আজ  হতে পারে মহাজোটের প্রার্থিতা বণ্টন

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৮-১১-২৫ ১০:৩৮:০৪


 

জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের প্রার্থীদের তালিকা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে। জোট দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন রবিবার (২৫ নভেম্বর)। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এক যোগে দল ও জোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আলাদা দুটি তালিকা এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের পক্ষ থেকে একটি করে তালিকা শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল শনিবার জাপা, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। সেখানে ওই তালিকা দেওয়া হয়। গতকালই তালিকাগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের একটি তালিকা দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আর অন্যটি দিয়েছেন দলের কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ ৬৫ জনের তালিকা দিয়েছেন। তাতে বর্তমান সংসদে জাপার সব এমপির নামসহ নতুন কিছু নামও আছে। কিন্তু এরশাদের দেওয়া তালিকায় বর্তমান কয়েকজন এমপির নাম নেই। তিনি ৭৬টি আসনের তালিকা দিয়েছেন।

গতকাল ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় পার্টির পক্ষে অংশ নেন এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশিদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা, মুজিবুল হক চুন্নু ও সুনীল শুভ রায়।

ওয়ার্কার্স পার্টির সূত্রে জানা গেছে, তারা আওয়ামী লীগের কাছে আটটি আসন চেয়ে নাম জমা দিয়েছে। ওই আটজনের মধ্যে পাঁচজন বর্তমান এমপি। তাঁরা হলেন রাশেদ খান মেনন, মো. ইয়াসিন আলী, ফজলে হোসেন বাদশা, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ও টিপু সুলতান। এর বাইরে শেখ হাফিজুর রহমানও বর্তমানে এমপি।

তবে তাঁর আসনে আওয়ামী লীগ ক্রিকেটার মাশরাফিকে মনোনয়ন দিচ্ছে। ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে অন্য তিনটি আসনে যাঁদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাঁরা হলেন প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খলিল (নাটোর-৪), নূর আহমেদ বকুল (মেহেরপুর-২) ও ইকবাল কবির জাহিদ (যশোর-৪)।

জাসদ সূত্রে জানা যায়, দলটির পক্ষ থেকে ১৫ জনের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। ওই ১৫ জনের মধ্যে তিনজন বর্তমান এমপি।

ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষে গতকাল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাশেদ খান মেনন ও ফজলে হোসেন বাদশা। তাঁরা প্রস্তাবিত আটজনের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমাদের দাবি অত্যন্ত যুক্তিসংগত। সংসদে ১৪ দলের শরিক হিসেবে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি। আমাদের সংসদ সদস্যদের পারফরম্যান্সও খুব ভালো।

জাসদের পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশ নেন হাসানুল হক ইনু ও শিরীন আখতার। তাঁরা ১৫ জনের তালিকা দিয়ে তা বিবেচনার জন্য শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক নেতা।

জাপা সূত্রে জানা গেছে, দলের পক্ষ থেকে দুটি তালিকা ওবায়দুল কাদেরের হাতে তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির একটি সূত্র মতে, আসন বণ্টন নিয়ে চাপে আছেন এইচ এম এরশাদ। গত দুই দিন জাতীয় পার্টি একাধিক বৈঠক করেও নিজেরা সমঝোতায় আসতে পারেনি। গতকালের বৈঠকে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিনি জাতীয় পার্টির বক্তব্য আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে পৌঁছে দেবেন এবং তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

এরশাদ চান তাঁর প্রস্তুত করা তালিকা অনুসারে আসন বণ্টন। আর রওশন চান তাঁর তালিকার প্রার্থীদের। গতকাল বৈঠকে জাতীয় পার্টি ৫০ আসনের জোর দাবি জানিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষে বলা হয়েছে, এবারের নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। এ নির্বাচনে জিতে আসার মতো প্রার্থীর তালিকা দিতে বলা হয়।

জাপা সূত্র মতে, এরশাদ রংপুর-৪, ঢাকা-১৭ ও নারায়ণগঞ্জ-১ আসন দাবি করেছেন। আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা যায়, এ ক্ষেত্রে এরশাদকে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ-১ আসন চাইলে ঢাকা-১৭ আসনের দাবি ছাড়তে হবে। এ বিষয়ে এরশাদকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার নিজের জন্য পটুয়াখালী-১ এবং স্ত্রী নাসরিন জাহান রতনার জন্য বরিশাল-৬ আসন চেয়েছেন।

বরিশাল-৬ আসন জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। লালমনিরহাট জেলার তিনটি আসন চেয়েছে জাতীয় পার্টি। রংপুর-৫ আসনে জাতীয় পার্টির তালিকায় আছেন জেলা জাপার সভাপতি শিল্পপতি ফকর-উজ-জামান। এ ছাড়া গাইবান্ধা-১ আসনে ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী এবং গাইবান্ধা-৩ আসনে ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকারের নাম দেওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রাম-২ আসনে জাতীয় পার্টির তালিকায় আছে শফিকুল ইসলাম চৌধুরীর নাম। এবার আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। ঢাকা-১ আসন জাতীয় পার্টি সালমা ইসলামের জন্য চায়। ঢাকা-১৮ আসন চেয়েছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

শনিবার রাতের সমাঝোতার ওপর নির্ভর করে নির্বানি জোট মহাজোটের বড় শরিক জাতীয় পার্টি কতটি এবং কোন কোন আসন ও যুক্তফ্রন্টসহ অন্যান্য শরিকরা কে কয়টি আসন পাচ্ছেন সে ঘোষণাও থাকবে। তবে, শেষ পর্যন্ত যদি আসন বণ্টন নিয়ে জোট শরিকদের সঙ্গে চূড়ান্ত ফয়সালা না হয় তবে, প্রার্থী তালিকা ঘোষণা পিছিয়েও যেতে পারে।

এদিকে আরেকটি সূত্র বলছে, মনোনয়ন না পেয়ে যাতে কেউ অন্য দলে যোগ দিয়ে মনোনয়ন না নিতে পারে সে কৌশল গ্রহণের জন্য আজকের ঘোষণা পিছিয়েও দেয়া হতে পারে। তবে, সবকিছুই নির্ভর করছে মনোনয়ন চূড়ান্তভাবে ফয়সালার ওপর।

অবশ্য আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে দুই দফা দেখা হতে পারে বলে শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আগামীকাল (রোববার) আপনাদের সঙ্গে দুইবার দেখা হতে পারে।’