শিল্পকলায় সিরীয় শরণার্থীদের গল্প

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৮-১১-১২ ১০:৫৩:১৮


দখলদারিত্ব— এই একটি শব্দ পুরো পৃথিবীর মানচিত্রকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। ভৌগোলিক সীমানা দখলের রাজনীতি ছাপিয়ে এখন মানুষের জীবন-সুখ-হাসি-স্বপ্নও দখল হয়ে যাচ্ছে। জীবনকে বাঁচিয়ে মাতৃভূমিতে থাকারও অধিকার নেই যেন কারো। চোখ রাখুন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার দিকে, দেখুন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর নিরেট স্বার্থের কারণে কত শত মানুষ বলির শিকার হচ্ছে, দেশ ছাড়া হচ্ছে। খবরের কাগজ আর টিভি পর্দায় রোজকার দেখা সিরীয় জনগণের জীবনের এ করুণচিত্র এবার নাটকের ভাষায় দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন জার্মান ও সিরীয় বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী ও নাট্যকার কোরিন জাবের এবং এ নাটকের নির্মাতা আমির নিজার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রদর্শনীর পর এবার ঢাকার দর্শকরা আজ সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটি উপভোগ করতে পারবেন। গ্যেটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ আয়োজিত ও শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় মঞ্চস্থ হতে যাওয়া এ নাটকের নাম ‘ও আমার প্রিয় মাতৃভূমি’ (ওহ মাই সুইট ল্যান্ড)।
প্রায় ১ ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের এ নাটকের নাট্যকার কোরিন জাবেরই এতে অভিনয় করবেন এবং তিনিই এ নাটকের একমাত্র নারী চরিত্র। কোরিন জাবের ও আমির নিজার জুবাই লেবানন ও জর্ডানের শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের বাস্তব চিত্রের পটভূমিতে ‘ও আমার প্রিয় মাতৃভূমি’ নাটকের পরিকল্পনা, সম্পাদনা ও নাট্যরূপ দিয়েছেন। নাটকটি প্যারিস প্রবাসী আধা-সিরীয় বাসিন্দার চোখে সিরীয় জনগণের সীমাহীন মানবিক সংকটময় অবস্থা বর্ণনা করে। নাটকের একমাত্র চরিত্র, একজন সিরীয় নারী, যিনি তার শরণার্থী শিবির কর্মী প্রেমিক আশরাফের খোঁজে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান, যাকে তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাকে অনুসন্ধানের সময় তিনি অসংখ্য সিরিয় শরণার্থীর মুখোমুখি হন, যারা যুদ্ধের নির্মম নিষ্ঠুরতায় প্রায় নির্বাক হয়ে উঠেছিল।
কোরিন জাবের ও আমির নিজার জুবাই এ নাটক নিয়ে বলছেন, তারা সিরিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়া সব সিরীয় জনগণের চারিত্রিক দৃঢ়তা তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছেন। লেখক ও নির্মাতার ভাষায়, সৃষ্টিকর্তার সাহায্য কামনা ছাড়া এ শরণার্থীদের আর কোনো সম্বল নেই। কোরিন জাবের ব্যাখ্যা করেছেন, ‘সিরীয়রা এমন এক জাতি, যারা বাকি বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং তারা এ সম্পর্কে নিশ্চিত অবগত। এটাও জানে, তাদের কথা শোনার জন্য কোথাও কেউ নেই। যারা এ সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সিরীয় জনগণের প্রকৃত অবস্থা আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে আগ্রহী, তাদের জন্য নাটকটি দেখা যথার্থ হবে বলে মনে করেন কোরিন জাবের।
কোরিন জাবের মঞ্চে তার গল্প বর্ণনা করার সময় ‘কুবাহ’ নামক একটি ঐতিহ্যবাহী সিরিয়ান খাবার প্রক্রিয়াজাত করেন এবং তা রান্না করেন, হয়তো এ রীতির রান্নার সঙ্গে সঙ্গে তার ভেতরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে। আবার কাঁচা মাংসের ওপর আঘাতের পর আঘাত করে এবং ফুটন্ত তেলের শব্দের মাঝে হয়তো তিনি নির্মম-নিষ্ঠুরতার স্মৃতিগুলো রোমন্থন করবেন। তিনি তার সর্বাত্মক অনুসন্ধানের দিনগুলোয় অতিক্রম করা প্রতিটি গন্তব্যের নাম উল্লেখ করবেন। এবং কীভাবে তারা প্যারিস থেকে লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ায় ভ্রমণ করেছেন, তা তুলে ধরার প্রয়াস চালাবেন।
কোরিন জাবের নাটকটির সাফল্য সম্পর্কে বলেন, তিনি মনে করেন না, এই একটি মাত্র নাটক পরিস্থিতি বদলে দেবে, কিন্তু আশা প্রকাশ করেছেন, অন্তত একটি মুহূর্তের জন্য হলেও শ্রোতা-দর্শকদের এ বিষয় সম্পর্কে হয়তো একটু ভাবনার খোরাক জোগাবে।