এভিয়েশন খাতে বিপর্যয়ের শঙ্কা

প্রকাশ: ২০১৮-০২-১১ ২৩:৩৩:১৬


btrcএসএসসি পরীক্ষার দিনগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধ করতে এবার আড়াইঘণ্টা করে সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা ধীরগতি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ধীরগতির পরিমাণ এমন স্তরে রাখা হচ্ছে সেটাকে ইন্টারনেট বন্ধ বলেই উল্লেখ করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে এভিয়েশন খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
ইন্টারনেট ধীরগতি করার মহড়া দেয়ার জন্য আজ রোববার রাত ১০টা থেকে আধা ঘন্টার জন্য আইএসপি, ওয়াইম্যাক্স ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের ইন্টারনেট গতি কমিয়ে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আমিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে সকল ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়েকে (আইআইজি) এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইআইজি কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, ইন্টারনেট ধীরগতির যে পরিমাণের কথা বিটিআরসি উল্লেখ করেছে সেটাকে ‘ইন্টারনেট বন্ধও’ বলা যাবে।

বিটিআরসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আইআইজিগুলোকে এএনএস অপারেটরগুলোকে ইন্টারনেটের ডাউনস্ট্রিম গতি ২৫ কিলোবাইট পার সেকেন্ড (কেবিপিএস) করতে হবে। এই নির্দেশনার ফলে আইএসপি, ওয়াইম্যাক্স এবং মোবাইল ইন্টারনেটসহ সব ধরনের ইন্টারনেট ধীরগতি হয়ে যাবে।

এর আগে রোববার সকালে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শুধুমাত্র মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। তবে বিটিআরসির পক্ষ থেকে এক ঘণ্টা মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে বললেও সাড়ে ৯টা থেকে ৩০ মিনিটের জন্য এ সেবা বন্ধ ছিল।

এই সময়ের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবায় কোনো বিঘ্ন না ঘটলেও পরের নির্দেশনায় সকল ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১২, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২২ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার দিন সকালে দেড় ঘন্টা এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা থেকেও দেড় ঘন্টা ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।

তবে ইন্টারনেটের গতি কমানোর বিষয়টির সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন লার্ন এশিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র পলিসি ফেলো ও টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ খান। তিনি বলেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করে সরকার, ছাপায় সরকার এবং সরবরাহ করে সরকার। এখানে বেসরকারি খাতের কারও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সুতরাং পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁসের এককভাবে সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারের। সরকার এখানে ব্যর্থ হলে উদর পিণ্ডি বুদুর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হবে। এখানে ইন্টারনেট বন্ধ করার প্রশ্ন কেন আসছে? তাইলে সারা দেশে কারফিউ জারি করা উচিত। সান্ধ্য আইন জারি করে সব কিছুই বন্ধ রাখা উচিত।

তিনি বলেন, সরকার নিজের ব্যর্থতা ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রযুক্তিকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। এটা কখনই সুশাসনের পরিচয় বহন করে না। সরকার কি নিশ্চয়তা দিচ্ছে এই দেড় ঘন্টা ইন্টারনেট বন্ধ রাখলেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করা বন্ধ হবে?

ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ভয়াবহতা উল্লেখ করে আবু সাঈদ খান বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে প্রতি দেড় ঘন্টা এভিয়েশন ও সিভিল এভিয়েশন খাত বন্ধ থাকবে। এটার ভয়বহতা উপলব্ধি করার ক্ষমতা আমাদের শীর্ষ পর্যায়ের লোকদের আছে কিনা আমি জানি না। আমরা একদিকে বৃটিশ ফরেন মিনিস্টারকে বলবো, আমার এয়ারপোর্টকে ব্ল্যাকলিস্ট করো না; অন্যদিকে আমরা প্রতিদিন দেড় ঘন্টা করে ইন্টারনেট বন্ধ রাখবো। এ ধরনের ঘটনা আমরা যুদ্ধবিদ্ধস্থ ইরাক-সিরিয়াতে দেখেছি। আমরাও কিসেই পর্যায়ে গেছি? মূলত সত্যিকারের যারা অপরাধি তাদের বাঁচাতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।