শেষ ম্যাচ হেরে ট্রেবল জিততে পারলো না বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১২-২২ ২১:১২:১৯
তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ হেরে ব্যাকফুটে যাওয়া টাইগাররা দ্বিতীয় ম্যাচে জয় তুলে নেয়। বাংলাদেশ-উইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে শনিবার (২২ ডিসেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুই দল। টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি সাকিব আল হাসান। আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯.২ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে উইন্ডিজরা তোলে ১৯০ রান। জবাবে, বাংলাদেশ ১৭ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে তোলে ১৪০ রান। শেষ ম্যাচে সাকিব-তামিম-মুশফিকরা ৫০ রানে হেরে সিরিজ খোয়ায় ২-১ ব্যবধানে।
বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচটিই হয়ে গেল বছরের শেষ ম্যাচ। উইন্ডিজের বিপক্ষে অলিখিত ফাইনালে রূপ নেয়া টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি জিতলে সিরিজটা নিজেদের করে নিতে পারতো টাইগাররা। তাতে বাড়তি আনন্দের মাত্রা যোগ হতো স্বাগতিকদের। ট্রেবল জয়ের আনন্দে মাততে পারতো লাল-সবুজরা। টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার পর ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জেতে বাংলাদেশ। এই ম্যাচ জিতলে টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টির কোনো পূর্ণাঙ্গ সিরিজে প্রথমবার তিন ফরম্যাটের ট্রফিই হাতে তোলার আনন্দ নিয়ে বছর শেষ করতে পারতো টাইগাররা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচ হেরে মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে নেমেছিল টাইগাররা। সিলেটে যে বাংলাদেশকে দেখা গেছে মিরপুরে দ্বিতীয় ম্যাচে একেবারে ভিন্ন চেহারায় ছিল টাইগাররা। ৪ উইকেটে ২১১ রান করে ম্যাচটি জিতেছিল ৩৬ রানে ব্যবধানে। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচটি জিতলেই টাইগাররা নাম লেখাতো অনন্য এক অর্জনে।
গত আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ খেলতে যায় ফ্লোরিডায়। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আসা প্রবাসীদের উপস্থিতিতে ফ্লোরিডার সেন্ট্রাল রিজওনাল পার্ক স্টেডিয়ামে উইন্ডিজকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়ে টাইগাররা সিরিজটি জিতে নিয়েছিল ২-১ ব্যবধানে।
শেষ ম্যাচে উইন্ডিজদের উদ্বোধনী জুটিতে নামেন শাই হোপ এবং এভিন লুইস। ৫ ওভারেই তারা তুলে নেন ৭৬ রান। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে সাকিব বোল্ড করে ফেরান ১২ বলে তিনটি চার আর একটি ছক্কায় ২৩ রান করা শাই হোপকে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে সফরকারীরা তুলে নেয় ৮৮ রান। ১৮ বলে নিজের ফিফটি তুলে নেন এভিন লুইস। ইনিংসের সপ্তম ওভারে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন কেমো পলকে (২)। অবশেষে লুইস ঝড় থামান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইনিংসের দশম ওভারে সাকিব বল তুলে দেন তার হাতে। নিজের দ্বিতীয় বলেই লুইসকে বোল্ড করেন রিয়াদ। বিদায়ের আগে যা করার করেন লুইস। ক্যারিবীয়ান এই ওপেনার ৩৬ বলে ৬টি চার আর ৮টি ছক্কায় করেন ৮৯ রান। পরের বলেই এলবির ফাঁদে পড়েন শিমরন হেটমেয়ার। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগলেও হয়নি। ইনিংসের ১৪তম ওভারে রিয়াদের বলে লিটনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ১৬ বলে ১৯ রান করা রোভম্যান পাওয়েল।
ইনিংসের ১৭তম ওভারে মোস্তাফিজ এসে ফিরিয়ে নিকোলাস পুরানকে। আবু হায়দার দারুণ এক ক্যাচ নেন। বিদায়ের আগে ২৪ বলে দুটি চার আর দুটি ছক্কায় পুরান করেন ২৯ রান। একই ওভারে মোস্তাফিজ ফেরান কার্লোস ব্রাথওয়েইটকে। স্লিপে মেহেদি মিরাজের দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফেরার আগে উইন্ডিজ দলপতি ৭ বলে করেন ৮ রান। ১৯তম ওভারে সাকিব ফিরিয়ে দেন ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে (৮)। স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি। একই ওভারে অভিষিক্ত শেরফানে রাদারফোর্ডকেও (২) বিদায় করেন সাকিব। মাহমুদউল্লাহর করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে রানআউট হন ওশানে থমাস।
৪ ওভারে ৩৭ রানে সাকিব তিনটি উইকেট নেন। ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে মোস্তাফিজ নিয়েছেন তিনটি উইকেট। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩.২ ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচ করে নিয়েছেন তিনটি উইকেট। ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি সাইফউদ্দিন। মিরাজ ২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। আবু হায়দার রনি ২ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন।
১৯১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে নামেন তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তিন রান নিতে গিয়ে রানআউট হন তামিম ইকবাল (৮)। দলীয় ২২ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর জীবন পান লিটন দাস। তারও আগে নো-বল থেকে ফ্রি-হিটে ক্যাচ তুলে দিয়ে দ্বিতীয়বার বেঁচে যান লিটন। নো-বল থেকে ফ্রি হিটে জীবন পান তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকারও। চতুর্থ ওভারে আবারো নো-বলে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। তবে, নো-বলটি বিতর্কিত হওয়ায় খেলা থমকে দাঁড়ায়। দীর্ঘ আলোচনার পর লিটন আরেকবার বেঁচে যান। ওশানে থমাসের করা সেই ওভারেই আসে ৩০ রান।
পঞ্চম ওভারে পর পর দুই বলে ফ্যাবিয়েন অ্যালেন ফিরিয়ে দেন সৌম্য সরকার (৯) এবং সাকিব আল হাসানকে (০)। ষষ্ঠ ওভারে কেমো পলের বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মুশফিকুর রহিম (১)। দলীয় ৬৬ রানে বাংলাদেশ হারায় চতুর্থ উইকেট। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭০/৪। কেমো পলের করা অষ্টম ওভারে বিদায় নেন ৯ বলে দুটি চারে ১১ রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নবম ওভারে আবারো ভুল করেন আম্পায়ার। এলবির আবেদনে লিটন দাসকে আউট ঘোষণা করেন। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান লিটন।
চারবার জীবন পাওয়া লিটন নিজের ইনিংস লম্বা করার সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হন। দশম ওভারে কেমো পলের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন ব্যক্তিগত ৪৩ রানে। তার আগে ২৫ বল মোকাবেলা করে তিনটি করে চার ও ছক্কা হাঁকান লিটন। পরের বলেই বিদায় নেন আরিফুল হক। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েও পাননি কেমো পল। নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নিতে এই পেসার ফিরিয়ে দেন সাইফউদ্দিনকে (৫)। ব্যক্তিগত ৭ রানে ক্যাচ তুলে দিয়ে জীবন পান মেহেদি মিরাজ। আট উইকেট হারানোর পর কিছুটা জুটি গড়েন মিরাজ-আবু হায়দার রনি। নবম এই উইকেট জুটিতে ২১ বলে আসে ৩৩ রান। ইনিংসের ১৬তম ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন ১৯ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৯ রান করা মিরাজ। আবু হায়দার রনি ১৭ বলে ২১ রান করে অপরাজিত থাকেন। ১৭ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে বাংলাদেশ তোলে ১৪০ রান, ম্যাচ হারে ৫০ রানে।
৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান খরচায় ৫ উইকেট তুলে নেন কেমো পল। ৪ ওভারে ১৯ রান খরচায় দুটি উইকেট পান ফ্যাবিয়ান অ্যালেন। ৪ ওভারে ৩১ রানের বিনিময়ে একটি উইকেট পান শেলডন কতরেল। ৩ ওভারে ৫৬ রান দিলেও উইকেট পাননি ওশানে থমাস। ২ ওভারে ১৫ রান খরচায় দুটি উইকেট পান কার্লোস ব্রাথওয়েইট।