পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতা স্থগিত
প্রকাশ: ২০১৮-০১-০৫ ১২:১০:০০
পাকিস্তানের মাটি থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ধ্বংসে ব্যর্থতার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে প্রায় সব ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হাক্কানি নেটওয়ার্ক ও আফগান তালেবানদের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ যতদিন ব্যবস্থা না নেবে, ততদিন এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা নিয়ে ধোঁকাবাজির অভিযোগ আনার কয়েকদিনের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা স্থগিতের এ ঘোষণা এল।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নোয়ার্ট বৃহস্পতিবার এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রকাশ করেন। তবে সাহায্য ঠিক কী পরিমাণ কমানো হচ্ছে- তা তিনি জানাতে পারেননি।
ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তে আঞ্চলিক রাজনীতিতে পাকিস্তান বড় ধরণের ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরাও।
ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের পর পাকিস্তান বলেছিল, দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তান যে আত্মত্যাগ করেছে, এখন তা অস্বীকার করছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভারত ও আফগানিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছে। পাকিস্তানে শতকোটি ডলার বিনিয়োগ করা চীন ইসলামাবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
নিরাপত্তা সহযোগিতা বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার আগেই ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্যবাবদ ২৫৫ মিলিয়ন ডলার দিতে দেরি হবে বলে জানিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানকে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার মারাত্মক লংঘনকারী’ দেশের তালিকায়ও অন্তর্ভূক্ত করেছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নয়ের্ত পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আফগান তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্ক ওই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও কর্মকর্তাদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে।”
বিবিসি বলছে, পাকিস্তানে ক্রিয়াশীল থাকলেও জঙ্গি সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্ক মূলত আফগানিস্তানেই বেশি সক্রিয়।
পাকিস্তান সরকার হাক্কানি নেটওয়ার্ককে তাদের দেশের মাটি ব্যবহার করে সীমান্তের অন্যপাশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ আ ছে।
আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারের জন্য অন্যতম প্রধান হুমকি তালেবানদের সঙ্গে হাক্কানি নেটওয়ার্কের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। আফগান তালেবানের সহযোগী পাকিস্তানি তালেবানরা পাকিস্তানের ভেতরেও কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী ও কর্মকর্তাদের ওপর দীর্ঘদিন ধরেই হামলা চালাচ্ছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক ও আফগান তালেবানের সদস্যরা।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, পাকিস্তান বিশেষ করে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জঙ্গি সংগঠন দুটোকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল সরবরাহ করে আসছে।
পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থ হাসিল ও ভারতকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যেই পাকিস্তান আফগান তালেবানদের মদদ দিয়ে আসছে বলে মন্তব্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।
১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর আগ্রাসনের সময় আইএসআই প্রথম আফগান তালেবানদের অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য দিয়েছিল। তখন থেকেই তালেবানদের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
২০০১ সালে আফগান যুদ্ধে পশ্চিমা বাহিনীগুলোকে পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে আল কায়েদার বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অনুমতি দেওয়ার সময়ও ইসলামাবাদ আফগান জঙ্গিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছিল বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প জঙ্গি দমনে পাকিস্তানের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করে আসছেন।
বছরের শুরুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতারণার আশ্রয়, জঙ্গী দমনে ব্যর্থতা ও তালেবানদের আশ্রয় দেবার অভিযোগে সাহায্য বন্ধ করে দেবার হুমকি দিয়ে টুইট করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্র ১৫ বছর ধরে বোকার মতো পাকিস্তানে ৩৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ সাহায্য দিয়েও বিনিময়ে কিছুই পায়নি, অভিযোগ তার।