মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে আমেরিকা ও ইউরোপ উদ্বিগ্ন

প্রকাশ: ২০১৮-০১-১০ ০১:০৪:৩৬


কিউ আর ইসলাম

Sunni Muslims embrace each other after taking part in Eid al-Fitr prayers at a mosque in the Brooklyn borough of New York on August 8, 2013. Muslims in New York started to celebrate Eid al-Fitr on Thursday, an annual celebration which marks the end of the Islamic month of Ramadan.   REUTERS/Stephanie Keith (UNITED STATES - Tags: RELIGION) - RTX12E78
Sunni Muslims embrace each other after taking part in Eid al-Fitr prayers at a mosque in the Brooklyn borough of New York on August 8, 2013. Muslims in New York started to celebrate Eid al-Fitr on Thursday, an annual celebration which marks the end of the Islamic month of Ramadan. REUTERS/Stephanie Keith (UNITED STATES – Tags: RELIGION) – RTX12E78

আমেরিকায় ৩০ বছরের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা ইহুদিদের ছাড়িয়ে যাবে বলে গত শতাব্দির শেষের দিকে আশংকা করা হয়েছিল। আঠারো বছর আগে আমেরিকার ম্যাস্সাচুসেট্স বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সিম্পোজিয়ামে এই ইঙ্গিত দেয়া হয়। একটি গবেষণার ফলাফলের উপর ১৯৮৮ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত ওই সিম্পোজিয়ামে আমেরিকান মুসলমানদের সংখ্যা নিরুপণ করা হয়েছিল ৪৬,৪৪,০০০। ওই সময় আমেরিকায় ৬০০ টি ইসলামিক সেন্টার ছিল। তৈরী হচ্ছিল বিশাল আকৃতির নতুন নতুন মসজিদ ও ইসলামিক বিদ্যালয়। গবেষণার উদ্বৃত দিয়ে বলা হয় যে খ্রীষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা এবং নতুন মুসলমান অভিবাসীদের আগমন ও এদের মধ্যে উচ্চ জন্ম হারের ফলে মুসলমানদের সংখ্যা ইহুদিদের ছাড়িয়ে যাবে এবং খ্রীষ্টানদের পরে মুসলমানরা হবে আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায় ।

এ প্রসঙ্গে আমেরিকার বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক টাইম পত্রিকায় ১৯৮৮ সালের মে মাসের ২৩ তারিখে প্রকাশিত সংখ্যায় ‘আমেরিকান ফেসিং টোয়ার্ড মেক্কা’ (আমেরিকানরা মক্কার দিকে ফিরছে) শীর্ষক দুই পৃষ্ঠা ব্যপি একটি লেখায় মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির কিছু কারণ তুলে ধরা হয়।

ওগেন ডেভিস নামক কালোবর্ণের খ্রীষ্টান ধর্মের একজন আমেরিকানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয় যে তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকে চার্চে যাচ্ছেন। অথচ তিনি দারুণ সমস্যায় পড়েন যখন দেখেন কিভাবে ভালো খ্রীষ্টান হয়েও একজন আমেরিকান অসম সমাজ ও বর্ণ জগতকে সহ্য করছেন। কোন প্রতিবাদ করেন না। তার মতে খ্রীষ্টান ধর্ম কালোদের জন্য নয়। ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসকারী কামোনেহ নামের অপর একজন আমেরিকান বলেন যে গীর্জার একজন অত্যন্ত ধার্মিক সদস্য তাকে লালন পালন করেছেন। ফলে খ্রীষ্টান ধর্মের সবকিছুই তিনি আমল করেছেন। তারপরেও এ ধর্মের তাৎপর্য বুঝতে পরেননি; বিভিন্ন দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত অভাব উপলদ্ধি করেছেন। ওং চুয়ান নামের একজন চায়নিজ আমেরিকান ধার্মিক, পবিত্র ও সফল একটি জীবন চান।

