বাংলাদেশের যত সংসদ নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৮-১২-২৯ ১১:০১:০৬


জাতীয় সংসদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সভা। এক কক্ষবিশিষ্ট এ আইন সভার সদস্য সংখ্যা ৩৫০। এর মধ্যে ৩০০ সংসদ সদস্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত।
স্বাধীনতার পরপরই দেশে প্রথম সংসদীয় গণতন্ত্রের ব্যবস্থা চালু হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ১০ বার সংসদ নির্বাচন হয়েছে।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে জয়লাভ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা-১২ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন। ভোট পড়েছিল ৫৪.৯%। সে সময় সংরক্ষিত নারী আসন ছিল ১৫টি।
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতার পালাবদলে মসনদে আসীন হন তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। তিনি নির্বাচন দেন ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। তখন সংরক্ষিত নারী আসন ছিল ৩০টি। তবে এ সংসদেই প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ভোটে একজন নারী সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ (খুলনা-১৪)। নির্বাচনের মাস ছয়েক আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২০৭ ও আওয়ামী লীগ ৫৪টি আসন পেয়েছিল। ভোট সংগৃহীত হয়েছিল ৫১.৩%।
তৃতীয় সংসদ নির্বাচন
আরেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অধীনে ১৯৮৬ সালের ৭ মে হয় এ নির্বাচন। এতে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৫৩, আওয়ামী লীগ ৭৬ ও জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন পায়। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করেছিল। নির্বাচনে ১,৫২৭ প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। ভোট পড়েছিল ৬১.১%।
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সিপিবিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করেছিল। জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসনে জয় পায়। সংরক্ষিত নারী আসনসংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এ সংসদে আসন ছিল ৩০০টি। ভোট সংগৃহীত হয়েছিল ৫২.৫%।
পঞ্চম সংসদ নির্বাচন
স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর প্রথম নির্বাচন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বিএনপি ১৪০, আওয়ামী লীগ ৮৮ আর জাতীয় পার্টি ৩৫টিতে জয়লাভ করে। ৩০০ আসনের বিপরীতে ৪২৪ জন স্বতন্ত্রসহ ৭৫টি দল থেকে ২,৭৮৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। এ ছাড়া পরোক্ষভাবে ৩০ জন নারী সাংসদ নির্বাচিত হন। ভোট সংগৃহীত হয়েছিল ৫৫.৪%।
ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনটি আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ বিরোধী দল বর্জন করেছিল। ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি ২৭৮টিতে জয় পেয়েছিল। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে মাত্র চার কার্যদিবস সংসদ বসার পর তা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস হয়। ভোট সংগৃহীত হয়েছিল ২১%।
সপ্তম সংসদ নির্বাচন
সংবিধান অনুযায়ী গঠিত প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয় এ নির্বাচন। ২৮১ জন স্বতন্ত্রসহ ৮১টি দল থেকে ২৫৭৪ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬ ও জাতীয় পার্টি ৩২টি আসনে জয় পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ০.৬৭% এবং দলীয় প্রার্থীরা ৭৪.৮২% ভোট পান।
অষ্টম সংসদ নির্বাচন
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের এ নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩ ও আওয়ামী লীগ ৬২টি আসনে জয়ী হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৯৩৫ প্রার্থী। ভোট পড়েছিল ৭৫.৫৯%। আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এ সংসদে শুরুতে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন ছিল না। পরে আইন করে সংরক্ষিত নারী আসন ৩০ থেকে ৪৫-এ উন্নীত করা হয়।
নবম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে সবশেষ নির্বাচনটি হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদের অধীনে। এ সরকার ২০০৭ সালের জানুয়ারির শুরুতে জরুরি অবস্থা জারি করে, যা ২০০৮ সালের ১৬ ডিসেম্বরে তুলে নেওয়া হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট পেয়েছিল ২৬৩টি আসন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট পায় ৩৩টি আসন। ভোট পড়েছিল ৮৭.১৩%।
দশম সংসদ নির্বাচন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১৭টি দল অংশ নেয়। এ নির্বাচনে ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হন। এ হিসেবে দেশের ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ৯৭৭ ভোটারের মধ্যে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ জন। ভোট পড়ে ৯০.৪৫%।