এ বছরের চমক দেওয়া উদ্ভাবনগুলো
প্রকাশ: ২০১৭-১২-৩১ ২৩:৪৭:৩৪
বুদ্ধিতে রোবট কি মানুষকে ছাপিয়ে যাবে? এ বছর নিশ্চয়ই এমন প্রশ্ন আপনার মনে জেগেছে? এ বছর মেশিন লার্নিং বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্ভাবন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। প্রযুক্তি বিশ্বে এত দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে যে একসময় হয়তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক উন্নত হবে। ২০১৭ সাল এমনই সব উদ্ভাবনী প্রযুক্তির চমক দিয়েছে, যা মানুষকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। যা একসময় মানুষের কল্পনায় ছিল, তা এ বছর অনেকটাই বাস্তবের কাছাকাছি চলে এসেছে। সেন্সর থেকে সেন্সরে কথা বলার প্রযুক্তি কিংবা অত্যাধুনিক ড্রোনের আরও পারদর্শিতা দেখা গেছে। ইশারা কিংবা মুখ শনাক্ত করা, কণ্ঠস্বর চিনতে পারা কিংবা স্মার্টফোনে চমক দেওয়ার বছর ২০১৭। চমকে ঠাসা ২০১৭-এর কিছু উদ্ভাবন সত্যিই বিশ্বকে নাড়া দিয়ে গেছে। চলুন, ফিরে দেখি এ বছরের প্রযুক্তি উদ্ভাবনগুলো :
কৃত্রিম বুদ্ধিমানরা আসছে
একবার ভাবুন তো রোবট মানবী সোফিয়ার কথা। সেদিন বাংলাদেশ মাতিয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেল। সোফিয়া কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমান এক যন্ত্র। ২০১৫ সালে এর উদ্ভাবন হলেও এ বছরের অক্টোবরে কট্টর মুসলিম দেশ বলে পরিচিত সৌদি আরব এ রোবটকে নাগরিকত্ব দেয়। পৃথিবীতে কোনো রোবটকে নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। সোফিয়া পরে নিজের ভাবনা হিসেবে পরিবার গঠন, সন্তান নেওয়ার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করে। এ বছরটিকে সত্যিকার অর্থেই কৃত্রিম বুদ্ধিমানদের উঠে আসার বছর বলা যেতে পারে।
উড়ুক্কু গাড়ি বাস্তবতার পথে
চটজলদি কোথাও যাওয়া দরকার। কিন্তু যানজটের কারণে রাস্তায় আটকে আছেন। এ অবস্থায় রাস্তা দিয়ে গন্তব্য সময়মতো যাওয়া সম্ভব নয়। ওই সময় মনে হতে পারে, এমন একটি বাহন দরকার, যা দিয়ে একই সঙ্গে রাস্তায় চলতে পারবে আবার আকাশেও উড়তে পারে। আপনার ওই চিন্তার সফল বাস্তবায়ন হয়েই গেছে। উড়ুক্কু গাড়ি কবে আসবে? বছরজুড়ে এ আলোচনা শুনেছেন। শিগগিরই হয়তো উড়ুক্কু গাড়ি হাতের নাগালে চলে আসবে। এ বছর গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতাদের কাছ থেকে একধরনের গাড়ির কনসেপ্ট এসেছে। বিশাল এক ড্রোনের মতো উড়ুক্কু যান। তবে শুধু কিটি হক নয়, এ বছর উবার, টয়োটার মতো প্রতিষ্ঠান উড়ুক্কু গাড়ির ঘোষণা দিয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে উড়ুক্কু গাড়ি বাজারে আনতে চাইছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
স্বয়ংক্রিয় গাড়িতে যাত্রী পরিবহন