ওগেন ডেভিস, কামোনেহ এবং ওং চুয়ান এই তিনজনের সবাই উত্তর খুজে পেয়েছেন ইসলামে। এ ধরণের পছন্দ সাম্প্রতিককাল অবধি বিচিত্র বা অদ্ভুত বলে মনে করা হতো। সারা পৃথিবীতে ওই সময়ে ৮০ কোটি ইসলাম ধর্মের অনুসারী থাকা সত্বেও আমেরিকায় ইসলাম ধর্ম ও কোরান অদৃশ্য ছিলো। অধিকন্ত, ইসলাম ধর্ম ছিলো অবজ্ঞার বিষয়। সকলে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করত। ঐতিহ্যগতভাবে পশ্চিমা দেশসমূহে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে খারাপ ধারণা রয়েছে।

উক্ত লেখায় ইউএস মসজিদ পরিষদের সভাপতি দাউদ আসাদের উদ্বৃত দিয়ে বলা হয় যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানে বিপ্লব এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আমেরিকায় ইসলামের প্রতি বিরুপ ধারণা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসাধারণ মুসলমানদের টেরোরিস্ট (সন্ত্রাসী) বলে ডাকে।

খ্রিস্টানদের পরে মুসলমানরা হবে আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়

টাইম পত্রিকায় ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ওই লেখায় প্রকাশিত হয়েছিল যে ইসলাম ধর্মে দিক্ষীত আমেরিকানদের সংখ্যা ক্ষীণ গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে আসছে অজস্র মুসলমান অভিবাসী। এই দুয়ে মিলে তৈরী হচ্ছে বড়োসড়ো আমেরিকান ইসলামী কমিউনিটি। বিগত দুই দশকে আমেরিকাতে ঢোকা মুসলমানদের সংখ্যা দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়ে মোট অভিবাসীদের ১৪% পৌছেছে। সেই সাথে রয়েছে কালোবর্ণের মুসলমানরা। এদের নেতা এলিজাহ মুহাম্মাদ স্থানীয় সামাজিক রীতিনীতি ও সাদা আমেরিকান বিরোধী বলে উল্লেখ করা হয়। এই দলের আদর্শকে প্রধান ইসলামী দল স্বীকৃত দিয়েছে বলে টাইম পত্রিকায় অভিযোগ করা হয়।

টাইম পত্রিকায় এটাও ইঙ্গিত করা হয়েছিল যে আমেরিকাতে ইসলাম বিভেদমুক্ত নয়। বিভিন্ন বিভক্তির ফলে আমেরিকান ইসলাম নিদারুণভাবে দূর্বল। মিসরীয়রা, লেবানিজরা যার যার মত আলাদাভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদী পালন করে। কোথাও কোথাও একই ভবনে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় জামাত হয় এবং কোন সম্মিলিত কার্যক্রম নেই। এ দেশে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী কোন ইসলামী আন্দোলন নেই বলে জানিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টির ইসলামিক সোসাইটির পরিচালক মুজাম্মিল সিদ্দিকী। আমেরিকান মুসলমানরা ইসলাম বহির্ভূত রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলতেও পারছেন না। এ নিয়ে পিতামাতা ও সন্তানদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে বিরোধ।

টাইম ম্যাগাজিন জানায় যে ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরেও মুসলমানরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাচ্ছে। যেমন লস্ এ্যাঞ্জেলেস মুসলমানরা ভোটার রেজিস্ট্রেশনের জন্য সচেষ্ট। এখানে রয়েছে মুসলিম পলিটিকাল এ্যাকশন কমিটি। এই কমিটির উদ্দেশ্য হলো আমেরিকান মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, প্যালেস্টিনিয়ানদের সহায়তা করা এবং ইউএস কংগ্রেসে মুসলিম প্রতিনিধি নির্বাচন করা। মুসলিম পলিটিকাল এ্যাকশন কমিটির ইরাকে জন্মগ্রহণকারী মুসলিম মুখপাত্রের উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয় যে “মুসলমানরা চাচ্ছে জনসাধারণ এখন থেকে আমেরিকায় ইহুদি-খ্রীষ্টান-মুসলমান সমাজ হিসেবে ভাবতে শুরু করুক “। লস্ এ্যাঞ্জেলেস ইসলামিক সেন্টারের মুখপাত্রের অপর একটি উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয় আমেরিকান ইহুদিরা তাদের দেশ (ইসরায়েল) এর জন্য কাজ করছে। অথচ মুসলমানদের এ ধরণের কোন কার্যক্রম নেই।

