বিলুপ্তির পথে খেজুরের রস
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১২-০৪ ১০:৪৯:৪৮
গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য এই খেজুর গুড় আজ বিলুপ্তির পথে। আগের মতো খেজুর গাছ আর নেই। ইটভাটায় জ্বালানির কাজে ব্যবহার করতে নিধন করা হচ্ছে শত শত গাছ। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্যও।
আবহমান কাল থেকেই শীতের ভোরে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করে আনেন গাছিরা। সকালের মিষ্টি রোদে উঠানে বসে গাছ থেকে সদ্য নামিয়ে আনা খেজুরের ঠা-া রস খাওয়া বড়ই তৃপ্তিকর। রসে তৈরি পিঠা-পায়েসও খুবই মজাদার। শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে বাড়িতে খেজুর রসের পায়েস ও পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। এ রস থেকে আরও তৈরি হয় সুস্বাদু গুড়, পাটালি ও সন্দেশ।
এই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সাতক্ষীরার গাছিরা। ঠুঙি, দা, দড়ি নিয়ে গাছে গাছে চড়ে বেড়াচ্ছেন তারা। কোমরে দড়ি বেঁধে গাছে উঠে নিপুণভাবে চাঁছা-ছিলা ও খিল (বাঁশের কঞ্চি ফালির বিশেষ অংশ) বসাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের মৃত শামছুদ্দিন ঢালীর ছেলে আছাদুল ইসলাম এজাহার জানান, তিনি গত ২০ বছর ধরে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করেন। গাছ ভাড়া নিয়ে রস ও গুড় বিক্রি করে আয় করেন লক্ষাধিক টাকা। শীতকালই তার আয়ের মৌসুম বলে এর অপেক্ষায় থাকেন তিনি।কিন্তু আগের মতো এখন খেজুর রস সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
তিনি অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করেন, নিজের চাষযোগ্য জমি নেই। মাঝে মাঝে শ্রমিকের কাজ করেন, ভ্যানও চালান। তবে শীত মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। সে রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করেন তার স্ত্রী।
ভোমরা ইউনিয়নের গাছি ও রস বিক্রেতা আব্দুল গফুর বলেন, ‘আমাদের জেলার খেজুর গুড়ের চাহিদা রয়েছে অন্য জেলাতেও। আমরা এখন গাছগুলো রসের জন্য প্রস্তুতি করছি। তবে আগের মতো আর খেজুর গাছ নেই। প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে রসও তেমন সুস্বাদু হয় না।’