খুনিরা পরিচিত, নিহতের পরিবার বলছে ‘ডাকাতি’!
প্রকাশ: ২০১৫-১১-০৫ ১১:৪৭:৩৬
রাজধানীর কদমতলীর পাটেরবাগে বাসায় ঢুকে সোহেলি আক্তার (১২) নামে এক শিশুকে কুপিয়ে হত্যা এবং তার মা সাহিদা মৃধা ডলি (৩৫), বোন সারা (৭) ও প্রতিবেশি মো. জালাল আহমেদকে (৩৫) আহত করার ঘটনা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের। দুর্বৃত্তরা সংখ্যায় ছিল ২ জন এবং তারা সোহেলিদের পূর্বপরিচিত। তবে এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
ভুক্তভোগী পরিবার ডাকাতি বললেও পুলিশের দাবি এটি শুধুই ডাকাতির ঘটনা নয়। তবে অন্য কী কারণ থাকতে পারে তাও জানাচ্ছে না পুলিশ। তবে অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী। ময়নাতদন্তের পর বুধবার বিকেলে সোহেলিকে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে আল মদিনা মসজিদের পাশে একটি ৬ তলা বাড়ির দোতলায় এ ঘটনা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য সোহেলির লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ও আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডলিকে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ও সারাকে আই হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সোহেলির স্বজন ও স্থানীয়রা জানিয়েছে হামলাকারীরা ছিল দুইজন ও তারা সোহেলিদের পূর্বপরিচিত। এক বছর আগে সোহেলিদের পাশের ভবনে তারা ভাড়া থাকত এবং বাসায় যাওয়া-আসা ছিল তাদের।
সোহেলির বাবা ইতালি প্রবাসী আব্দুল হান্নান মিয়া সেলিম জানান, ইতালি থেকে গত ১৮ অক্টোবর তিনি দেশে এসেছেন এবং তার ১৮ নভেম্বর ফিরে যাওয়ার কথা। সেলিম আরো জানান, ঘটনার সময় তিনি ডেমরায় তার খালার বাসায় ছিলেন। স্ত্রী ডলি তাকে মোবাইল ফোনে জানান, ‘ওরা সোহেলিকে মেরে ফেলেছে। সারা ও আমাকেও কুপিয়েছে।’
ঘটনাটি ডাকাতির মনে করছেন কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো শত্রু নেই। তাই ডাকাতি ছাড়া অন্য কী হতে পারে।’
কোনো মালামাল খোয়া যায়নি তবুও কেন ডাকাতি বলছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা দুজন এসেছিল মা ও মেয়েকে ভয় দেখিয়ে ডাকাতি করতে। কিন্তু সোহেলি ও সারা চিৎকার করলে দুর্বৃত্তরা তাদের এলোপাথারি কুপিয়ে চলে যায়।’
ওই দুই যুবক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদেরকে তিনি চেনেন না। তবে তার স্ত্রী ডলি তাকে বলেছিলেন, এক বছর আগে ওই যুবকরা পাশের ভবনে ভাড়া থাকত। তারা এরমধ্যে একদিন তার (স্ত্রীর) সঙ্গে দেখা করতেও এসেছিল। তবে তার স্ত্রী যুবকদের নাম বলেননি।
এদিকে ডলির বড় ভাই শহীদুল্লাহও জানান, এ ঘটনা দুই যুবক ঘটিয়েছে বলে তিনি জেনেছেন। তিনিও মনে করেন এটা ডাকাতির ঘটনা ছিল। তিনি আরো জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাতেই ডলিকে গ্রিন লাইফ হাসপাতাল ও সারাকে আই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সুরতহাল রিপোর্টে কদমতলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হিলাল উদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেছেন, সোহেলির মাথায় ৪ ইঞ্চি লম্বা ও প্রায় ১ ইঞ্চি গভীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার ডান হাতের অনামিকা ও কনিষ্ট আঙুল ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাম হাতের তর্জনি বিচ্ছিন্ন, বৃদ্ধাঙ্গুলি অস্ত্রের আঘাতে কেটে ঝুলে রয়েছে ও হাতের কবজিতে কোপের জখম রয়েছে।
কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ভবনের দারোয়ান মিয়া মাতব্বরকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে দারোয়ান জানিয়েছে, ওই যুবকরা ভবনে ঢোকার সময় দারোয়ান গেট খুলে দেয়। পরে তিনি এশার নামাজ পড়তে যান। নামাজ পড়ে এসে দেখেন গেইটের তালা ভাঙা ও দোতলায় এ ঘটনা হয়েছে। ওই দুই যুবক গত কয়েকদিন ধরে প্রায়ই বাসায় আসত এবং এক দেড় ঘণ্টা ওই বাসায় থেকে চলে যেত। পরিচিত বলেই দারোয়ান গেট খুলে দেয়। ওই যুবকরা এক বছর আগেও পাশের ভবনে ভাড়া থাকত। তবে কেন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ক্রাইম সিন ও আলামত দেখে এটি ডাকাতির ঘটনা বলে মনে হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা অসুস্থ থাকায় তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তাই এখনই এ ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করা ঠিক নয়। তবে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে মাঠে কাজ করছে পুলিশ। এ ঘটনায় বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।