টাইম ম্যাগাজিনের ওই লেখায় এটাও জানানো হয় যে স্থানীয়ভাবে মুসলমানদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলমানদের প্রতি ধর্মীয় সহনশীলতাও বাড়ছে। যেমন মিশিগান রাজ্যের ডিয়ারবোর্নে মোট অধিবাসীদে ১০% থেকে ১৫% আরবীয়। এখানকার পাবলিক স্ক’ল সমূহে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং ক্যাফেটারিয়ায় শুকরের মাংস পরিবেশন বন্ধ করা হয়েছে। মুসলীম ছাত্রীরা আলাদা ক্লাসে সাতার শিখতে পারে ও জিমনেসিয়ামে পা সমান লম্বা স্লাক্স পরতে পারে।
টাইম ম্যাগাজিন জানায় যে, ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরেও মুসলমানরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাচ্ছেন

টাইম ম্যাগাজিনে যখন লেখাটি প্রকাশিত হয় তখন ছিলো রাষ্ট্রপতি রিগানের শেষ সময়। এরপরে তার দলেরই বুশ ( বুশের পিতা) রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে ইরাক আক্রমণ করেন। এতে মুসলমানরা মুষড়ে পরেন। আমেরিকান প্রশাসন সবসময় ইহুদিদের ও তাদের জন্য অধিকৃত প্যালেস্টাইনে গড়া ইসরায়েল দেশের প্রতি অতি সহানুভুতিশীল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার তেত্রিশতম রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান এর বিশেষ উদ্যোগে ইসরায়েল গঠন করা হয়েছিল। এতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রি চার্চিলের পূর্ব থেকেই সমর্থন ছিল। ট্রুম্যান বিশ্বাস করতেন যে ইসরায়েল গঠন করা তার ধর্মীয় দায়ীত্ব।

জাতিসংঘে কোনরকম পূর্বাভাস না দিয়ে এমনকি জাতিসংঘে নিয্ক্তু আমেরিকান প্রতিনিধিকে এব্যপারে কিছু না জানিয়েই তিনি ইসরায়েলকে স্বীকৃত দেন। এজন্য জাতিসংঘের আমেরিকান প্রতিনিধি রেগে যান। ট্রুম্যান অবশ্য তার মেয়াদ পূর্তির শেষের দিকে বিড়ম্ব্নায় পড়েন। তার প্রতি জন সমর্থন এত কমে যায় যা ইতোপূর্বে ঘটেনি। তিনি তৃতীয় বার রাষ্ট্রপতি হওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৫২ সালে নির্বাাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কংগ্রেস নতুন আইন প্রনয়ণ করে ট্রুম্যানের এই ইচ্ছা পূরণ হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। তিনি অবশ্য রুজভেল্টের মৃত্যুর ফলে উপ-রাষ্ট্রপতি থেকে প্রথমবার রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বার্চিত হয়ে নয়্। অন্যদিকে চার্চিল ছিলেন ইহুদিদের প্রতি বিশেষ সহানুভূতিশীল। উল্লেখ্য যে খ্রীষ্টানদের বিশেষ করে রক্ষণশীলদের বিশ্বাস যে যীশুখ্রীষ্ট পূণরায় পৃথীবিতে আবির্ভূত হয়ে প্রথমে পদার্পন করবেন প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের দখলকৃত এলাকায়। তবে এই এলাকা ইহুদিদের দখলে না থাকলে যীশুখ্রীষ্টের আবির্ভাব বিলম্বিত হবে ।

যাহোক বর্তমান বুশের পিতা ভেবেছিলেন ইরাক আক্রমণ হবে তার জন্য আশীর্বাদ। জনগণ মহা উৎসাহে তাকে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবে। কিন্ত তার সে আশা পূরণ হয়নি। উক্ত নির্বাচণে ১৯৯২ সালে ডেমোক্রাট দলের ক্লীনটন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী আটটি বছরে মুসলমানদের জন্য কোন সুসংবাদ না থাকলেও বড় কোন দুঃসংবাদ ছিলোনা।

