান হচ্ছে দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান যার দুটিরই রাজধানী হবে জেরুজালেম। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশনেও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে তোপের মুখে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। সদস্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানায়।

এদিকে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আগামী বছরে তার সরকারের প্রাধান্যের তালিকায় কী থাকবে সেই বিষয়ে রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছরে তার দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী করা। ইরানের প্রভাবশালী ফোর্স রেভ্যুলেশন গার্ডের কমান্ডার (বিদেশে অভিযান সংক্রান্ত) কাসেম সোলেইমানি বলেন, ফিলিস্তিনে ইসলামি অভ্যুত্থানে সমর্থন দিতে প্রস্তত তারা। ইরানের পার্লামেন্ট মুসলিম বিশ্বকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক হ্রাস করার আহবান জানিয়েছে। সোমবার তুরস্কে সাময়িক সময়ের জন্য অবস্থান করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে হামাস এবং ফাতাহকে ঐকবদ্ধ থাকার আহবান জানান।

কেবল ওআইসি এবং ইইউ-ই নয়। ২২টি আরব দেশের সংগঠন আরবলীগসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ রাশিয়া এবং চীনও যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে। সমর্থণ দেয়নি ভারতও। গতকাল ওআইসি’র বিশেষ সম্মেলনে যোগ দেন সমাজতান্ত্রিক দেশ ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান এবং মিসরের খ্রিস্টানরাও মার্কিন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

কঠোর অবস্থানে তুরস্ক

ওআইসির বর্তমান সভাপতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি সংস্থাটির ষষ্ঠ বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনের ডাক দেন। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫৭ দেশের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থাটির সম্মেলনে যোগ দেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও। সম্মেলনে এরদোয়ান ইসরাইলকে একটি ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সম্পদ্রায়কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছে। ইসরাইল ছাড়া এই সিদ্ধান্তকে বিশ্বের কেউ সমর্থণ করে না উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, জেরুজালেমকে সব মুসলিম দেশ কর্তৃক ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তিনি বলেন, জেরুজালেমের রাস্তা দিয়ে সামান্য সময়ের জন্য হেঁটেছেন এমন ব্যক্তিও ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মানবেন না। তিনি মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একই সুরে কথা বলার আহবান জানান। এর আগে মঙ্গলবার তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত ক্যাভুসোগলু মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আরব দেশগুলো কড়া প্রতিক্রিয়া না দেখানোর নিন্দা জানান। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের তাবেদারি করছে।

বাড়ছে সহিংসতা

এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকাসহ ইইউভুক্ত দেশগুলোতেও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে সহিংসতা বাড়ছে। বিভিন্ন দেশে গতকালও বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পশ্চিম তীর এবং গাজায় ১ হাজার ৭৯৫ জনকে চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট।

মঙ্গলবার জার্মানির বার্লিনের প্রধান ট্রেন স্টেশনে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। সেখানে ইসরাইলি পতাকা পোড়ানো হয়। পরে পুলিশের বাধায় তার সমাবেশ করতে পারেননি। এর আগে শুক্রবার বার্লিনের মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়। লেবাননের মার্কিন দূতাবাসের সামনেও বড় ধরনের বিক্ষোভ করেন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারীরা। জর্ডানে বিক্ষোভকারীরা মার্কিন দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ঢাকায় গতকাল মার্কিন দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি পালন করেছে হেফাজতে ইসলাম।

ইসরাইল বরাবরই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী বলে মনে করে আসছে। অন্যদিকে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যত্ রাষ্ট্রের রাজধানী বলে মনে করে যা ইসরাইল ১৯৬৭ সালে দখল করে নেয়। জেরুজালেমের ওপর ইসরাইলের দাবি কখনোই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। ইসরাইলে সব দূতাবাসগুলোই অবস্থিত তেল আবিবে। জেরুজালেমে ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম- এই তিন ধর্মেরই পবিত্র স্থান আছে। সূত্র : বিবিসি ও আল জাজিরা’র