আমরা আবারও বিজয়ী হব:প্রধানমন্ত্রী

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৮-১২-২১ ০০:০০:৪০


প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আশা করি আমরা আবারও বিজয়ী হব। জনগণ আমাদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দিবে। আমরা জনগণের কাছ থেকে সেই সাড়াই পাচ্ছি।

বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে ১৫ জন সাবেক আইজিপিসহ ৮৮ জন অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানানোর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

টানা মেয়াদে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের কাছ থেকে যে সাড়া পাচ্ছি তাতে আশা করি, তারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। আবার আমরা জয়ী হব। যেহেতু আমরা জয়ী হবো—তাই আমরা সবসময় চাইবো দেশে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকুক। কোনরকম যেন গোলমাল না হয়।’

ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সামনে—আর এখন তো আমার বড় চাচারা, বুড়া চাচারাও অনেকেই চলে গেছে অন্যদিকে। আমাদের জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। কোন আশায় কী আশায় গেছেন জানি না। আমরাই তাকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করেছিলাম, আমরাই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বলে বলে—এত কিছু করার পর।’

‘ওনি একসময় তো ছিলেন, আর এখন তো একেবারে নৌকা থেকে নেমে ধানের গোছা নিয়ে নেমে পড়েছেন। সেখানে গেছেন কোন আশায় জানি না? কোন মরীচিকার পিছনে ছুটলেন? তাও বলতে পারবো না।’

‘দুঃখ হয় যে, এরা আজকে ওই যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী; যাদের বিচার করলাম, তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, এটাই হচ্ছে সবথেকে লজ্জার এবং সব থেকে ঘৃণার। তাদের সঙ্গে আজকে হাত মিলিয়ে। তারা আমাদের সরকার উৎখাত করবে—সরকারও নাকি গঠনেই করে ফেলবে।’

বাংলাদেশ এগিয়ে যাক বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাই আবার যদি যুদ্ধাপরাধীরা সরকার গঠন করে তাহলে এ দেশে তো আর মুক্তিযুদ্ধের কোনো মর্যাদাও থাকবে না, চেতনাও থাকবে না। দেশের উন্নতি-অগ্রগতিও হবে না। কারণ যারা পরাজিত শক্তির দোসর তারা তো চাইবে না। বাংলাদেশ আজকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে গেছে। যেখানে পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবী বলে আমাদেরকে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও, এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও বলে আমরা বাংলাদেশের মতো হতে চাই। এই জায়গায়টায় আমরা আসতে পেরেছি।’

‘দুঃখ লাগে যে, এই দেশের সন্তান; যারা দালালী করে ওই পরাজিত শক্তির। যারা দালালী করেছে তারা সবসময়ই চেষ্টাই করবে বাংলাদেশকে টেনে নামাতে দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সস্মানটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমাদের কয়েকটা পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে। যখন বিশ্বব্যাক পদ্মা সেতুতে টাকা দেবে বলে তারা এগিয়ে এলো। তারপরে আবার দুর্নীতির অভিযোগ এনে অর্থ বন্ধ করলো। আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম। দুর্নীতির প্রমাণ করতে হবে। কারণ এখানে দেশ চালাতে এসেছি—দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে। নিজের ভাগ্য গড়তে নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে। এইখানে কেন দুর্নীতি করতে যাবো? আর দেশটাই তো আমার, আমার বাবা দিয়ে গেছেন। আমি এই দেশের উন্নতি করবো। আমি সুন্দর করে দেশটাকে গড়ে তুলবো, যেটা আমার বাবা সময় চেয়েছেন। এখানে আমি কেন দুর্নীতি করতে যাবো।’

