ফুল খাতের উন্নয়নে সব ধরণের সহযোগিতা করবে সরকার: বিডা চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১২-০৬ ১৮:৫২:১৮
ফুল খাতের উন্নয়ন ও রপ্তানির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম। ইউএসএআইডি’র সহায়তায় এবং বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি’র সহায়তায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত তিনদিনব্যাপী “ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাওয়ার এক্সিবিশন অ্যান্ড কনফারেন্স ২০১৮”-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আব্দুর রউফ।
কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ হলো “ল্যান্ড অফ ফ্লওয়ার” এবং সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মানুষের জীবনযাত্রারমান বৃদ্ধির ফলে সমাজের নানা স্তরে ফুলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বাস্তবতায় আমাদের দেশে ফুলের বাণিজ্যিক চাষাবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ কৃষি ভিত্তিক দুটি পণ্য পাট ও চা-এর উপর ভিত্তি করে আমাদের রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করে। সাম্প্রতিক সময়ে ফুলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তিনি জানান, তৈরি পোষাক খাতের দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রদানের ফলে বর্তমানে সারা বিশ্বে তৈরি পোষাক রপ্তানিতে আমরা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছি। ফুল চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগোনোর জন্য এধরনের দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রদান প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশে উৎপাদিত ফুল বিদেশে রপ্তানির জন্য প্যাকের্জিং ব্যবস্থার উন্নয়ন, হিমাগার স্থাপন, ফুলের নতুন নতুন জাত উৎপাদনের উপর গুরুত্বারোপের জন্য এখাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
বিডা’র চেয়ারম্যান বলেন, ফুল খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং গবেষণা পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তিনি এ খাতের সার্বিক উন্নয়নে “বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার গ্রোওয়ার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়শন” নামে একটি সংগঠন স্থাপিত হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন, যারা ফুলে খাতে নীতিসহায়তা প্রাপ্তিতে সরকার ও স্টেকহোল্ডাদের সাথে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারবে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ১৪.৩২% এবং মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪০.৬% কৃষিখাতের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, কৃষিভিত্তিক একটি পণ্য হিসেবে ফুলের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার (আইটিসি)’র তথ্যমতে, সারা পৃথিবীতে ফুলের বাজার প্রতিবছর ১০% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিসিসিআই’র সভাপতি বলেন, বর্তমানে সার্বিকভাবে ফুলের বাজার মূল্য প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। তিনি এ সম্ভাবনাময় শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এর সাথে জড়িত কৃষক ও উদ্যোক্তাদের স্বল্প হারে ঋণ সুবিধা প্রদান, আধুনিক প্রযুক্তি প্রাপ্তি ও ব্যবহারের প্রশিক্ষণ প্রদানে, উন্নত ও নতুন নতুন জাতের বীজ সরবরাহ করা, ওয়্যারহাউজ ও কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ এবং সর্বোপরি অবকাঠামো উন্নয়ন একান্ত অবশ্যক বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, প্রয়োজনীয় হিমাগারের অভাবের কারণে আমাদের দেশে কৃষি খাতে উৎপাদিত নানাবিধ পণ্যের যোগ্য মূল্য থেকে উদ্যোক্তা ও কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন এবং ফুল খাতের বিকাশে হিমাগার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বাংলাদেশের কৃষিখাতের উন্নয়নে “ওয়্যারহাউজ নির্মাণ” একান্ত আবশ্যক বলে অভিমত প্রকাশ করেন এবং “ওয়্যারহাউজ নির্মাণ” কে থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোঃ আব্দুর রউফ বলেন, ফুল একটি উচ্চ মূল্যমান কৃষি পণ্য এবং বাংলাদেশে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্প্রসারণের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে ২০টা জেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে এবং ফুল খাতের সম্ভাবনা কে কাজে লাগানোর জন্য তিনি সরকারী-বেসরকারী যৌথভাবে কাজ করার উপর জোরারোপ করেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি-এর সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, বাংলাদেশ ফুল খাতের বিকাশে এ ধরনের আয়েঅজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় ফুলের জন্য স্থায়ী পাইকারী বাজার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যেটির বাস্তবায়ন দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি ফুলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের “ফুল গবেষণা কেন্দ্র” স্থাপনের প্রস্তাব করেন।
ইউএসএইড’র ডিরেক্টর থমাস পোপ বলেন, বাংলাদেশের কৃষকদের দক্ষতা উন্নয়নে ইতোমধ্যে ইউএসএইড’র পক্ষ হতে প্রায় ৩০০০ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে ফুলের বাণিজ্যিক চাষাবদ ও এখাতের ভ্যালু চেইনের উন্নয়নে ইউএসএইড সর্বাতœক সহযোগিতা প্রদান করবে।
ইউএসএইড’র কনসালটেন্ট এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, ১৯৮৩ সালে যশোরের ঝিকরগাছায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ শুরু হলেও বাংলাদেশে উপযোগী জমির প্রাপ্ততা এবং সহায়ক জলবায়ুর কারণে আমাদের ফুলের বাজার প্রায় ১০০০ কোটি টাকায় এসে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, কৃষি খাতের অগ্রগতির লক্ষ্যে বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণে সরকারকেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং তা হলেই দেশের বেসরকারীখাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। ফুল শিল্পের বিকাশে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন, গবেষণা পরিচালনা, দক্ষ জনবল তৈরি এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর তিনি জোরারোপ করেন।
উল্লেখ্য, ৬-৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত “ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাওয়ার এক্সিবিশন অ্যান্ড কনফারেন্স ২০১৮”-এ প্রায় ৭০টি স্টলে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাবৃন্দ তাদের ফুল ও ফুল সংশ্লিষ্ট পণ্য প্রদর্শন করছে; যেখানে থাইল্যান্ড, ভারত এবং নেপালের ১২টি স্টল অংশ রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ মেলা রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম, এফসিএ, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসেন, পরিচালক ইঞ্চিঃ আকবর হাকিম, আন্দালিব হাসান, হোসেন এ সিকদার, ইমরান আহমেদ, মোহাম্মদ বাশীর উদ্দিন, ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী, প্রাক্তন সভাপতি মাহবুবুর রহমান, প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুস সালাম, প্রাক্তন সহ-সভাপতি আবসার করিম চৌধুী, এম আবু হোরায়রাহ, প্রাক্তন পরিচালক রিজওয়ান-উর রহমান এবং একেডি খায়ের মোহাম্মদ খান, মহাসচিব এএইচএম রেজাউল কবির প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।