পাখি পুষতেও লাইসেন্স লাগবে!
আপডেট: ২০১৫-০৯-২২ ১৩:২৩:৪৮
নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভিন্ন ধরনের পাখি পোষা হচ্ছে সারাদেশে। শখের বসে অনেকেই পাখি পুষলেও অনেকেই আবার উৎপাদন ও বিক্রি করছে দেদারসে। আর মাংস সুস্বাদু হওয়ার কারণে মানুষ প্রতিদিনই পাখি কিনে রান্না করে খাচ্ছে। বলতে গেলে অনেকটা বাধাহীনভাবেই।
২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন এবং জীববৈচিত্র্য আইন থাকলেও বিধিমালা না থাকায় আইন কার্যকরও হচ্ছে না ঠিকভাবে। আর এ অবস্থা দূর করে পাখি পোষার ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় প্রচলিত আইন কার্যকর করতে এর আওতায় বিধিমালা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সম্প্রতি, জীববৈচিত্র্য ধরে রাখতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রক্ষায় ‘পোষাপাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১৫’ খসড়া প্রস্তুত করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। বিধিমালা প্রস্তুত করে তা মতামতের জন্য অনলাইনে প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়।
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন- ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং পোষাপাখির খামার, লালন-পালন, বেচাকেনা এবং আমদানি-রফতানির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা অতীব প্রয়োজন।
পাখি পোষার ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে লাইসেন্স করাসহ বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে আইন না মানলে শাস্তিরও বিধান রাখা হয়েছে বিধিমালায়।
লাইসেন্স করেই লালন-পালন
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন- ২০১২-এর খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ব্যতীত পোষাপাখির উৎপাদন, লালন-পালন, কেনাবেচা এবং আমদানি-রফতানি করতে পারবে না।
উৎপাদন, লালন-পালন, কেনাবেচা এবং আমদানি-রফতানির জন্য প্রধান ওয়ার্ডেনের কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে লাইসেন্স করতে হবে। এক বছর পর পর লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে।
পোষাপাখি কেনাবেচার ক্ষেত্রে লাইসেন্স ফি দিতে হবে ২ হাজার টাকা। শৌখিন পোষাপাখির লালন-পালনকারীর ক্ষেত্রে লাইসেন্স ফি দিতে হবে ১ হাজার টাকা। খামারির ক্ষেত্রে ৩ হাজার এবং আমদানি-রফতানি করতে লাইসেন্স ফি দিতে হবে ৫ হাজার টাকা।
লাইসেন্স বাতিল
বিধিমালা ও আইনের আওতায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে, নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্স নবায়নের আবেদনে ব্যর্থ হলে সংক্রিয়ভাবে লাইসেন্স বাতিল হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া বিধিমালায়।
পাখি আমদানি-রফতানি
পোষাপাখির আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বন অধিদফতরের অনাপত্তিপত্র নিয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর প্রধান ওয়ার্ডেনের অনুমোদনক্রমে সরকার নির্ধারিত রাজস্ব ও ভ্যাট পরিশোধ করে বনসংরক্ষক, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতিসংরক্ষক অঞ্চল অনাপত্তিপত্র জারি করবে।
এছাড়াও আমদানিকারক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে (Convention on International Trade in Endangered Species of Wild Fauna and Flora- CITES) পারমিট নিতে হবে।
শুল্ক বন্দরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োজিত পাখিবিদ এবং বন্যপ্রাণী পরিদর্শক কর্তৃক পারমিটভুক্ত পাখি শনাক্তকরণ ও ভেটেরিনারি সার্জন কর্তৃক কোয়ারেন্টাইন সার্টিটিফিকেট গ্রহণ করতে হবে। পোষাপাখি রফতানির ক্ষেত্রেও একই উপায়ে আবেদন করে অনাপত্তিপত্র ও পারমিট সাপেক্ষে রফতানি করা যাবে। তবে আমদানি করতে বাংলাদেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করতে হবে। আর রফতানির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ঢাকার আন্তর্জাতিক হযরত (র.) শাহজালাল বিমানবন্দর ব্যবহার করতে হবে।
আইন অমান্যকারীর শাস্তি
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন- ২০১২ অমান্যকারীকে এ বিধিমালার বিধি লঙ্ঘনের কারণে ৪০ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। আর অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।