বিমা খাতের ইমেজ সংকট দূর করণে কাজ করছে ইড্রা

:: আপডেট: ২০১৮-০৭-৩১ ১০:৩১:৫১


# ৯ মাসে ৩২৫১ কোটি টাকা বিমা দাবি নিস্পত্তি করলো সংস্থাটি
#মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ অবদান রাখতে পারবে

দেশে বিমা খাতে নৈতিকতার বড়ই অভাব। জীবন বিমায় এটি সব থেকে বেশি। বিমা খাত ব্যাংকিং ব্যবস্থার মতোই কাঠামো ভিত্তিক চলছে। কিন্তু এখনো এই খাতে শৃঙ্খলা আসেনি পুরোপুরি। কারণ বিমা খাতে নৈতিকতার বড়ই অভাব। জীবনবিমায় এটি সব থেকে বেশি। বিমা খাত আমাদের দেশে নতুন ধারণা। এটি অনিয়ন্ত্রিত খাত হিসেবে বেড়ে উঠেছে। দেশে ব্যক্তি মালিকানায় এ খাত গড়ে ওঠে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিমা অপরিহার্য। উপরোক্ত কথাগুলো খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। দীর্ঘ দিন ধরেই বিমা খাত নিয়ে এ ধরণের কথা বলে আসছেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকে অনেক উন্নতি করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
এই ধারণা পাল্টাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। সংস্থাটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, এই খাতটির ইমেজ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ অবদান রাখতে পারবে। এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন সংস্থাটি।
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২২ আগস্ট সংস্থাটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারি। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিমা শিল্পের প্রধান সমস্যা ইমেজ সংকট দূর কারার উদ্যোগ নেন। সংস্থাটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চষে বেড়াচ্ছেন বিভাগ,জেলা-উপজেলা পর্যায়ে। বিমা দাবীর চেক তুলে দিচ্ছেন গ্রাহকদের হাতে। গত ৯ মাসে ৩ হাজার ২৫১ কোটি টাকা বিমা দাবি নিস্পত্তি হয়েছে। এরমধ্যে জীবন বিমা নিস্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা এবং সাধারণ বিমা ৪৮০ কোটি টাকার বিমা দাবি নিস্পত্তি হয়েছে। এতে ফলও পাচ্ছে সংস্থাটি। এই সময়ে ১ হাজারেরও বেশি অভিযোগ নিস্পত্তি করেছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দেশের ব্যাংকিং খাত অনেকটাই শৃঙ্খলার মধ্যে এসেছে। পুঁজিবাজারকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে দাতা সংস্থাগুলো দেওয়া শর্ত পূরণে কাজ চলছে। অনেক এগিয়েছে। আর্থিক খাতের আরেকটি অংশ বিমাশিল্প। এ শিল্পকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গত কয়েক বছরে বেশ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এখনও সম্পূর্ণরূপে ফিরে আসেনি শৃঙ্খলা। এখাতের ব্যর্থতার পাশাপাশি বেশ সফলতার ছোঁয়াও লেগেছে। আইডিআরএ সূত্র আরও জানিয়েছে, বড় বিমা দাবি নিস্পত্তির জন্য হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে চেয়ারম্যান এবং চারজন সদস্যের সমন্বয়ে বিরোধ নিস্পত্তি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি ইতিমধ্যে অনেক বিমা দাবির বিরোধ নিস্পত্তি হয়েছে। বাকি ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। কমিশন কমেছে। জীবন বীমার ক্ষেত্রে উল্টোপাল্টা অনেকাংশ কমেছে। আগে ঠিকভাবে বীমা দাবী পরিশোধ করা হতো না। এখন আইডিআরএতে আবেদন করলে সুবিচারও করা হচ্ছে বলে আইডিআরএর দাবী।
আইডিআরের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, আগের থেকে এখন কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা বেড়েছে, দুর্নীতি কমেছে। এখন গ্রাহকরা আমাদের কাছে অভিযোগ করলে কোম্পানিকে শুনানিতে ডাকা হয়। কোম্পানির জরিমানা করা হয়, আগের চেয়ে দাবী পরিশোদের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে বিমার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে। গত ৯ মাসে ব্যাপকভাবে বিমা দাবি নিস্পত্তি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খোদ প্রধানমন্ত্রী বিমা খাতের ইমেজ ফিরিয়ে আনতে নির্দেশনা দেন আইডিআরএকে। তিনি আইডিআরএ চেয়ারম্যানকে যে কোনও সমস্যা হলে তার সঙ্গে পরামর্শ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আইডিআরের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে কাজ করছি। এর ফলও পাওয়া যাচ্ছে। আগের দিনে মানুষের মধ্যে ধারণা ছিল বিমার টাকা ফিরে পাওয়া যায় না। সেখান থেকে অনেক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে আরও বেশি করে এটি করা হবে।
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, এই খাতটি আরও স্বচ্ছ ও জবাদীহি মূলক করতে সকল কার্যক্রম অনলাইনে নিয়ে আশার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইনটিগ্রেটেড সফটওয়ারের মাধ্যমে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
জানা গেছে, মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর বিমা খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠন করা হয়। তৈরি করা হয়েছে বিমা নীতিমালা। এছাড়া বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগে নেওয়া হয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। নতুন ১১টি নতুন বিমা কোম্পানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিমা বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীতে মেলা করেছে আইডিআরএ। এছাড়াও বিমা শিল্পে দাবি নিস্পত্তিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির নির্দেশনা অনুসারে বিমা দাবি জন্য গণশুনানীর বিজ্ঞাপন পত্রিকায় দেওয়া হয়। বিমা নীতিমালা ২০১৪ বাস্তবায়নে বিভিন্ন কমিটি কাজ করছে। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন রোধে বিমাকারী গ্রাহকের কেওয়াইসি চালু করা হয়েছে। বিমার বহুমুখীকরণের জন্য সরকারের প্রস্তাব অনুসারে শিক্ষাবিমা, পেনশন বিমা, কৃষি বিমা, পশু সম্পদ বিমা, প্রবাসী বিমা, বেকারত্ব বিমা, স্বাস্থ্য বিমা এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিমার উদোগ নিয়েছে, যা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।