নিরপেক্ষতা ছাড়া গণতন্ত্র টিকবে না

প্রকাশ: ২০১৮-০১-১৩ ২১:৩২:১৮


indiaভারতের সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতা রক্ষা না করার এবং পক্ষপাতের সরাসরি অভিযোগ তোলা হলো। রাজধানী নয়াদিল্লিতে গতকাল শুক্রবার রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ জানালেন সর্বোচ্চ আদালতের চার জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। তাঁরা বললেন, বিচার বিভাগ নিরপেক্ষ না হলে গণতন্ত্র টিকবে না। তাঁরা এ কথাও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে এখন শৃঙ্খলা নেই।

এই চার বিচারপতি হলেন জে চেলামেশ্বর, রঞ্জন গগৈ, মদন লোকুর ও কুরিয়েন জোসেফ। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেন, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চেই প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হয়। এই মামলাগুলো অন্য জ্যেষ্ঠ বিচারপতির বেঞ্চে বণ্টন করা হচ্ছে না। যেসব মামলার সুদূরপ্রসারী প্রভাব ও জাতীয় গুরুত্ব রয়েছে, প্রধান বিচারপতি সেগুলো পছন্দের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বণ্টন করে চলেছেন।

সিবিআইয়ের বিচারক বি এম লয়ার ‘রহস্যজনক’ মৃত্যুর ঘটনাও এই সংবাদ সম্মেলনে বড় হয়ে ওঠে। ওই ঘটনায় জনস্বার্থে দায়ের করা মামলা নিয়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ পছন্দের বিষয়টি বেশি বিব্রত করেছে এই চার বিচারপতিকে। মামলাটি চার জ্যেষ্ঠ বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পাঠানো হয়নি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে নাগপুরে মারা যান বিচারক বি এম লয়া। ওই সময় তাঁর আদালতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার শুনানি চলছিল। এই বিচারকের পরিবারের অভিযোগ, বি এম লয়ার মৃত্যুটা স্বাভাবিক ছিল না। অমিত শাহের পক্ষে মামলার রায় দিতে এক শ কোটি রুপি ঘুষ প্রত্যাখ্যানের পরপরই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অমিত শাহকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।

চার বিচারপতি বলেন, মতানৈক্যের ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ের আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরই তাঁরা প্রকাশ্যে মুখ খুললেন। দুই মাস আগে এসব বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেন তাঁরা।

বিচারপতি চেলামেশ্বর সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে শৃঙ্খলা নেই এবং গত কয়েক মাসে কাম্য নয় এমন বহু ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ নিরপেক্ষ না হলে গণতন্ত্র টিকবে না।

প্রধান বিচারপতিকে অভিশংসন করা উচিত কি না—এমন এক প্রশ্নের জবাবে চেলামেশ্বর বলেন, ‘জাতিকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দিন।’

এএফপি জানায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর দুই সহযোগী। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ডেকেছেন মোদি। তবে আইন প্রতিমন্ত্রী পি পি চৌধুরী বলেছেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। তারা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে চায় না।

কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, বিচারপতিদের অভিযোগের বিষয়টি ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’।

এর আগে সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিসহ আট বিচারপতিকে কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে ভারতজুড়ে তোলপাড় তুলেছিলেন কলকাতার হাইকোর্টের বিচারপতি সি এস কারনান। গত বছরের ৮ মে তিনি ওই আদেশ দেওয়ার পরদিনই সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে আদালত অবমাননার অভিযোগে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। গত ২০ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান।