নেতা-কর্মীদের ধর্য ধরতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০১৮-১২-২৬ ২১:৪৩:৪৫


নেতা-কর্মী ও দেশবাসীসহ সকলকে ধর্য ধরতে বললেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনোভাবেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গাঁ বাসানো যাবে না।

বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সুধাসদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনটি জেলায় নির্বাচনি জনসভার বক্তব্য দেওয়ার সময় চাঁদপুরবাসীর উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন বাকি। সকলকে একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ওরা উসকাবে। ওদের সন্ত্রাস করা চরিত্র। ওরা তা করবে। কিন্তু আমাদেরকে খুব ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা জানি, আমরা জয়লাভ করে আবার সরকার গঠন করে দেশের মানুষের সেবা করবো। সেই কারণে আমাদেরকেই ধৈর্য ধরতে হবে। যেন সুষ্ঠভাবে নির্বাচনটা হয়। কোনমতে নির্বাচন তারা বানচাল করতে না পারে।

শেখ হাসিনা সরকারের টানা ধারাবাহিকতায় মানুষের কল্যাণে উন্নয়নের পদক্ষেপ ও কর্মসূচিগুলো তুলে ধরেন এবং আগামীতে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এ ছাড়াও আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডেল্টা প্ল্যানের কথা তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আমরা রেখে যাচ্ছি আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দর জীবন পায়। আজকের যারা তরুণ বা আজকে এই মুহুর্তে যে শিশুটি জন্ম নিল তাদের যেন ভাগ্য পরিবর্তন হয় এবং সুন্দর একটা পরিবেশে বসবাস করতে পারে, সেই দিকে চিন্তা করে এই পরিকল্পনাগুলো তৈরি করে দিয়ে গেলাম। যেন এদেশের মানুষ সুুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা যেন আর ব্যর্থ না হয়, স্বাধীনতার সুফল যেন প্রত্যেক মানুষের ঘরে পৌছায়, মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়, এটাই আমাদের লক্ষ্য।

আসন্ন জাতীয় সংসদের ঘোষিত নির্বাচনি ইশতেহারের কথা তুলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একমাত্র দল যারা নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন করে। অনেক ক্ষেত্রে ইশতেহারে যা ঘোষণা দেই তার থেকে অনেক বেশি আমরা কাজ করি। এটা হলো বাস্তবতা। অনেকে অনেক সময় সমালোচনা করেন। নির্বাচনি ইশতেহার একবার দিয়ে তারপর আর খবর রাখি না। আসলে তারাই খবর রাখে না এবং তারা পড়েও না। তারা যদি পড়ে দেখত, এখন যে উন্নয়নটা করেছি এবং নির্বাচনি ইশতেহারে যে ওয়াদা দিয়েছিলাম তার থেকে যে অনেক দূর এগিয়ে গেছি, সেটা হয়ত তারা দেখতে পেতেন।’

‘কিছু মানুষ আছে যাদের চোখ থাকতে অন্ধ। সমালোচনা তাদের করতেই হবে। না হলে তাদের কিছুই ভাল লাগে না। এরকম একটা শ্রেণীও আমাদের দেশে আছে। এই নিয়ে আমাদের চলতে হবে।’

‘তবে একটা কথা খেয়াল রাখতে হবে। এখানে আমাদের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং জনগণ আছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট এরা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে। এরা হত্যা খুন সন্ত্রাস, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করেই অভ্যস্ত এবং তারা জানে যে আমাদের এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দেবে এবং তারা তাদের সন্ত্রাস দুর্নীতি এতিমের টাকা আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিং করা টাকা বিদেশে ধরা পড়া, ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারী; এ সমস্ত অপকর্মের কারণে এদেশের মানুষকে আর তাদেরকে চায় না ক্ষমতায় দেখতে। এটা জেনেই তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে, নানা রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে।’

‘ইতোমধ্যে আমাদের ৫ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনি অফিস পোড়াচ্ছে। আমাদের মানুষের ওপর আঘাত করছে। আমি সবাইকে একটা অনুরোধ করবো, এটা শুধু চাঁদপুর না সারাদেশের সকল নেতা-কর্মীকে, নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন বাকি। সকলকে একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ওরা উসকাবে। ওদের সন্ত্রাস করা চরিত্র। ওরা তা করবে। কিন্তু আমাদেরকে খুব ধৈর্য্য ধরতে হবে এই কারণে, আমরা যেহেতু জানি যে আমরা জয়লাভ করে আবার সরকার গঠন করে দেশের মানুষের সেবা করবো। সেই কারণে আমাদেরকেই ধৈর্য ধরতে হবে। যেন সুষ্ঠভাবে নির্বাচনটা হয়। কোনমতে নির্বাচন তারা বানচাল করতে না পারে।’

এরপর একে চাঁদপুরে নৌকার ৫ জন প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রার্থীরা হলেন চাঁদপুর-১ ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, চাঁদপুর-২ মো. নুরুল আমিন রুহুল, চাঁদপুর-৩ ডা. দীপু মনি, চাঁদপুর-৪ মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, চাঁদপুর-৫ মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বক্তব্যে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুংগঠিত। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব যা ছিল সমস্ত কিছু আমরা অবসান ঘটিয়েছি এবং সবাইকে মিলে মাঠে কাজ করছি। আমরা কথা দিচ্ছি চাঁদপুরের ৫টি আসনে নৌকার বিজয় উপহার দেবো। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেন নেতারা।’

চাঁদপুর-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমার নির্বাচনি এলাকায় দেখেছি বিপুল গণজোয়ার নির্বাচনের পক্ষে। সত্তরের নির্বাচনে যে গণজোয়ার উঠেছিল তেমনি গণজোয়ার উঠেছে। কিন্তু আমি করি, আমরা আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে চলবে না। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে সময়মতো কেন্দ্রে যেতে হবে এবং কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। কোনো উল্লাস করলে হবে না। ফলাফল নিয়ে আমাদের ঘরে যেতে হবে। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যকে সমর্থন করে ‘ইয়েস’ শব্দ উচ্চারণ করেন।’

সবশেষে শেখ হাসিনা বলেন, চাঁদপুর, এখানে চাঁদের হাট বসেছে। চাঁদপুরের চাদের হাট, এই চাঁদ পুরো পূর্ণিমার মতো বিকশিত হোক সেটাই চাই। ৩০ ডিসেম্বর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সকলকে জয়যুক্ত করে বাংলাদেশকে যেন আমরা এগিয়ে নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

এ ছাড়াও কুষ্টিয়া ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে সংযুক্ত হয়ে মহাজোটের প্রার্থীদের বিজয়ী করার আহ্বান জানান তিনি।