টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ

প্রকাশ: ২০১৮-০২-২৮ ০১:০১:৪৭


pm sপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ। আমরা রাজনীতি করি জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য। জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করেই রাজনীতি করি, একটাই লক্ষ্য দেশের জনগণের আর্থসামাজিক মুক্তি দেয়া।
সরকারপ্রধান বলেন, বাঙালি বীরের জাতি, আমরা যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। তাই আমরা নিæ বা মধ্যম নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবই।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এর মধ্য দিয়ে ২৩২ জন সংসদ সদস্যের ৬৪ ঘণ্টার আলোচনার মাধ্যমে শেষ হল রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ধন্যবাদ প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে দিলে তা সর্বসম্মতক্রমে পাস হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি করতে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তেই আমরা রাজনীতি করি। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আগামী মার্চে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দেশের জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। ১৯টা ক্যু হয়েছে, কীভাবে দেশের অগ্রযাত্রা হবে? বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ৫ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারত। ইচ্ছা থাকলে যে একটি দেশের উন্নয়ন করা যায়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ- এটা ঘোষণা দিয়েছিলাম। এটা আমরা করেছি। অগ্রগতির উন্নয়ন সূচকে বিশ্বের ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশ ক্রয়ক্ষমতায় দিক থেকে সারা বিশ্বে ৩২তম স্থানে আছে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকারের গৃহীত পরিকল্পনার কারণেই প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের উপরে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বিএনপির আমলে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। আজ ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২২ ভাগে নেমে এসেছে। এ হার ১৪-১৫-এর মধ্যে যাতে নামতে পারে সেই উদ্যোগ নিয়েছি। মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিট থেকে ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী। রফতানি আয় ৩৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। রিজার্ভ এখন ৩৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

তিনি বলেন, বিদ্যুতের জন্য দেশে হাহাকার ছিল। বিএনপির আমলে দিনে ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। বর্তমান সরকার ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। গ্যাসের সমস্যা সমাধানে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেছি। মেট্রোরেল নির্মাণ করছি।

যানজট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। যার একটি গাড়ি ব্যবহারের ক্ষমতা ছিল না, সে এখন দুটি কিনছে। সবাই আইন মানলে যানজট অনেক কমে যেত। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি ও অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছি যে, দুর্নীতি করতে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তে আমরা রাজনীতি করি।

তিনি বলেন, আমরা সারা দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছি। ৪৫ লাখ মানুষকে বয়স্ক ভাতা দিচ্ছি। অবহেলিত জনগোষ্ঠী হিজড়া ও বেদেদের স্বীকৃতি দিচ্ছি, ভাতা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ঘরবাড়ি বানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। বিএনপির আমলের ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মোবাইল এখন দেশের মানুষের হাতে হাতে। ১৬ কোটি জনগণের মধ্যে ১৩ কোটি সিম ব্যবহার হচ্ছে। প্রায় ৮ কোটি মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আমরা এখন মহাকাশে চলে যাচ্ছি, এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে।

বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী বিরাজমান। তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এক ইঞ্চি জায়গাও ফেলে রাখবেন না। সবাই এটা করলে বাংলাদেশ আর কখনও পিছিয়ে পড়বে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি চাই, অশান্তি চাই না। কিন্তু কেউ আমাদের আক্রমণ করলে তা মোকাবেলা করতে পারি সে জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে ত্রিমাত্রিকভাবে গড়ে তুলেছি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সমমর্যাদা নিয়ে চলতে চাই। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া কেউই স্থলসীমানার সমাধান করতে পারেনি, আমরাই করেছি। উৎসবমুখর পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করে বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছি। যতদিন তারা নিজ মাটিতে ফিরে না যায় ততদিন যাতে একটু ভালোভাবে থাকে সে ব্যবস্থা করেছি। ১০ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গাকে আইডি কার্ড করে দিয়েছি, এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি, কিন্তু তাদের সঙ্গে যে আচরণ মিয়ানমার করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসছে, বিনিয়োগের কোনো অভাব নেই। বিনিয়োগ যাতে দ্রুত হয়, সে জন্য ওয়ানস্টপ সেন্টার চালু করছি। কৃষিজমি যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য ১০০টি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি।