৯৫ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল খেলাপি ঋণের কারণে
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৮-১২-০৫ ১৩:১৩:০৭
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধে খেলাপি হওয়ার কারণে এবারের নির্বাচনে ৯৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এঁদের মধ্যে সর্বাধিক ৩৩ জন প্রার্থী বিএনপির।
নিবন্ধিত অন্যান্য দলও কমবেশি ঋণখলাপিদের মনোনয়ন দিয়েছে। তবে এই তালিকায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের কারও নাম নেই। হলফনামায় তথ্যের গরমিল থাকায় আওয়ামী লীগের একজন মাত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তিনি কুড়িগ্রাম-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ জাকির হোসেন।
যদিও গত কয়েক বছরে আলোচিত শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কয়েকজন সরকারি দল ও তাদের জোট থেকে প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপি থেকে দাবি করা হচ্ছে, এঁরা সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তফসিল ঘোষণার আগে আগে ঋণ হালনাগাদ করে নিয়েছেন।
এবারের সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। ২ ডিসেম্বর বাছাইয়ে ৭৮৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। এর মধ্যে বিএনপির ১৪১টি। বাছাই শেষে যে হিসাব দাঁড়িয়েছে, তাতে বর্তমানে মোট বৈধ প্রার্থী ২ হাজার ২৭৯। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের বৈধ প্রার্থী ২ হাজার ১৬৫ জন এবং স্বতন্ত্র ১৪৪ জন।
বিএনপি–মনোনীত ৩৩ ঋণখেলাপি
খেলাপি ঋণের কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া বিএনপির ৩৩ প্রার্থী হলেন—শাহীনুর ইসলাম (দিনাজপুর-৬), আব্দুল খালেক (কুড়িগ্রাম-৩), রফিকুল ইসলাম (গাইবান্ধা-৩), নাজেমুল ইসলাম প্রধান (গাইবান্ধা-৫), এ কে এম মতিউর রহমান (রাজশাহী-৩), এম এ মুহিত (সিরাজগঞ্জ-৬), এস এম শফিকুল আলম (খুলনা-৬), মো শাহাজান (পটুয়াখালী-৩), গোলাম নবী আলমগীর (ভোলা-১), মাহবুব আনাম (টাঙ্গাইল-১),
নুর মোহাম্মদ খান (টাঙ্গাইল-৬), হজরত আলী (শেরপুর-১), মো. আখতারুজ্জামান (কিশোরগঞ্জ-২), মো. আবদুল্লাহ (মুন্সিগঞ্জ-১), নাসিমা আক্তার কল্পনা (ঢাকা-৭), সাজ্জাদ জহির (ঢাকা-৮), আফরোজা আব্বাস (ঢাকা-৯), আবু বকর সিদ্দিক (ঢাকা-১৪), এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন (ঢাকা-১৬), শওকত আজিজ (ঢাকা-১৭), সুলতান আহমেদ (ঢাকা-২০), মাকসুদুল আলম খন্দকার (নারায়ণগঞ্জ-৫), জয়নুল জাকেরীন (সুনামগঞ্জ-৪),
কাজী নাজমুল হোসেন (ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৫), আবদুল গফুর ভূঁইয়া (কুমিল্লা-১০), আবদুল লতিফ জনি (ফেনী-৩), গিয়াস কাদের চৌধুরী (চট্টগ্রাম-২ ও ৭), এ কে এম আবু তাহের (চট্টগ্রাম-৩), আসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৪), আবু আহমেদ হাসনাত (চট্টগ্রাম-৭), সামসুল আলম (চট্টগ্রাম-১০) ও সামির কাদের চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৬)।
অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র খেলাপি প্রার্থী
খেলাপি ঋণের কারণে স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা হলেন রাইসুল ইসলাম (দিনাজপুর-৩), আতাউর রহমান (দিনাজপুর-৬), রশিদুল ইসলাম (নীলফামারী-৪), কুমারেশ চন্দ্র রায়-জাসদ (রংপুর-২), আব্দুর রাজ্জাক সরকার-জেএসডি (গাইবান্ধা-১),
মাহবুব আলী (বগুড়া-৫), ফয়সাল বিন শফিক-জাকের পার্টি (বগুড়া-৬), মো. শাহাবুদ্দিন-জাতীয় পাটি (রাজশাহী-৩), আলাউদ্দিন মৃধা-জাতীয় পার্টি (নাটোর-৪), জিয়াউর রহমান (সিরাজগঞ্জ-৩), হাবিবুর রহমান-মুসলিম লীগ (সিরাজগঞ্জ-৬), মো. রোকনুজ্জামান-জাসদ (কুষ্টিয়া-৪), মহিদুল ইসলাম-জাকের পার্টি (যশোর-২), মারুফ হাসান-বিকল্পধারা (যশোর-৩), নাজিম উদ্দিন আল আজাদ-বিকল্পধারা (যশোর-৪),
