ক্ষমতাসীন ও প্রশাসনের গোপন বৈঠকের অভিযোগ রিজভীর
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৮-১১-২৪ ১৩:৩৯:৩৯
আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠক করার অভিযোগ এনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা আসন্ন ভোট নিয়ে কী ভয়ংকর পরিকল্পনায় মেতে উঠেছে। দলবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও কর্মকাণ্ড সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। বিতর্কিতদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে সরাতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাদেরকে প্রত্যাহার করতে হবে।
শনিবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত গোপন বৈঠক করছেন। প্রশাসন এবং পুলিশের বিতর্কিত ও দলবাজ কর্মকর্তারা জনসমর্থনহীন আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় বসাতে নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
তিনি বলেন, গত ২০ নভেম্বর রাতে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের চার তলার পিছনের কনফারেন্স রুমে এক গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমদ, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালউদ্দীন আহমদ, পানিসম্পদ সচিব (শেখ হাসিনার অফিসের প্রাক্তন ডিজি) কবির বিন আনোয়ার, বেসামরিক বিমান পরিবহন সচিব মহিবুল হক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও মহানগরী রিটার্নিং অফিসার) সদস্য সচিব আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ (বিচারক কাজী গোলাম রসুলের মেয়ে) কাজী নিশাত রসুল। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন র্যাব, ডিএমপি ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা।
তিনি আরও বলেন, রাত সাড়ে ৭টা থেকে আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ বৈঠকে সারাদেশের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেট-আপ ও প্ল্যান রিভিউ করা হয়। বৈঠকে ডিআইজি হাবিব জানান, পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী ৩৩টি আসনে নৌকার জয় নিশ্চিত আছে, ৬০-৬৫ আসনে কনটেস্ট হবে, বাকি আসনে কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই সাংঘাতিক কিছু করা ছাড়া এটি উৎরানো যাবে না।
রিজভী বলেন, বিস্তারিত আলোচনা শেষে মূল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ইসি বিএনপি-ফ্রন্টকে চরম অসহযোগিতা করবে। যতই চাপ দেয়া হোক প্রশাসনে হাত দেয়া যাবে না। ধরপাকড় বাড়ানো হবে, প্রার্থীদের গুম-খুন করে এমন অবস্থা তৈরি করা হবে যাতে তারা নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
তিনি বলেন, সেটির আলামত ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। যশোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু বকর আবুকে তুলে নিয়ে হত্যা করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে।
রিজভী বলেন, বৈঠকে আরও বলা হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থেকে যায় তাহলে ভোটের দিন পর্যন্ত নির্দয়ভাবে ধরপাকড়ের তাণ্ডব চালানো হবে, যেনো ভোট কেন্দ্রে কেউ হাজির হতে সাহস না করে। আর যদি ধানের শীষের অনুকূলে ভোটের হাওয়া ঠেকানো না যায়, তবে মিডিয়া ক্যু করে নৌকাকে জিতানো হবে। বিটিভির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করে সব মিডিয়াতে তা সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। একবার ফল ঘোষণা করতে পারলে তারপরে নির্মমভাবে সব ঠাণ্ডা করা হবে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, এরপর থেকে এ ধরণের সভা খুব বেশি করা যাবে না, তবে কনসালটেশন করে কাজ করা হবে। এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির নামে আসন্ন সয়সদ নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষে আওয়ামী দলীয় ৮ কর্মকর্তাকে দিয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে পুলিশ সদর দফতর। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান ৪৫ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ৬৪ জেলার উপদেষ্টা (মেনটর) নিয়োগ করে একটি নজিরবিহীন সরকারি আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
রিজভী বলেন, এ নিয়ে বিএনপির লিখিত আপত্তির প্রেক্ষিতে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কিন্তু গোপনে ঐ কর্মকর্তারা জেলায় জেলায় মনিটরিংয়ের কাজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে সারাদেশের ভোট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা প্রথম তালিকার ৬ জন সচিবকে নিয়ে একটি গুপ্ত কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে। মূলতঃ এখানে সব ধরনের কর্মকর্তা আসা-যাওয়া করেন, তাই বিরোধীদের চোখ এড়ানো সহজ হবে মনে করে ওই স্থানে গুরুত্বপূর্ণ এই সভাটি বসে।