রামগড় স্থলবন্দর পাহাড়ি অর্থনীতিতে গতি আনবে
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১২-১৭ ১১:২১:৫১
খাগড়াছড়ির রামগড়ে বহুপ্রতীক্ষিত দেশের ২৩তম স্থলবন্দর গড়ে তোলার কাজ এগিয়ে চলছে । এ বন্দর স্থাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১-এর নির্মাণ শুরুর খবরে মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছে।
হতদরিদ্র থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মনে করছে রামগড় স্থলবন্দরকে ঘিরে এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় পাহাড়ি এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। মিল-কারখানা খুব একটা না থাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষ সামান্য আয় কিংবা বেকার জীবন যাপন করছে।
খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুদর্শন দত্ত ও অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী জানান, অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে রামগড় স্থলবন্দর অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে, অবশ্যই তা একটি ইতিবাচক খবর। একটা সময় ধরেই নেওয়া হয়েছিল এটা বোধ হয় আর হচ্ছে না।
কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আগ্রহ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় পুরোদমে এগোচ্ছে রামগড় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের অগ্রযাত্রা। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম স্থাপিত এই স্থলবন্দরের বিশাল কর্মযজ্ঞ দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে তাঁরা মনে করেন।
এলাকাবাসী মনে করে, বিপুলসংখ্যক মানবসম্পদ কাজে লাগবে এই কর্মযজ্ঞে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্পেও নতুন গতি আসবে।
সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত জানুয়ারি মাসে রামগড়ে এক জনসভায় বলেন, মৈত্রী সেতুর মাধ্যমে ভারতের ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্পের প্রসার এবং মানুষে মানুষে সম্পর্কোন্নয়নে গোটা অঞ্চল উপকৃত হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, সর্বোপরি গোটা এলাকায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।
তিনি ওই সময় আরো জানান, রামগড় স্থলবন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক (রামগড়-বারৈয়ারহাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার) উন্নয়নের কাজ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকা বাস্তবায়ন করবে। এ জন্য খরচ হবে তিন হাজার কোটি টাকা এবং সড়কটি চার লেনে উন্নীত হবে। অন্যদিকে ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪.৮ মিটার প্রস্থ সংযোগ সেতুটির নির্মাণ ভারত করবে।
মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ১৫০ মিটার। খরচ হবে ১১০ কোটি রুপি। নির্মাণ সময় ধরা হয়েছে দুই বছর পাঁচ মাস। পাশাপাশি চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের মহাপরিকল্পনার কথা হাটহাজারীতে গত জানুয়ারিতে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক।
অন্যদিকে ত্রিপুরার আগরতলা থেকে সাবরুম পর্যন্ত রেললাইনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সড়কপথে রামগড়-চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ৭২ কিলোমিটার এবং সাবরুম-আগরতলা ১৩৩ কিলোমিটার।
জানা যায়, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল—এই সাত রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্প সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার বহু আগেই রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর স্থাপনে উদ্যোগী হয়।
এ জন্য ভারত সরকার ফেনী নদীর ওপর চার লেনবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের একটি সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাজ হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে স্থলবন্দরকে ঘিরে বন্দর টার্মিনাল, গুদামঘরসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের কাজও চূড়ান্ত হয়েছে।
অবশ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপনে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ভারত দীর্ঘ সময় ধরেই সচেষ্ট ছিল। এটা সম্ভব হওয়ায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী গত জানুয়ারিতে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় জানিয়েছিলেন, রামগড় স্থলবন্দর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২৩তম। এ জন্য রামগড়ের মহামুনিতে ১০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। প্রয়োজনে পরে আরো নেওয়া হবে।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রামগড়ে স্থলবন্দর স্থাপনের ঘোষণা দেয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় রামগড় স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ দীর্ঘদিন ফাইল চাপা থাকলেও ২০১০ সালে কাজ ফের শুরু হয়।
পাহাড়ি নেতা মংপ্রু চৌধুরী ও রামগড় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল কাদের বলেন, সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ উভয় পক্ষ ত্বরিত গতিতে স্থলবন্দর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করায় ব্যবসায়ীসহ সব মহল আশার আলো দেখছে। এই স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে স্থানীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখবে।