ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-০৭-২২ ০৯:০০:২৫
সুদের হার, স্প্রেড ও খেলাপি ঋণ ইস্যুতে দেশের ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ খাতে সুশাসনের অবস্থাও সন্তোষজনক নয়। ব্যাংকিং খাতের বাজার মূলধন সবচেয়ে বেশি হওয়ায় এ খাতের অস্থিরতা পুঁজিবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গতকাল ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত ‘মুদ্রাবাজারের বর্তমান অবস্থা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারের সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসান খসরু। প্রধান অতিথি ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইসিএবির প্রেসিডেন্ট দেওয়ান নূরুল ইসলাম। ব্র্যাক ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল কাদের জোয়ার্দার সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান, ঢাকা ব্যাংকের ডিএমডি মো. মাহবুবুর রহমান ও প্রাইম ব্যাংকের ডিএমডি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান চৌধুরী।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে আব্দুল কাদের জোয়ার্দার বলেন, দেশের অর্থনীতির পরিধির তুলনায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার বেশি রয়েছে। আমানতের চেয়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেশি হওয়ার পাশাপাশি উচ্চসুদের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ার কারণে ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও বেড়ে গেছে। খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা হুমকির মুখে রয়েছে। পাশাপাশি আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে মুদ্রা বিনিময় হারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমাতে হবে। ব্যাংকগুলোয় কঠোর সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের বিকল্প উৎস হিসেবে বন্ড মার্কেট ও পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করতে হবে।
সেমিনারে প্যানেল আলোচকরা দেশের মুদ্রাবাজারের সাম্প্রতিক অবস্থা ও এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলোর সক্ষমতার দিকটি বিবেচনা না করে সবার জন্য একই হারে এডি রেশিও কমানোর সিদ্ধান্তটি ঠিক হয়নি। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এডি রেশিও কমানোর প্রভাব সম্পর্কে যথাযথ বিশ্লেষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
প্রাইম ব্যাংকের ডিএমডি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ আর ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদের এর হার কেমন হবে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেয়া হয়নি। ফলে আমানত ও ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা নিয়ে ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের নিট ফরেন অ্যাসেট (এনএফএ) কমে যাচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় সরকারি ব্যাংকের অর্থ রাখার ঘোষণা দেয়া হলেও এখনো পর্যন্ত এটি সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি।
আইসিএবির প্রেসিডেন্ট দেওয়ান নূরুল ইসলাম বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত বিভিন্ন দিক থেকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। ২০১৭ সালেও ব্যাংকগুলোয় মূলধন ঘাটতি ছিল না। বরং সে সময় ব্যাংকগুলোয় অতিরিক্ত তারল্য ছিল। অথচ এ বছরের শুরুতে এসে ব্যাংকে মূলধন সংকট তৈরি হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, ব্যাংকের টাকা কোথায় গেছে?
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জনগণের সঞ্চিত অর্থের রক্ষক হচ্ছে ব্যাংক। কিন্তু জনগণের অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোয় সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকাও এক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। যেখানে একই পরিবার থেকে ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালকের সংখ্যা ও তাদের মেয়াদ কমানোর কথা, সেখানে তাদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে জনগণের করের অর্থ দিয়ে সরকার তাদের মূলধন ঘাটতি পূরণ করছে। এর মানে হলো সরকার লোকসানকে জাতীয়করণ করছে।