এ বছর উদ্ভাবনী প্রযুক্তিক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি শোনা গেছে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির কথা। গাড়ি নির্মাতা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তুমুল আগ্রহ নিয়ে নেমে পড়েছে এ খাতটিতে। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে গুগলের স্বয়ংক্রিয় গাড়ি নির্মাতা বিভাগ ওয়েমো। এর পাশাপাশি জেনারেল মোটরসের পক্ষ থেকে রাইড শেয়ারিং সেবা দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। ২০১৯ সালে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির মাধ্যমে এ সেবা দেবে প্রতিষ্ঠানটি।
মানুষের জন্য মাইক্রোচিপ
আপনার পছন্দ হোক, না হোক, একটি প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের শরীরে মাইক্রোচিপ বসিয়েছে এ বছর। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, কর্মীদের সহজে শনাক্ত করা। সুইডেনের একটি প্রতিষ্ঠান এ মাইক্রোচিপ তৈরি করেছে। শ্রমিকদের হাতের বুড়ো আঙুল এবং তর্জনীর মাঝের একটি স্থানে মাইক্রোচিপ বসানো হয়। এই মাইক্রোচিপের ফলে শ্রমিকদের প্রতিদিন অনেক ছোটখাটো উপাদান বহন করার ঝামেলা করতে হচ্ছে না। দরজা খোলা, প্রিন্টার অপারেট এবং ফলের জুস কেনার মতো কাজগুলো স্রেফ হাতের ইশারাতেই করা যাচ্ছে। শরীরে প্রতিস্থাপন করায় কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় একে নিরাপদ বলে গণ্য করা হচ্ছে। এর মধ্যে থাকা চিপের মধ্যে কোম্পানি খুব সহজেই জানতে পারে তাদের শ্রমিকেরা কখন কাজে এল কিংবা কোথায় অবস্থান করছেন। ২০১৮ সালে এর ব্যবহার আরও বাড়ানোর চিন্তা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
অ্যানিমেটেড ইমোজি
এ বছর আইফোন টেনের সঙ্গে অ্যানিমেটেড ইমোজির পরিচয় করিয়ে দিয়েছে অ্যাপল। পোষা প্রাণীদের ইমোজির জন্য এ নাম। যাকে তারা বলছে ‘অ্যানিমোজি’। অ্যাপলের নতুন ফেসিয়াল রিকগনিশন (চেহারা শণাক্তকরণ) সফটওয়্যার ব্যবহার করে যেকোনো চেহারাকে অ্যানিমেটেড ইমোজিতে রূপান্তর করা যাবে। যা মুখের অভিব্যক্তি প্রকাশ এবং কথা বলতে পারে। ১২ ধরনের অ্যানিমোজি প্রকাশ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বানর, পান্ডা, এলিয়েন ও শিয়াল।
এজ টু এজ ডিসপ্লে
এ বছর বেশি দেখা গেছে এজ-টু-এজ ডিসপ্লে। অ্যাপল, স্যামসাং, এলজি, গুগলসহ অনেক ফোন নির্মাতা তাদের স্মার্টফোনে এজ-টু-এজ ডিসপ্লে ব্যবহার করেছ। এতে বড়মাপের ফোন ছাড়াই বড় ডিসপ্লে পান ব্যবহারকারী। নতুন আইফোনের অল-স্ক্রিন ডিজাইন এবং এজ-টু-এজ ডিসপ্লেচমক সৃষ্টি করেছে।
বুদ্ধিমান স্মার্টফোন
এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বছরের অন্যতম আলোচিত শব্দ। গুগল-অ্যাপল, অপো–হুয়াওয়ে—কে নেই তালিকায়? স্মার্টফোনের প্রসেসর, ক্যামেরা ও নিরাপত্তার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার শুরু হচ্ছে। ভুয়া সংবাদ ও আত্মহত্যা ঠেকাতে ফেসবুক নিজস্ব এআই চালু করেছে। গুগলের এআই খেলায় মানুষের বিপক্ষে জিতেছে।
ভয়েস
এ বছর গ্যাজেটগুলো যেন কথা বলা শিখেছে। আমাজন, অ্যাপল, গুগল তাদের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করে নতুন ট্রেন্ড শুরু করেছে। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সা, সিরির চেয়ে আর কি ভালো উদাহরণ হতে পারে?