এরপরে ২০০০ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন বুশের পুত্র। শুরু থেকে তিনি ইরাকের শাসক সাদ্দাম হোসেনকে শায়েস্তা করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। সাদ্দামের অনেক অপরাধ। বিভিন্ন রকম অর্থনৈতিক অবোরোধ দিয়েও তাকে শায়েস্তা করা যাচ্ছিল না। এছাড়া সে ভীষণ বেয়াদবি করে বুশের পিতা যখন ইরাক আক্রমণ করেন। ওই সময় সে বিস্তর মিসাইল ছোড়ে তাদের প্রিয় দেশ ইসরায়েলে। সাদ্দাম হোসেন প্রত্যক্ষভাবে প্যালেস্টাইনী যোদ্ধাদের সাহায্য করছিলেন। অচিরেই কনিষ্ঠ (জুনিয়র) বুশের সে সুযোগ এসে যায়। ৯/১১ হয়ে যায় তার জন্য আশির্বাদ। ঢুকে পড়েন আফগানিস্থানে। দখল করে নেন ইরাক। সেইসাথে চলতে থাকে ‘ইসলামিক টেরোরিস্ট’ প্রচারনা।
অচিরেই কনিষ্ঠ (জুনিয়র) বুশের সামনে সে সুযোগ এসে যায়, ৯/১১ হয়ে যায় তার জন্য আশীর্বাদ

বুশের সাথে দুই হাত তুলে মহা উৎসাহে যোগ দেন চার্চিলের উত্তরসূরী ব্লেয়ার। বিগত প্রায় দুই শত বছরের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ এই বৃটিশ প্রধানমন্ত্রি (১৯৯৮ সালের মে মাসে নির্বাচনের সময় বয়স ছিল ৪৩ বৎসর) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে’র সেন্ট জন কলেজে আইনের ছাত্রকালীন সময়ে গভীরভাবে ধর্মীয় বিশ্বাসী হয়ে পড়েন। এ ব্যপারে তার উৎসাহদাতা ছিলেন ফাদার পিটার থম্সন্ নামক একজন এ্যাঙলিক প্রিস্ট । প্রায় দুই বছর ধরে ব্লেয়ার ওই ফাদারের সাথে প্রতি রাতের শেষে গভীর আলোচনায় বসতেন।

এই ভাবে তিনি চার্চ অব ইংল্যান্ডের বিশ্বস্ত ভক্ত হয়ে পড়েন। থম্সন্ একসময় ব্লেয়ারের সামনে জন ম্যাকমুররে নামক একজন স্কটিশ দার্র্শনিকের কর্মকান্ড তুলে ধরেন। যা থেকে ব্লেয়ার খ্রীষ্টান হিসেবে সমাজ উন্নয়নে দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়েন । তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে খ্রীষ্টান ধর্ম শূধুমাত্র একজন মানুষ ও ইশ্বরের মধ্যে একক সম্পর্ক নয়, এর থেকে আরও বেশী কিছূ। এই সম্পর্ক বিশ্বের বাহিরেও বিস্তৃত। আইনে ডিগ্রী নেয়ার পরপরই ১৯৮০ সালে তিনি বিবাহ করেন একজন ব্যারিষ্টারকে। তার স্ত্রীও একজন ধার্মিক ক্যাথলিক। ব্লেয়ার ও বেশীরভাগ বৃটিশ ভোটারদের মধ্যে পার্থক্য হলো এই যে তিনি নিয়মিত চার্চে যান এবং তার জেষ্ঠ্য পুত্রকে রোমান ক্যাথলিক স্কুলে পড়িয়েছেন।

যাহোক বুশ ও ব্লেয়ারের সাথে সাথে ‘ইসলামিক টেরোরিস্টরাও’ বসে থাকেনা। একের পরে এক ঘটনা ঘটিয়ে ‘ইসলামিক টেরোরিস্ট’ প্রচারনাকে তুঙ্গে তুলে দেয়। শুরু হয় মুসলিম দমন। বুশের দেশে এফবিআই আর ব্লেয়ারের দেশে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড শুরু করে মুসলমানদের ধরপাকড়। মুসলিম মহল্লায় আর মসজিদে এখন কড়া নজরদারী। রাস্তাঘাটে, মার্কেটে, এয়ারপোর্টে মসজিদে শরীরে হাতাহাতি। বুঝিয়ে দিচ্ছে মুসলমান হওয়ার সাধ। বিভ্ন্নি উপায়ে সামাজিকভাবে মুসলিমরা হচ্ছে বিব্রত। মুসলমানদের ব্যপারে মনে হচ্ছে সামাজিক ও নাগরিক অধিকার এখন অপ্রযোজ্য নয়।
বিভ্ন্নি উপায়ে সামাজিকভাবে মুসলিমরা হচ্ছে বিব্রত

