বাংলাদেশে পড়াশুনায় আগ্রহ বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৮-১১-০৭ ১২:৫৬:২৯


বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৭ সালে বিগত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে ৩৫টি বেসরকারি বিদ্যালয়ে প্রায় দুই হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তে আসেন। একই বছরে ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০০ বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করেন। ২০১৬ সালে সরকারি ও বেসরকারি উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৮২ জন। সেই হিসাবে এক বছরে ১৫৬ জন শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৪তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অন্যান্য দেশের তুলনায় কম খরচ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কম হওয়ার কারণেই বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে ঝুঁকছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৩৮ জন। যার মধ্যে ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৯৭৭ জন ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬১ জন। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৮২ জন। তার মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৯২৭ ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫৫ জন অধ্যায়ন করেন। সে হিসাবে গত এক বছরে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৬ জন শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউজিসির প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, বিশ্বের ৩৫টি দেশের শিক্ষার্থীদের পদচারণা রয়েছে এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। উন্নত এবং উন্নয়নশীল সব দেশের শিক্ষার্থীরাই প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়।
উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য যেসব দেশের বিদেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছে সে দেশগুলো হলো কানাডা, চীন, জর্ডান, অস্ট্রেলিয়া, মালি, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, যুক্তরাষ্ট্র, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা, সিয়েরালিওন, মালয়েশিয়া, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, বাহরাইন, ঘানা, জাম্বিয়া, জিবুতি, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইংল্যান্ড, ইতালি এবং ইরান। বাংলাদেশের ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩২টিতে এসব দেশের বিদেশি শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নরত ছিল।
গত আট বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি ও হ্রাস পেয়েছে। তার মধ্যে ২০১০ সালে ছিল ৩৫৯ জন, ২০১১ সালে ২১০, ২০১২ সালে ৫২৫, ২০১৩ সালে ৩২৬, ২০১৪ সালে ৪৩২, ২০১৫ সালে ৫৯৩, ২০১৬ সালে ৩৫৫ এবং ২০১৭ সালে ৪৬১ জন। সেই হিসাবে তুলনামূলকভাবে ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যা বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান জানান, ‘অন্যান্য বছরের চাইতে ২০১৭ সালে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম, তুলনামূলক কম শিক্ষা খরচ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সহজতর ভর্তি প্রক্রিয়ার কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশমুখী হচ্ছে। তবে আমাদের দেশে যতজন এসেছে তার চাইতে ১০ গুণ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, বিশেষ করে আমাদের উত্তরাঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামে উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিকীকরণ করছে। বিদেশ থেকে যাতে শিক্ষার্থী পড়তে আসে, এজন্য নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। শিক্ষার্থী টানতে প্রতিবছর এসব দেশ থেকে প্রতিনিধি এসে উচ্চশিক্ষা ফেয়ার করছে। শুধু মালায়েশিয়ায় বাংলাদেশি ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। তাদের কাছে বাৎসরিক এক বিলিয়ন ডলার আয় করছে দেশটি। অথচ আমরা সেখান থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছি।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ছিল দেড় লাখের বেশি। এর বিপরীতে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল ১ হাজার ১৯ হাজার ৭৩৫ জন। অর্থাৎ মোট আসন সংখ্যার মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার আসন ফাঁকা থাকছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ফাঁকা আসনগুলো বিদেশি শিক্ষার্থীর মাধ্যমে পূরণ করা গেলে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে অভিমত দেন ইউজিসি চেয়ারম্যান।
আবদুল মান্নান বলেন, আমাদের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু তা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ একটি ভালো স্থান। এটিকে যদি আমরা ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারি হবে তবে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে।
বিদেশি শিক্ষার্থী বৃদ্ধিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি থেকেও বড় ভূমিকা রাখতে হবে উল্লেখ করে ইউজিসি চেয়ারম্যান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষা ফেয়ারে অংশগ্রহণসহ প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়ানো সম্ভব। এতে শুধু আর্থিক লাভবান নয়, বিশ্বের দরবারে দেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।
আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে আমাদের চাইতে কম খরচে বিদেশি শিক্ষার্থীরা নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। তা রেখে কেন আমাদের দেশে আসবে-এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আমাদের কোনো উদ্যোগ ছাড়াই বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়ছে। তাই এটিকে ধরে রাখতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।