বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১১-১৫ ১২:০১:২০


বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় কোন্দলের কারণে নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়ে সরকার গঠন করতে না পারলে দলের সভাপতির পদ ও রাজনীতি ছাড়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন।

গতকাল সকালে গণভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীদের উদ্দেশে রাখা বক্তব্যে এমন কঠোর বার্তা দেন তিনি। এ সময় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী চার হাজার ২৩ জনের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন।

প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার বক্তব্যে শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এতে জয়ের গুরুত্ব মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের নানা সমালোচনাও করেন।

গণভবনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরপর দুই বার ক্ষমতায় এসেছি বলে হয়তো অনেকেই মনে করছেন, আবার ক্ষমতায় আসবো। কিন্তু এই ভাবনা ভুল। আমি একটা অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছি, এই দেশকে নিয়ে আবার খেলার চেষ্টা হচ্ছে।

যে পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতায় এসে এদেশের বিজয়কে ছিনিয়ে নিয়েছিল, তারা আবারও চক্রান্ত করছে। কিন্তু আমি তা হতে দিতে পারি না। দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো বলেই হাজারো ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে দলের হাল ধরেছি।

নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করেও দলকে সংগঠিত করেছি। তাই কারও চক্রান্ত সফল হতে দেবো না। দেশ ও জনগণকে নিয়ে খেলতে দেবো না। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।

নির্বাচনের তারিখ আর না পেছানোর পক্ষে নিজের অবস্থানও জানান। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ না হলে শেখ হাসিনাকে ‘বেটে খাওয়ালেও’ নির্বাচনে জেতা যাবে না বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

নৌকাকে বিজয়ী করতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেক প্রার্থী আছে। অনেক জায়গায় প্রার্থীর ভোট আছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের ভোট কম। আবার অনেক জায়গা আছে যেখানে আওয়ামী লীগের ভোট আছে, কিন্তু প্রার্থীর ভোট কম।

আমাদের সেই প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে যে জিততে পারবে। কিন্তু এমন যদি হয়, একজনকে প্রার্থী দিলাম আর ১৫ জন মিলে বললেন, আয়, এবার একটা শিক্ষা দেব। তাহলে কিন্তু হবে না। তখন কী হবে? আমরা সরকার গঠন করতে পারব না। আসবে কারা? এটা নিয়ে সন্দেহ আছে? তাদের আসতে দেবেন?

শেখ হাসিনা আরো বলেন, যারা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, যারা খুনি, তারা যদি ক্ষমতায় আসে তবে দিন-রাত পরিশ্রম করে যা অর্জন করেছি সব শেষ হয়ে যাবে, সব শেষ হয়ে যাবে। আর তা যদি করেন তবে আমাকে আর পাবেন না। এটা আমি বলে দিচ্ছি। আমি আওয়ামী লীগের পদ ছেড়ে চলে যাব।

বাংলাদেশকে কষ্ট করে উন্নয়নের এই জায়গায় নিয়ে এসেছি। ওরা ক্ষমতায় এসে এটা ধ্বংস করুক চাই না। এ জন্য সবাই কথা দিয়ে যান যাকে মনোনয়ন দেব, সবাই এক হয়ে তাকেই জেতাবেন। অনেকের মধ্যে ক্ষোভ আছে, রাগ আছে।

জনগণের মধ্যে যার ভোট বেশি তাকেই মনোনয়ন দেব। যত বড় নেতাই হোক, জনগণের মধ্যে যদি ভোট না থাকে তবে তাকে মনোনয়ন দেব না। কিন্তু যাকেই দেব তাকে জিতিয়ে আনতে হবে।

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে—এটাও মাথায় রাখতে হবে। তারা কিভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারে, মানুষের জীবন নিয়ে খেলে। তারা ক্ষমতায় এলে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। তাদের হাতে কি দেশ তুলে দেবেন?

এ সময় উপস্থিত নেতারা উচ্চস্বরে ‘না’ বলেন। তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘কথা দিলেন তো?’ নেতারা বলেন, ‘হ্যাঁ’।

তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা কি ক্ষমতায় যেতে চান?’ নেতারা বলেন, ‘হ্যাঁ’। তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষমতায় যেতে হলে কী করতে হবে? যাকে মনোনয়ন দেব তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা আরও বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। সংগঠনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বিশ্বাস ও আস্থা আনতে হবে। আর নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের উন্নতিটা হয়, এটা দেশের মানুষকে বোঝাতে হবে।

এখন আপনাদের কাছে আমার দাবি, আমি এই পর্যন্ত আপনাদের কাছে কিছু চাইনি। যতটুকু পেরেছি, দিয়েছি। আমার জীবনটকে উৎসর্গ করেছি এদেশের জন্য, আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার জন্য। দলের নেতাকর্মী আমার কাছে এসে বিমুখ হয়ে যাননি। যাদের যেভাবে পেরেছি, সহযোগিতা করেছি।

কিন্তু আজ আপনাদের কাছে আমার চাওয়ার আছে। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। এক হয়ে দলকে আবারও বিজযী করবেন। তাহলেই দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।