মাঠে আওয়ামী লীগ, বিএনপি মাঠ পায়নি
প্রকাশ: ২০১৮-০১-০৫ ১২:১৭:৩৬
৫ জানুয়ারির আগে সমাবেশের জন্য মাঠ বরাদ্দ নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বাহাস চলছে চার বছর ধরে। যথারীতি এবারও ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি বিএনপি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করবে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দলটি আগামী এক সপ্তাহ রাজনীতির মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। আজ থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ শিরোনামে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। সপ্তাহজুড়ে থাকবে সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি।
এদিকে বিরোধী দল বিএনপি দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে। দলটি আজ ৫ জানুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ও সারা দেশে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে। তবে ঢাকায় কর্মসূচি পালনের অনুমতি পায়নি। এ অবস্থায় আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানায়, কাল শনিবার ঢাকায় কালো পতাকা মিছিল অথবা বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচির ঘোষণা দিতে পারেন।
সরকার ও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপিকে মাঠে নামার সুযোগ দেওয়া হবে না। কারণ ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ শব্দটিতে আপত্তি রয়েছে সরকারি দলের। বিএনপিকে আজ সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে পরে কোনো একদিন শর্ত সাপেক্ষে কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, আসলে ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র রক্ষা করেছে। বিএনপি গণতন্ত্র নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। বিএনপির ভোট বর্জন ও মানুষ হত্যা জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। আর সরকার চার
বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে পার করে পাঁচ বছরে পা দিয়েছে। ফলে অর্জনটা সরকারি দলের, তাই উদ্যাপন আওয়ামী লীগেরই করা উচিত, বিএনপির নয়।
বিএনপি-জোটের বর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। পরের বছর দিবসটি ‘গণতন্ত্রের হত্যা দিবস’ নামে পালন করার ঘোষণা দিলে আগের দিন থেকেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কার্যালয়ের সামনে বালুভর্তি ট্রাক ফেলে রাখা হয়। সারা দেশ থেকে বিএনপি-জোটের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আসা ঠেকাতে সরকারি দল যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। বিএনপি-জোট লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এতে জ্বালাও-পোড়াও এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এবার আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে দুটি কর্মসূচি পালন করবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শোভাযাত্রা ও সমাবেশ হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ বনানী পূজামাঠে একই কর্মসূচি পালন করবে। দুটি কর্মসূচিই বেলা তিনটায় শুরু হবে। ঢাকার সব সাংসদ ও সাংগঠনিক শাখাগুলোকে বিপুল মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর বাইরে আওয়ামী লীগের প্রচার উপকমিটি আগামী রোববার বেলা তিনটায় শিল্পকলা একাডেমিতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধে জ্বালাও-পোড়াওয়ের ওপর চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা করা হবে। ১২ জানুয়ারি উন্নয়নের খণ্ডচিত্র প্রকাশ ও ১৪ জানুয়ারি সরকারের ৯ বছরের উন্নয়নের তথ্যচিত্র প্রকাশ করা হবে।
এদিকে বিএনপি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, অথবা এর বিকল্প হিসেবে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল। কিন্তু ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কোথাও সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি বিএনপিকে। এ বিষয়ে কথা বলতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে দেখা করে।
ফিরে এসে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনার বলেছেন এই মুহূর্তে বাইরে কর্মসূচি করা যাবে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চাইলে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
এদিকে ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ পেয়েছে বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামি পার্টি নামের একটি অখ্যাত দল। গণতন্ত্র রক্ষা, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের দাবিতে সকাল ১০টায় সমাবেশ করবে দলটি। ইউনাইটেড ইসলামি পার্টির সভাপতি মো. ইসমাঈল হোসাইন একসময় আওয়ামী ওলামা লীগে ছিলেন।
জানা গেছে, ইউনাইটেড ইসলামি পার্টির সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রধান অতিথি হিসেবে থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের চেয়ারম্যান ইসমাঈল হোসাইন।
জানতে চাইলে ইসমাঈল হোসাইন বলেন, ‘হাইপ্রোফাইল তদবির করে আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বরাদ্দ পেয়েছি। আমার প্রোগ্রামে এত মানুষ হয় যে, খোলা মাঠ ছাড়া প্রোগ্রাম করার উপায় নেই।’
এদিকে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ না দেওয়ার সমালোচনা করেছেন দলের নেতা রুহুল কবির রিজভী। গতকাল সকালে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে ওই জায়গায় একটি নাম-গোত্রহীন অজানা সংগঠনকে অনুমতি দিয়েছে। সরকার বিরোধী দলকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি করতে দেবে না। প্রথম আলো