গত একদশকে ব্যর্থ বেসরকারি ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১২-২৪ ১০:৪৩:০২
দেশের অধিকসংখ্যক মানুষকে ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আনতে ও খাতের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১২ সালে অনুমোদন দেয়া হয়েছে নয়টি বেসরকারি ব্যাংককে। কিন্তু এসকল ব্যাংক নিজ খাতে ভালো করতে পারেনি।
২০১২ সালের দিকে অনুমোদন দেয়া হয় নয়টি নতুন বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক কে। এর মধ্যে তিনটি প্রবাসীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। এগুলো হলো এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক। দেশীয় উদ্যোক্তাদের নতুন ছয়টি ব্যাংক হলো ফারমার্স, মধুমতি, মেঘনা, মিডল্যান্ড, ইউনিয়ন এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক।
১৬টি শর্তে নতুন এসব ব্যাংককে লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যাত্রার ছয় বছরেও শর্ত পূরণের ধারে-কাছে যেতে পারেনি ব্যাংকগুলো। শর্ত ছিল কার্যক্রম শুরুর তিন বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার। এখনো সে শর্ত পূরণ থেকে বহুদূরে ব্যাংকগুলো। লাইসেন্স পাওয়ার শর্ত ছিল ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের অন্তত ৫ শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণের। এখন পর্যন্ত ২ শতাংশ ঋণও কৃষি খাতে বিতরণ করেনি নতুন ব্যাংকগুলো। নিট মুনাফার অন্তত ১০ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে ব্যয়ের শর্ত থাকলেও সেটা পূরণেও ব্যর্থ নতুন ব্যাংকগুলো।
নতুন নতুন ব্যাংক প্রডাক্ট চালু, বিদেশী বিনিয়োগকারী দেশে নিয়ে আসা, রেমিট্যান্স নিয়ে আসতে কার্যকর পন্থা উদ্ভাবনসহ যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন ব্যাংক লাইসেন্স নিয়েছিল, সেসব প্রতিশ্রুতিও ফিকে হয়ে এসেছে। উল্টো এখন পর্যন্ত বিদেশী বড় কোনো ব্যাংকের সঙ্গে করেসপনডেন্ট ব্যাংকিং শুরু করতে পারেনি এ ব্যাংকগুলো। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের প্রসিদ্ধ ব্যাংকগুলো এ ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেনে আগ্রহী নয়। এখন পর্যন্ত ভারতসহ কিছু দেশের তৃতীয় শ্রেণীর কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে নস্ট্রো হিসাব চালু করতে পেরেছে নতুন ব্যাংকগুলো। ফলে দেশের অন্য ব্যাংকগুলোর মাধ্যমেই লেনদেন করতে হচ্ছে তাদের। নতুন ব্যাংকগুলোর দাবির মুখে এরই মধ্যে বেশকিছু শর্ত শিথিলও করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যবসায় সফলতা না পেলেও দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে নতুন ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন ৯ ব্যাংকের ৪ হাজার ২৭০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এর মধ্যে সংকটে থাকা ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণই ৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৫৮ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় এ ব্যাংকগুলোর ভিত ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে।
এ ব্যাংকগুলোর সফলতা মূল্যায়নের চেষ্টাই বৃথা বলে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, নতুন ব্যাংকের কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল না, এখনো নেই। নতুন ব্যাংকগুলোর অনুমোদন না দিলেও দেশের ব্যাংকিং খাতের যে বিকাশ হতো, এখনো তা-ই হচ্ছে। বিদ্যমান ব্যাংকের নতুন শাখা খুলে ব্যাংকিং কার্যক্রমের সম্প্রসারণ আর নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিয়ে সম্প্রসারণ কখনো এক নয়।