শ্রমিক আন্দোলনের মুখে গাজীপুরের অন্তত ১৩ গার্মেন্টস বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১২-২৬ ০৯:৫৮:১৪


শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলনের মুখে গাজীপুরের অন্তত ১৩টি তৈরি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ বলছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এসব কারখানা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে শ্রমিকরা ভুল ধারণা থেকে অযৌক্তিকভাবে এ আন্দোলন করছেন বলে দাবি করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ হোসেন, কাশিমপুর থানার ওসি আকবর আলী খান, গাজীপুরের শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মো. শহীদুল্লাহসহ একাধিক সূত্র জানায়, সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ী বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, সাইনবোর্ড, গাজীপুরা, শ্রীপুর, রাজেন্দ্রপুর, ভবানীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি, বিক্ষোভ করে আসছেন। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগও করেন। আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এতে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।

একপর্যায়ে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে বিভিন্ন কারখানা সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়েকদিনে মণ্ডল গ্রুপের কটন ক্লাব ও মনটেক্স, ডেল্টা, কেয়া, স্ট্যান্ডার্ড, মাল্টিফ্যাব, আলীম নিটওয়্যার, ইসলাম গ্রুপের আংশিকসহ ১৩টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

মণ্ডল গ্রুপের কটন ক্লাব পোশাক কারখানার পরিচালক জোবায়ের মণ্ডল দাবি করেন, ভুল ধারণা থেকে শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে এ আন্দোলন করছেন। সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামোয় কারখানার সিনিয়র-জুনিয়র অপারেটরদের মূল বেতনসহ আনুসাঙ্গিক খাতের ভাতাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারের আগের ঘোষিত গেজেটে কর্মীদের দক্ষতা অনুযায়ী তাদের গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে বেতন ভাতা কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বেতনের টাকা হাতে পেলেই শ্রমিকদের বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে।

জোবায়েল মণ্ডল আরো দাবি করেন, ‘কিন্তু বিভিন্ন মহল সিনিয়র অপারেটরদের ভাতাদি বৃদ্ধি করা হয়নি বলে গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনে ইন্ধন দেয়। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়লে তাঁরা অযৌক্তিকভাবে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করে ভাঙচুর করে আসছেন।

শ্রমিক অসন্তোষ পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কারখানায় দেখা দিচ্ছে। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে কারখানাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্বল্পতা থাকায় মণ্ডল গ্রুপের কটন ক্লাব ও মনটেক্স পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

আশপাশের আরো কয়েকটি কারখানাও একই কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব কারখানা খুলে দেওয়া হবে বলে জানান মণ্ডল গ্রুপের কটন ক্লাব পোশাক কারখানার পরিচালক।

গাজীপুরের শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ী বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পোশাক শ্রমিক অসন্তোষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কয়েকটি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব কারখানা বন্ধ থাকার কথা ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

‘তবে ওইসব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়, সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব কারখানা পুনরায় চালু করা হবে’, যোগ করেন শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার।

সানবিডি/এনজে