আমি জনগণের সেবক, জনগণ কী পেল সেটাই বিবেচ্য’

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৮-০৭-২১ ২১:২০:৩৭


দল আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবর্ধনা প্রয়োজন নেই। আমি আমার এ সংবর্ধনা বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করলাম। আমি জনগণের সেবক। জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। জনগণ কতটুকু পেল সেটাই আমার কাছে বিবেচ্য। এর বাইরে আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই।’

শনিবার (২১ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। দুপুর সাড়ে তিনটার পরে গণসংবর্ধনাস্থলে আসনে তিনি।

বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, অস্ট্রেলিয়া থেকে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ড অর্জন ও ভারতের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি প্রাপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীকে এই গণ সংবর্ধনার আয়োজন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নেওয়ার যে পরিকল্পপনা, সে পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি এবং করে যাব। একটা মানুষের তো ২৪ ঘণ্টা সময়। এই ২৪ ঘণ্টা সময় থেকে আমি মাত্র ৫ ঘণ্টা নিই, আমার ঘুমানোর সময়। এ ছাড়া প্রতিটি মুহূর্ত আমি কাজ করি, দেশের মানুষের জন্য। দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য। এই বাইরে আমার জীবনের আর কোনো কাজ নেই। আমি কোনো উৎসবে যাই না। শুধু সারাক্ষণ আমার একটাই চিন্তা, এই দেশের উন্নয়ন। দেশের মানুষের উন্নয়ন।

কোথাও কোনো মানুষ কী কষ্টে আছে, তার সমস্যাটা সমাধান করার চেষ্টা করি দাবি করে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি আমার বাবা কত ভালবাসতেন এদেশের মানুষকে। আমি দেখেছি, মানুষের জন্য তার হাহাকার। এই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কত পরিকল্পনা তার ছিল। আর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম শহরে গড়ে তুলব। প্রতিটি গ্রাম হবে উন্নয়নের জায়গা। প্রতিটি মানুষের পাবে নাগরিক সুবিধা। ঠিক শহরের মানুষ যে সুবিধা পায়। প্রতিটি গ্রামের মানুষ সেই সুবিধা পাবে। সেইভাবেই আমরা গ্রামের মানুষের অবস্থার উন্নতি করতে চাই। শিক্ষায়-দীক্ষায় সব দিক থেকে। গ্রাম-বাংলার মানুষ উন্নত জীবন পাবে। ক্ষুধার হাহাকার থাকবে না। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। প্রত্যেকটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমার রাজনীতি।

‘আমি এক একটা কাজে যখন বাংলাদেশের সাফল্য পাই। আর আজ যা কিছু পাচ্ছি, এটা বাংলাদেশের প্রাপ্য, বাংলাদেশের জনগণের প্রাপ্য বলে মনে করি। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, স্বজন হারানো বেদনা নিয়ে এই বাংলার মাটিতে যেদিন ফিরে এসেছিলাম, আপন করে নিয়েছিল বাংলার মানুষ। এখনও মনে পড়ে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মৃত্যুর আগে মরতে আমি রাজি না। তার আগে যতক্ষণ জীবন আছে। বাংলার মানুষের সেবা করে যাব। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে যাব। আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে। অন্তত আমি জানি, বেহেশত থেকে তিনি দেখবেন, তার দেশের মানুষ ভাল আছে। তাদের জীবনের পরিবর্তন এসেছে। আমি শুধু সেইটুকুই চাই। আমার কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। শুধু একটা জিনিসই দেখতে চাই, এই বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত, সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠেছে, যা আমার পিতার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণই আমার লক্ষ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে যারা প্রতিনিয়ত আমার প্রত্যেকটি কাজ সুন্দরভাবে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করেছেন, তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সকলের সহযোগিতা না পেলে আজকে বাংলাদেশের এই এগিয়ে চলা, এটা সম্ভব হতো না। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে। তার যে উন্নত হওয়া এটা কখনো সম্ভব হতো না। ’

২০২১ সালে অবশ্যই আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অধিষ্ঠিত হবো এবং আরও উন্নত করব। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ, যে কথা তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড, সেই বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ, উন্নত দেশ সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।

‘আমরা চাই, আমার দেশের মানুষও উন্নত জীবন পাবে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলুক সেটা আমরা কখনো বরদাশত করব না।’

‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো। এই এগিয়ে চলার পথ যেন আমরা অব্যাহত রাখতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রী দুপুর সাড়ে তিনটার পরে সংবর্ধনাস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ৩টা ৩৪ মিনিটের দিকে সংবর্ধনা মঞ্চে উঠে আসন গ্রহণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা মঞ্চে উঠলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে লাল-সবুজ-সাদা পতাকা নাড়িয়ে অভিবাদন জানান। বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের অভিবাদন জানান।

দুপুর চারটা ১৯মিনিটের দিকে সংবর্ধনার মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। তার আগে দলের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হয়।

গণসংবর্ধনায় অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

সংবর্ধনা মঞ্চে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ১৪ দলের শরিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গত ৭ জুলাই শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়ার ঘোষণার কথা জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে গত ১৯ জুন দলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৭ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২১ জুলাই বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই গণসংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

গণসংবর্ধনায় অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমদু এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। সংবর্ধনা মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।