অনিশ্চয়তায় ডিএনসিসির ইউটার্ন নির্মাণ প্রকল্প
প্রকাশ: ২০১৮-০১-০৯ ১২:২২:১২
সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে জমি বুঝে না পাওয়ায় শুরু করেও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ঢাকার সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের কাজ।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই ইউটার্নগুলো নির্মাণ করতে ৩৭ দশমিক শূন্য ৯ বিঘা জমির প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথের ৩১ দশমিক ২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১ দশমিক ৬১ বিঘা এবং সিভিল অ্যাভিয়েশনের ১ দশমিক ৮৩ বিঘা জমি রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংস্থাগুলোর কাছে জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলে তাদের কাছ থেকে একধরনের নীতিগত অনুমোদনও মেলে। কিন্তু গত ৪ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এম কনস্ট্রাকশনস এগুলো নির্মাণের কাজ শুরু করলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাধায় তা আটকে যায়। বর্তমানে উত্তরার র্যাব-১-এর কার্যালয় ও রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স বাদে বাকি নয়টি জায়গায় নির্মাণকাজ বন্ধ আছে।
দুই বছর আগে ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যায়ে রাজলক্ষ্মী ও র্যাব-১-এর কার্যালয়সহ জসীমউদ্দীন রোড, কাওলার ফ্লাইং একাডেমি, আর্মি গলফ ক্লাব, বনানী ফ্লাইওভারের নিচে, বনানী-কাকলী রেলস্টেশন, চেয়ারম্যানবাড়ি, মহাখালী ফ্লাইওভার, মহাখালী আন্তনগর বাস টার্মিনাল এবং কোহিনূর কেমিক্যালস থেকে সাতরাস্তা ইন্টারসেকশনে এই ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন ডিএনসিসির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। এর মধ্যে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরকারের দেওয়ার কথা। বাকি ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার জোগান আসার কথা ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে।
কাজটির অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক ও ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘কাজটির জন্য সড়ক ও জনপথসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে জমি পাওয়ার একটা আশ্বাস আমরা পেয়েছিলাম। একধরনের সমঝোতার ভিত্তিতে কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু কাজের জন্য মাঠে নেমে দেখা গেল কোনো কিছুই অনুকূলে নেই।’
মাহবুব আলম আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আমরা জমি বুঝে পাইনি। কবে পাব তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। অথচ এই জমিগুলো খালিই পড়ে আছে। কোনো ধরনের উচ্ছেদ কিংবা অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই।’
এদিকে কাজ চালাতে গিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাধার মুখে পড়ার কথা জানান প্রকল্পের ঠিকাদার এস এম কনস্ট্রাকশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাধাটা মূলত আসছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে। অনেক জায়গায় আমাদের সাইনবোর্ড তুলে ফেলা হয়েছে। এমনকি কাজ বন্ধ করতে আমাদের লোকজন আটকে রাখার ঘটনাও ঘটেছে।’
এর আগে প্রকল্পের জটিলতা নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে আরেকটি চিঠি দেয় ডিএনসিসি। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেসবাহুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, জমি হস্তান্তর ও ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়ায় নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ডিএনসিসি থেকে মাঠপর্যায়ে সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের অসহযোগিতার কারণে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ডিএনসিসি সূত্র বলছে, পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রস্তাব অনুসারে, প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনুমোদন পেতেই লেগে যায় দুই বছরের বেশি। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
প্রকল্প পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, ‘যদি এই জানুয়ারি মাসের মধ্যেও আমাদের কাছে জমিগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাহলে আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব। না হলে এটা নির্ধারিত সময়ে শেষ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।’
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইউটার্নগুলো তৈরি হলে এই বিমানবন্দর সড়কের যানজট প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ কমে যাবে। দুই ধরনের ইউটার্ন নকশা করা হয়েছে। একটিতে ছোট-বড় দুই ধরনের যানবাহনই চলবে, অন্যটিতে শুধু ছোট গাড়ি চলবে। একটি ইউটার্ন থেকে আরেকটি ইউটার্নের সর্বনিম্ন দূরত্ব হবে ৮০০ মিটার আর সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার। এসব ইউটার্ন দিয়ে গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারবে। ফলে তখন বিভিন্ন মোড়ে কোনো ট্রাফিক পুলিশেরও প্রয়োজন হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রকল্পের সঙ্গে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের বিষয়টি সাংঘর্ষিক মনে হওয়ায় সড়ক ও জনপথের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। তারপরও মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার দুই-এক দিন আগে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলোচনার জন্য এসেছিলেন। আমরা তাঁদের নতুন করে একটি প্রস্তাব পাঠাতে বলেছিলাম। এরপর ডিএনসিসির কোনো ধরনের তৎপরতা দেখা যায়নি।’ প্রথম আলো