যুবরাজকে সরিয়ে দেয়া অসম্ভব : সৌদি মন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৮-১১-২২ ১১:২০:৫০


আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সৌদির প্রসিদ্ধ সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পেছনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ইন্দন রয়েছে। এমনকি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, যুবরাজের নির্দেশেই খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে।
যদিও এটা স্পষ্ট করে এখনও প্রমাণিত হয়নি যে, যুবরাজই খাশোগির হত্যাকাণ্ডের ইন্দনদাতা, তারপরও বহির্বিশ্বে তার ভাবমূতি নষ্ট হয়েছে।
এমনকি স্বয়ং সৌদি রাজপ্রাসাদেও তার অবস্থা কিছুটা নড়বড়ে। এমতাস্থায় গুঞ্জন উঠেছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে হয়তো তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। তবে সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন সৌদি মন্ত্রী।
সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের বিবিসিকে বলেছেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সর্বোচ্চ সীমায় রয়েছেন। অর্থাৎ তাকে সরিয়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, যুবরাজ রেডলাইনে আছেন, তাকে সরানো যাবে না।
গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। পরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়, তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং তার মরদেহ এসিড দিয়ে পুড়িয়ে ভষ্ম করা হয়েছে। সৌদি আরবও স্বীকার করেছে তিনি খুন হয়েছেন। তবে এ ঘটনার সঙ্গে যুবরাজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের।
খাশোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত কিনা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তা জানতে চেয়েছে মার্কিন সিনেট। মঙ্গলবার সিনেটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির এক সভায় রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক দলের নেতারা এ ঘটনায় দ্বিতীয় আরেকটি তদন্ত চেয়ে ট্রাম্পকে একটি চিঠিও দিয়েছেন।
একই সঙ্গে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, সিআইএর প্রতিবেদনে যাই থাকুক না কেন, তার প্রশাসন সৌদি আরব তথা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পাশেই থাকবেন। খাশোগি হত্যাকাণ্ড সিনেট তদন্ত করতে চওয়া ও ট্রাম্পের সৌদির পাশে থাকার ঘোষণার দেয়ার একদিন পরই সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য এল।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে প্রেসেডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, খাশোগির নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুব সম্ভব যুবরাজ আগে থেকেই জানতেন। এরপরই আবার বলেন, ‘হয়তো তিনি জানতেন বা জানতেন না।’
রিয়াদে বিবিসির প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা লিইসে ডোউসেটকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল জুবায়ের বলেন, ‘সৌদিতে আমাদের নেতারা রেডলাইনে (সর্বোচচ সীমায়) রয়েছেন। সৌদির দুই বিখ্যাত মসজিদের কর্তৃত্ব (মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী) ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান উভয়ই চূড়ান্ত সীমায় রয়েছে।’ অর্থাৎ এগুলোতে ইচ্ছা করলেই পরিবর্তন আনা যাবে না।
‘তারা (সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজ) সৌদির প্রতিটি নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং প্রতিটি নাগরিকও তাদের প্রতিনিধি মানেন। তাই আমরা এমন কোনো আলোচনা সহ্য করব না, যা আমাদের বাদশাহ ও যুবরাজকে অসম্মান করা হয়’-যোগ করেন সৌদি মন্ত্রী। খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবরাজ জড়িত ছিলেন না বলে তিনি পুর্নব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে আমাদের বক্তব্য আগেই পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি এবং তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই এ হত্যাকাণ্ডের যারা জড়িত আমরা তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে দেব।’
সিআইএর উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো জোর দিয়েই বলেছে, যুবরাজের নির্দেশ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ড সম্ভব নয়। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাবের এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, এটা (খাশোগি হত্যাকাণ্ড) বিপদগামী গোয়েন্দা প্রতিনিধিদের কাজ।
পাশাপাশি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল তথ্য-প্রমাণ দিতে ও এ-সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস না করতে তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানান এই মন্ত্রী। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সৌদির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনাও ক্ষীণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।