‘আধাপেট খেলেও এদেশ আমার, ভরাপেটে খেলেও এ দেশ আমার। আমি কি খেলাম কি পরলাম, ওটা নিয়ে আমার চিন্তা নেই। আমি মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম। মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম। আমার দেশের মানুষ পেটভরে খেতে পাচ্ছে কি না? তাদের মাথা গোঁজাবার ঠাঁই আছে কি-না? তাদের জীবনটা সুন্দর হচ্ছে কি-না সেটাই আমার চিন্তা। সেখানে আমি কেন দুর্নীতি করবো? তাই তারা দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি।’

‘আজকে কিন্তু সেই পদ্মা সেতু আমরা তৈরি করছি। তারপর হতে সব পরিবর্তন। বাংলাদেশ একটা অন্য উচ্চ মর্যাদায় চলে গেছে। ওই একটা সিদ্ধান্তই আমাদের নিয়ে গেছে অনেক উপরে। এখন সকলেই বাংলাদেশকে সমীহ করে।’

‘আমাদের উন্নয়নটা খালি একদিকে না। আমরা সবদিক থেকেই একটা জাতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন—এখনো সকলেই সহযোগিতা করেছে। খালি ওই রাজাকার-টাজাকার আর জামায়াতের কিছু সুশীল ছাড়া বাকি সবার কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি। বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন কেন এদের মাথাটাথা খারাপ হলো তা বলতে পারবো না। যাই হোক— একটু মতিভ্রম তো মানুষের মাঝেমাঝে হয়, সেটাই বোধহয় হয়ে গেছে।’

‘আগামীতে নির্বাচন। আপনাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের এই সমর্থন শুধু আমি না এখনো যারা কর্তব্যরত পুলিশ বাহিনী তারাও নিশ্চয়ই একটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।’

‘স্বাধীন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। এই মর্যাদাটাকে ধরে রাখতে এবং উন্নয়নের গতিটা আরও ত্বরান্বিত করতে হবে। এটাই হচ্ছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে তিনি বলেন, আমরা এভাবেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবো। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। আমরা ২০৪১ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা নিচ্ছি কীভাবে দেশ উন্নত হবে। কারণ দেশটাকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করবো। ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবার্ষিকী উদযাপন করবো। হয়ত আপনারা-আমরা কেউ থাকবো না। কিন্তু আমাদের প্রজন্ম তো থাকবে, তারা করবে।’

‘তাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর জীবন পায় অন্তত আমাদের মতো বঞ্চনা বা অবহেলার শিকার, কষ্ট; এগুলো তাদের করতে না হয়, তাদের যেন একটা সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে ওঠে সেটাই করে দিয়ে যেতে চাই। সেইটা মাথায় রেখেই আমরা সমস্ত পরিকল্পনা নিয়েছি’ বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরেই জাতির পিতার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন সেদিকগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কিন্তু নতুন কিছু করতে হয়নি। তার করা কাজগুলোকেই শুধু বাস্তবায়ন করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’

পুলিশ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দোয়া কামনা করে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে যেন আমরা জয়ী হয়ে এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে পারি। আর ওই খুনী অগ্নি সন্ত্রাসকারী, যারা পুলিশের লোকদের হত্যা করেছে। এত জঘন্য কাজ তারা করতে পারে।’

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা হচ্ছে পুলিশকে পয়সা দিয়ে হাত করা আরেকটা হচ্ছে এদেরকে হত্যা করে এদের ডিমোরালাইজড করা, এই দ্বিমুখী পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগুচ্ছে। আর এই পরিকল্পনা তো একটা ক্রিমিনাল আছে, লন্ডনে বসে, সে ওখানে বসে বসে পাঠায়। তবে আমার এইটুকু আত্মবিশ্বাস আছে, এখন তারা যেটা চিন্তা করে পুলিশ এখন সেটা না। পুলিশ এখন অনেক দক্ষতা অর্জন করেছে। অনেক আত্মবিশ্বাস তাদের মাঝে ফিরে এসেছে এবং তাদের যেটা দায়িত্ব কর্তব্য তারা সেটা কঠিনভাবে পারে। সেটা যদি না করত, তাহলে এই সন্ত্রাস দমন আমরা করতে পারতাম না, এই জঙ্গিবাদ দমন করতে পারতাম না।’

‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক,দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা যে অভিযানটা চালাচ্ছি, এটা আমরা সফল হতে পারতাম না। সব থেকে বড় কথা জনগণের সমর্থন আছে। জনগণের একটা আস্থা-বিশ্বাস আছে। এখন পুলিশের ওপর জনগণের একটা আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। এই আস্থা এবং বিশ্বাসটাই আমাদের সব থেকে কার্যকর এবং শক্তি জোগায়।’

‘সেদিক থেকে আমি মনে করি যে, যেকোনো দুর্যোগ আসলে মোকাবেলা করবার মতো ক্ষমতা আছে। আর আমাদের দেশের মানুষও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। মানুষের সচেতনটা হচ্ছে সবথেকে বড়, এই শক্তিটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় শক্তি। জনগণের ক্ষমতায়নটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড়।’

সংহতি প্রকাশকারীদের মধ্যে সাবেক আইজিপি ছাড়াও অন্যান্য অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে পিএসপি অফিসার একজন, সাবেক অ্যাডিশনাল আইজিপি ১৯ জন, ডিআইজি ২৪ জন, অ্যাডিশনাল ডিআইজি ৩ জন, এআইজি ও পুলিশ সুপার ১১ জন এবং অতিরক্তি পুলিশ সুপার ১৫ জন উপস্থিত ছিলেন।

তারা হলেন সাবেক পিএসপি কর্মকর্তা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক আইজিপি এ টি আহাম্মেদুল হক চৌধুরী, সাবেক সচিব ও পুলিশ কর্মকর্তা মো. মমিনউল্লাহ পাটওয়ারী, সাবেক আইজিপি কুতুবুর রহমান, মো. শামসের আলম, এ কে এম এনায়েতউল্লাহ দেওয়ান, মো. আব্দুর রউফ, মো. আওলাদ হোসেন মিয়া, কাজী বজলুর রহমান, মো. আব্দুল হাননান, মো. রুহুল আমিন, মুহ. আব্দুল হাননান খান, এম সানাউল হক, মো. নুরুল আনোয়ার, এ কে এম শহীদুল হক। সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. সরওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ আবদুর রহিম খান, মো. নুরুল আলম, মো. আলী ইমাম চৌধুরী, মো. ফজলুল হক, মো. আব্দুর রহিম, খন্দকার মোজাম্মেল হক, গোলাম মোস্তফা, মো. লুৎফর রহমান মিয়া, মো. মতিউর রহমান, মো. আব্দুল মান্নান, মো. আব্দুল মাবুদ, আমূল্য ভূষণ বড়ুয়া, মো. নাজমুল হক, ফাতেমা বেগম, বিনয় কৃষ্ণ বালা, নওশের আলী। সাবেক ডিআইজি মো. আবু হানিফ, দেওয়ান হাবিবুল্লাহ, মো. সফিক উল্লাহ, খন্দকার সাহেব আলী, কাজী নজরুল ইসলাম, মো. মোখলেসুর রহমান, শাহ আলম সিকদার, পি আর বড়ুয়া, মো. তোফাজ্জল হোসেন, মো. ওয়ালিউর রহমান, নিরাবরণ কুমার চন্দ, মোস্তফা জামাল উদ্দিন আল আজাদ, কাজী আনোয়ার হোসেন, মো. আলতাফ হোসেন মোল্লা, চৌধুরী আহসানুল কবীর, মো. সাজ্জাদ হোসেন, মোস্তাক হোসেন খান, সফিকুর রহমান, মকবুল হোসেন ভূঁইয়া। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা, মীর নওশের আলী, মো. সিরাজুল ইসলাম, আওরঙ্গজেব খান লেনিন, নূর মোহাম্মদ।