বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ মন্দা

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৮-১১-০৬ ০৭:৪৯:৩১


বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে দারুণ মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। সুদের হার সামান্য কমার পরও এ খাতে ঋণ বাড়ছে না, বরং আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনপরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে উদ্যোক্তারা এখন বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন। বিনিয়োগ না হওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাও কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়েই সবচেয়ে বেশি কমেছে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই তিন মাসে এই খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছিল ৩ দশমকি ২৪ শতাংশ।

অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ঋণপ্রবাহ বেড়েছিল ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়েছিল বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ।

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমার বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে, এখনও পরিষ্কার হয়নি।

একধরনের ঘুমট পরিবেশ বিরাজ করছে। এর প্রভাবে অর্থনীতি আক্রান্ত হয়েছে। জাতীয় প্রায় সব নির্বাচনেই এমনটি হচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি স্থায়ী কাঠামো দরকার। তাহলে নির্বাচনকালীন দেশের অর্থনীতি আক্রান্ত হবে না। জাতীয় স্বার্থে এ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য দরকার।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ঋণপ্রবাহ কমার কারণে বেসরকারি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমে গেছে। আমদানি বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে মন্দা।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে আগস্ট এ দুই মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ৩৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। গত আগস্টে আমদানি ব্যয় বাড়ার পরিবর্তে কমেছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত বছরের আগস্টে বেড়েছিল ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

উদ্যোক্তারা জানান, এখন আমদানি ব্যয় কমার কারণে আগামী দিনে বিশেষ করে রফতানি ও বাণিজ্য খাতে সাময়িক মন্দা দেখা দেবে। তবে নির্বাচনের পর পরিবেশ স্বাভাবিক হলেই এগুলো আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ আমদানি বেড়েছিল। ওই বছরে আমদানি ব্যয় ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছিল। এর মধ্যে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ ছিল বেশি।

সেগুলো দিয়ে পণ্য তৈরি করে নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার আগেই উদ্যোক্তারা ক্রেতার রফতানি অর্ডার সরবরাহ করতে ব্যস্ত। যে কারণে এই সময়ে এসে রফতানি আয় বেড়ে গেছে আগের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি।

সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে রফতানি আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় বেড়েছিল ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ।

এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় বাড়ার পরিবর্তে কমেছিল ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, নির্বাচনের আগে রফতানিকারকরা ক্রেতাদের বেশির ভাগ অর্ডার সরবরাহ করে দিচ্ছেন। এছাড়া শীতের বাজার ধরতে এখনই রফতানির সবচেয়ে ভালো সময়। এ কারণে এখন রফতানি বাড়ছে।