মুসলিম মহিলারাও নিস্কৃতি পাচ্ছে না। ইউরোপের কয়েকটি দেশে এখন বোর্কা পরা তো দূরের কথা, মাথায় কোন ঘোমটা দেয়া নিষিদ্ধ। স্কুলে মেয়েদের স্কার্ফ পরা বন্ধ। কয়েকদিন আগে আটলান্টার ডগ্লাসভিল সিটিতে আদালত প্রাঙ্গনে ঢোকার সময় মাথা থেকে স্কার্ফ খুলে ফেলতে অস্বীকার করায় একজন কালো আমেরিকান মুসলিমকে গ্রেফতার করে বিচারকের সামনে হাজির করা হলে তিনি ওই মহিলাকে আদালত অবমাননার দায়ে ১০ দিনের কারাবাসে পাঠিয়ে দেন। অথচ জর্জিয়া এটর্নি জেনারেল উল্লেখ করেন থার্বাট বাকের এর মুখপাত্র কেলেই জ্যাকসন্ যে মন্তব্য করেন যে স্টেট আইনে স্কার্ফ পরা অনুমোদন বা নিষিদ্ধ করা হয়নি । ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘কাউন্সিল অন্ আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন’ নামক একটি সংঘঠন ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্য আবেদন করলে অবিশ্বাস্য ভাবে ভ্যালেনটাইন মুক্তি পান। “আমি শুধু উপলব্ধি করলাম যে আমার মানবিক ও নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হলো”, মন্তব্য করেন ভ্যালেনটাইন ।

বুশ+ব্লেয়ারের এই যৌথ প্রচেষ্টার পরও মুসলমানদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমনকি ২০০১ সালের ৯/১১ ঘটনার এক বছরের মধ্যেই অমেরিকাতে মুসলমানদের সংখ্যা ত্রিশ হাজার এবং ইউরোপে বিশ হাজারেরও অধিক বুদ্ধি পায়। নির্মিত হচ্ছে নতুন নতুন মসজিদ। গত জুন মাসে বোস্টোন শহরে নব নির্মিত মসজিদে ২,০০০ মুসলিম নামাজ আদায় করলেন। ইসরায়েলের সমর্থকদের ও মিডিয়ার বিরোধীতা এবং আদালতে মামলা দায়েরের ফলে এই মসজিদ নির্মাণ সমাপ্তিতে বিলম্ব হয়। তাদের অভিযোগ ছিল যে মসজিদ চরমপন্থিদের সহায়তার জন্য দায়ী ।

এই অভিযোগ মানহানিকর অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে বোস্টোন ইসলাম সোসাইটি মামলা দায়ের করে জয়ী হয়। ফ্রান্সেও সত্তুর দশকে ৫০টি নামাজের ঘর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৩ সালে ১৫২৫টিতে দাড়ায় এবং মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের জন্য ১০০ টি ভবন নির্মিত হয়। বর্তমানে উভয় মিলে আরও ৭০ টি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃটেনে গত ২০ বছরে মসজিদ ও নামাজের ঘরের সংখ্যা ৪০০ থেকে ১৬৯৯ টিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। বার্লিনে এই সংখ্যা ছিল ১৯৯৮ সালে ৬৬ টি এবং ২০০৬ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৬ টি। দি ইকোনমিস্ট পত্রিকার মতে পশ্চিমা দেশসমুহে মসজিদ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে পড়ছে।

টাইম পত্রিকায় ১৯৮৮ সালে মুসলমাদের সংখ্যা বৃদ্ধির সেই আশংকা প্রকাশের পর কেটে গেছে প্রায় দুই যুগ। বুশ ও তার দল কি স্বস্তি ফিরে পেয়েছে? আশ্ব্স্ত হয়েছে যে আমেরিকায় মুসলমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে না?

তথ্যসূত্র:

১. দ্য অরিজোনা ডেইলি স্টার
১৮ ডিসেম্বর, ২০০৮

২. দি ইকোনমিস্ট
১ সেপ্টেম্বর ২০০৭

৩. রিডার্স ডাইজেস্ট
মার্চ ১৯৯৮

৪. টাইম ম্যাগাজিন
২৩ মে ১৯৮৮।