কোনো ষড়যন্ত্র দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না
প্রকাশ: ২০১৫-১১-০৬ ১৭:২১:৩৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব ক্ষেত্রে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই দেশকে এখন আর কেউ উপেক্ষা করতে পারছে না। কোনো ষড়যন্ত্র বা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
নেদারল্যান্ডে তিন দিনের সরকারি সফরের শেষদিন গতকাল বৃহস্পতিবার কুরহাউস হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শ, জনগণের অদম্য কাজের স্পৃহা এবং প্রবাসীদের অব্যাহত সমর্থন আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ২০২১ সালের আগেই ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সামরিক স্বৈরশাসকরা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের জনগণ যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই তারা সামনে এগিয়ে যাওয়ার এবং মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন লাভের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের পথ থেকে কোনো ষড়যন্ত্রই দেশকে বিচ্যুত করতে পারবে না। সব ষড়যন্ত্র কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে।
বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনে অবদান রেখেছে প্রবাসীরা। বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলতি বছর প্রায় ২৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে লড়াইয়ের জন্য প্রবাসীরা সেসময় স্যার টমাস উইলিয়ামকে পাঠিয়েছিলেন। তারা মুক্তিযুদ্ধকালে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সুইডেন ও ব্রিটেনে প্রতিবাদ জানাতে নেমে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড তদন্ত করার জন্য টমাস উইলিয়ামকে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রবাসীরা। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়নি।
নেদারল্যান্ডকে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে নেদারল্যান্ড। এই সম্পর্ককে জোরদার করার লক্ষ্যে এখানে সরকারি সফরে এসেছি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশে পরিণত হতো। সাড়ে তিন বছরের মেয়াদকালে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রায় সব কাজ সম্পন্ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়নি। বরং গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও আইনের শাসন বিস্মৃত হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ২১ বছর ধরে কষ্ট করেছেন এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালে দেশের জনগণ উন্নয়নের প্রকৃত স্বাদ উপলব্ধি করতে পেরেছে। কিন্তু ৫ বছরের বেশি তাদের এ সুখ স্থায়ী হয়নি। কারণ ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় ফিরে এসে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের নির্যাতন ও ভীতি প্রদর্শন করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৮ সালের নির্বাচন হচ্ছে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। এ নির্বাচনে দেশের জনগণ সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগকে আবার ম্যান্ডেট দিয়েছিল। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে প্রতিটি খাতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে গতি ফিরে আসে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও কর্মসূচিগুলোকে সামনের সারিতে নিয়ে আসে। সরকার একসঙ্গে সমৃদ্ধি লাভের লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির ওপর সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বিগত বছরগুলোতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া আবার ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছেন এবং তার প্রতিটি পদক্ষেপের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড, নৈরাজ্য ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের পেছনে তারা রয়েছেন।
দেশে বিনিয়োগ করার বিদেশি উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে এবং বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্র্রী শেখ হাসিনা।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন- পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক, অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি অনীল দাশগুপ্ত, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ, হল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহিদ ফারুক প্রমুখ।
সূত্র: বাসস