শেখ জামাল উদ্দিন আহমেদ (নড়াইল-২), এস এম জুবায়ের-জাতীয় পার্টি (বাগেরহাট-১), বিশ্বজিৎ সাধু (সাতক্ষীরা-১), এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার-জাতীয় পার্টি (পটুয়াখালী-১), খবির উদ্দিন হাওলাদার-বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (পটুয়াখালী-১), ইয়াসমীন আক্তার (ঝালকাঠি-১), কাদের সিদ্দিকী-কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (টাঙ্গাইল-৪ ও ৮),
সৈয়দ মুজিবর রহমান-খেলাফত মজলিশ (টাঙ্গাইল-৭), কাজী আশরাফ সিদ্দিকী-জাতীয় পার্টি (টাঙ্গাইল-৮), চৌধুরী মো. ইসহাক-জেএসডি (ময়মনসিংহ-৬), এম এ বাশার-এলডিপি (ময়মনসিংহ-৮), নজরুল ইসলাম-মুসলিম লীগ (নেত্রকোনা-১), জাকির হোসেন তালুকদার (নেত্রকোনা-৫), এস এম আবদুল মান্নান-জাতীয় পার্টি (মানিকগঞ্জ-২), নোমান মিয়া-জাতীয় পার্টি (মুন্সিগঞ্জ-২), সুলতান আহমদ খান-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (ঢাকা-৩),
আবদুল মালেক-খেলাফত আনন্দোলন (ঢাকা-৪), কবির হোসেন-বিকল্পধারা (ঢাকা-৪), নজরুল ইসলাম-গণফোরাম (ঢাকা-৪), ফরিদুল আকবর-গণফোরাম (ঢাকা-১০,১৬ ও ১৭), সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ-ইসলামিক ফ্রন্ট (ঢাকা-১৪), মুকুল আমিন-জেপি (ঢাকা-১৫), আরিফুল হক-বিকল্পধারা (ঢাকা-১৭), রুবেল আজিজ (ঢাকা-১৭), শহীদ উদ্দিন মাহমুদ-জেএসডি (ঢাকা-১৮),
সিরাজুল হক-গণফ্রন্ট (নারায়ণগঞ্জ-৩), গিয়াস উদ্দিন (নারায়ণগঞ্জ-৪), হাফিজুর রহমান-সিপিবি (ফরিদপুর-২), আলমগীর হোসেন-জাকের পার্টি (শরিয়তপুর-১), নুরুল আমীন-ইসলামী আন্দোলন (সিলেট-৫), মুহিবুল কাদের চৌধুরী-জাতীয় পার্টি (মৌলভীবাজার-২), রেজা কিবরিয়া-গণফোরাম (হবিগঞ্জ-১), সৈয়দ ইফতেকার আহসান-জাতীয় পার্টি (কুমিল্লা-১),
নজরুল ইসলাম-এনপিপি (কুমিল্লা-৩), মোস্তাক আহমেদ-মুসলিম লীগ (কুমিল্লা-৩), আনিসুর রহমান-জাগপা (কুমিল্লা-৩), আবুল কালাম আজাদ (কুমিল্লা-৪), শাহ আলম-ইসলামী ঐক্যজোট (কুমিল্লা-৫), শেখ আবদুল বাতেন-গণফোরাম (কুমিল্লা-৫), খোরশেদ আলম-জাতীয় পার্টি (চাঁদপুর-৫), নেয়ামুল বশির-এলডিপি (চাঁদপুর-৫), এম এ আউয়াল-জাকের পার্টি (লক্ষ্মীপুর-১), মাহবুব আলম (লক্ষ্মীপুর-১) ও আবুল কাশেম-জাসদ (চট্টগ্রাম-৩)।
বাতিলের কারণ স্থানীয় সরকার
স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে থাকার কারণে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অর্ধশতাধিক মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ তালিকায় বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এঁদের অনেকে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণ হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন—পদত্যাগের সরকারি প্রজ্ঞাপন তাঁদের হাতে পৌঁছায়নি।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে আদালতের সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে আদালত বলেছেন, মেয়ররা পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। আবার পৌরসভার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, মেয়ররা পদে থেকে নির্বাচন করতে পারেবন।
কিন্তু এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিরা পদে থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হলে তা যেন বাতিল করে দেওয়া হয়। যে কারণে প্রার্থীরা পদত্যাগ করেও রেহাই পাননি।
এ তালিকায় বিএনপির উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন মামুনুর রশীদ চৌধুরী (দিনাজপুর-১), সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম (দিনাজপুর-৩), আমজাদ হোসেন সরকার (নীলফামারী-৪), জাহাঙ্গীর আলম (লালমনিরহাট-১), ফজলুর রহমান (জয়পুরহাট-১) ও আব্দুল মহিত তালুকদার (বগুড়া-৩)।
আইনে বলা আছে, ছোটখাটো ভুলত্রুটির কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না। আয়কর রিটার্ন জমা না দেওয়া এবং হলফনামায় সই না থাকার কারণে অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র না থাকার কারণেও একাধিক ব্যক্তির মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।