চীন-ভারত নিয়ে দ্বন্দ্ব : শেয়ারবাজারে বড় দরপতন

প্রকাশ: ২০১৮-০২-১৬ ০০:২৮:০৩


shareদেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণ নিয়ে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে ডিএসইর নীতি নির্ধারকদের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। ফলে বৃহস্পতিবার ডিএসই এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

মূল্য সূচক ও লেনদেনের পাশাপাশি এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমেছে। বাজারে লেনদেন হওয়া ৭৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২২১টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯টির।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫২ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দু’টি মূল্য সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ১৯ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২৩০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪০৫ পয়েন্টে।

বাজারে লেনদেন হয়েছে ৫১২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬২১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১০৯ কোটি দুই লাখ টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনের দুই প্রতিষ্ঠান ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে চলতি সপ্তাহের শুরুতে শেয়ারবাজারে বড় উত্থান ঘটে। তবে চীনের দুই প্রতিষ্ঠানকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার বিষয়ে ডিএসইর সিদ্ধান্তর বিরোধীতা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বিএসইসি চাচ্ছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করা হোক। এ নিয়ে বিএসইসি ও ডিএসইর নীতি নির্ধারকদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যও বিনিময় হয়েছে।

ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারীর টেন্ডারে অংশগ্রহকারীদের দরপতন ওপেন করা হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি। টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে শেয়ারের সর্বোচ্চ দর এবং কারিগরি সহায়তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আর্থিক প্রস্তাব দেয়ায় ডিএসই পর্ষদ ওই দিনই চীনের দুই প্রতিষ্ঠান সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসইর পর্ষদ।

তবে ডিএসইর এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছে বিএসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা অপর কনসোর্টিয়ামকে (ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফন্ট ইয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক) কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে চাপ দিচ্ছে। এ কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে বলেও ডিএসইর পর্ষদকে জানিয়েছে বিএসইর শীর্ষ কর্মকর্তারা।

ডিএসইর পর্ষদের সিদ্ধান্ত নেয়ার এক কার্যদিবস পরেই ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএএম মাজেদুর রহমানকে ডেকে নিয়ে যায় বিএসইসি। ওই বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান ও সিংহভাগ কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএসইসির এক কমিশনার ডিএসইর এমডি ও চেয়ারম্যানকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে চাপ দেন।

পরের দিন ১২ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর আর একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। ওই বৈঠকে ডিএসই প্রতিনিধিদের বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। এ সময় ডিএসইর প্রতিনিধিরা বিএসইসি চেয়ারম্যানকে বলেন, এটি করা হলে ডিএসইর ট্রেকহোল্ডরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ট্রেকহোল্ডারা ক্ষতিগ্রস্ত হন এমন কোনো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবে না। এছাড়া কমিশন ১১ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে যে আচরণ করেছে, ভবিষ্যতে এমন আচরণ করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়বে।

কৌশলগত বিনিয়োগকারীর বিষয়ে বিএসইসি ও ডিএসইর এ দ্বন্দ্ব নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে ডিএসইর দ্বন্দ্বর খবর ছড়িয়ে পড়ার কারণেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণ নিয়ে বিএসইসি ও ডিএসইর মধ্যে মত পার্থক্য দেখা দিয়েছে, গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশের ফলেই শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া এখন বাজারে এমন দরপতনের কোনো কারণ নেই।

তবে ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বৃহস্পতিবার যে দরপতন হয়েছে তা স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন। কোনো ইস্যু এখানে আছে বলে মনে হয় না। কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়ে বাজারে যদি কোনো আতঙ্ক দেখা দেয়, তবে সেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে দরপতন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

বৃহস্পতিবার টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনিক হোটেলের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা গ্রামীণফোনের ১৫ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মুন্নু সিরামিক।

লেনদেনে এরপর রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল, কেয়া কসমেটিক, ড্রাগন সোয়েটার, ফু-ওয়াং ফুড, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল এবং লংকাবাংলা ফাইন্যান্স।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএসসিএক্স ৯৬ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ২৯২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৪৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৮টির দাম বেড়েছে। দাম কমেছে ১৬৮টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির দাম।