ক্যান্সার ও কিডনী রোগ থেকে বাঁচতে মূলা খান

আপডেট: ২০১৫-১১-১১ ১৩:২১:০৭


Mulaশীতকাল হচ্ছে নানান পদের সবজির এক সমাহার। সব ধরনের সবজি এই মৌসুমে সবার খাওয়া দরকার। প্রত্যেক সবজিতে থাকে সমকালীন সকল প্রকার পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই পুষ্টি বিজ্ঞানীরা মনে করেন, যেকোন দেশের জলবায়ূ অনুযায়ী সে দেশের শাক-সবজি সবার খাওয়া উচিৎ। অনেককে দেখা যায় নানা ধরনের সবজির ভেতর থেকে বেছে বেছে সবজি খান। এভাবে না বেছে সব সবজি কম-বেশি করে খেতে হবে। তাহলে শরীর মন দুটোই ভাল থাকে।

মূলা তরকারীর নাম শুনলেই আমরা অনেকেই নাক কুঁচকে ফেলি। এটা খাবারযোগ্য একটি তরকারী হতে পারে তা আমাদের অনেকেরই কল্পনার বাইরে। দেখা যায় অনেকে মূলা জাতীয় সবজিটি খেতে চান না। এটা খেলে নাকি বায়ূ জাতীয় সমস্যা হয়। মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে প্রকৃতির সব ধরনের শাক-সবজি খেতে হবে। এটা তার জন্য স্বাস্থ্যকর। তাই আসুন জেনে নেয়া যাক মূলার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

নামকরণ ও উৎপত্তি স্থল:

শীতকাল মানেই মজার মজার সবজি। শীতের সবজির তালিকায় রয়েছে মূলাও। সহজলভ্য এই সবজিটি অনেকেই বেশ পছন্দ করেন। সাদা রঙের এই সবজিটি হালকা গন্ধযুক্ত বলে অনেকেই আবার খেতে চান না।

মূলার আদি নিবাস কন্টিনেন্টাল এশিয়া। মূলার বৈজ্ঞানিক নাম Raphanus sativus. longipinnatus। এর ইংরেজি নাম Daikon। এই Daikon শব্দটি এসেছে জাপানি ভাষা থেকে, যার অর্থ হলো ‘বৃহত্‍ মূল’। চীনে এটা পরিচিত সাদা গাজর বা White Radish নামে।

এছাড়াও জায়গাভেদে মূলাকে Oriental radish, Japanese radish, Chinese radish, Mooli ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। হিন্দি ও উর্দুতে মূলাকে মূলি নামে ডাকা হয় বলে মূলি শব্দটা ইংরেজিতেও প্রচলিত।

মূলা মূল জাতীয় সবজি, অনেকটা গাজরের মতোই! মূলা তরকারি হিসেবে যেমন রান্না করে খাওয়া যায় তেমনি খাওয়া যায় কাঁচাও। সালাদের উপকরণ হিসেবে কাঁচা মূলা বেশ জনপ্রিয়। মূলার পাতা শাক হিসেবেও খাওয়া হয়।আমাদের দেশের প্রায় সব শ্রেণীর মানুষের কাছে মূলা বেশ জনপ্রিয় সবজি।

মূলা সালাদ, তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। আবার মূলার পাতা শাক হিসেবেও খাওয়া হয়। তাই মূলা চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।

এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। মূলা বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

শীতের মৌসুমি সবজি এই মূলার বেশ কদর রয়েছে। দেখতে অতি সাদামাঠা হলেও মূলাতে রয়েছে বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের সমাহার। এ কারণে মূলা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম মূলাতে রয়েছে:-

খাদ্যশক্তি- ১৮ কিলোক্যালরি

শর্করা- ৪.১ গ্রাম

চিনি- ২.৫ গ্রাম

খাদ্য আঁশ- ১.৬ গ্রাম

চর্বি- ০.১ গ্রাম

আমিষ- ০.৬ গ্রাম

থায়ামিন- ০.০২ মিলিগ্রাম

রিবোফ্লেভিন- ০.০২ মিলিগ্রাম

নিয়াসিন- ০.২ মিলিগ্রাম

প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.১৩৮ মিলিগ্রাম

ভিটামিন বি৬- ০.০৪৬ মিলিগ্রাম

ফোলেট- ২৮ আইইউ

ভিটামিন সি- ২২ মিলিগ্রাম

ক্যালসিয়াম- ২৭ মিলিগ্রাম

আয়রন- ০.৪ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেসিয়াম- ১৬ মিলিগ্রাম

ম্যাংগানিজ- ০.০৩৮মিলিগ্রাম

ফসফরাস- ২৩ মিলিগ্রাম

সোডিয়াম- ২১ মিলিগ্রাম

জিংক- ০.১৫ মিলিগ্রাম

পটাশিয়াম- ২২৭ মিলিগ্রাম

মূলার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:

মূলা পাতা ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ও ‘সি’ সমৃদ্ধ।

মাংসল, খাবার উপযোগী মূলে আছে কিছুটা ভিটামিন ‘সি’, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস।

স্বাস্থ্যতথ্য:

জন্ডিস

রক্তের দুষন পরিস্কার করায় বিশাল এবং সেই সাথে শক্তিশালী এক ক্ষমতা রয়েছে মূলায়।যা আমাদের লিভার এবং পাকস্থলীর সমস্ত দুষন এবং বর্জ্য পরিস্কার করে থাকে।এছাড়াও মূলা জন্ডিসের অন্যতম কারন বিলিরুবিনের পরিমান কমিয়ে তাকে একটি গ্রহনযোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসে যা কিনা জন্ডিসের চিকিতসার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এমনকি মূলা রক্ত কনিকায় অক্সিজেন সরবরাহের পরিমান বাড়িয়ে তুলে, ফলে জন্ডিস রোগটি যে আমাদের শরীরের রক্ত কনাগুলো ভেঙ্গে ফেলে তার পরিমান কমিয়ে আনে।

অর্শ:

অর্শের প্রধান কারন হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য।প্রচুর আঁশ সমৃদ্ধ সব্জী মূলা অত্যন্ত সাফল্যের সাথে এই দিকটি মোকাবেলা করে থাকে। খাবার হজম করার এক শক্তিশালী উপাদান মূলা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এই রোগের আশংকাকে নির্মুল করে দেয়।আর এর মাঝে যে পানি রয়েছে তা পরিপাক ক্রিয়াকে গতিশীল করে তোলে।

ওজন কমানো:

আজকাল সবাই স্লিম ফিগারের অধিকারী হতে চায়। কেউ পছন্দ করে না সে মুটু হোক। তাছাড়া এই স্থুল স্বাস্থ্য অনেক রোগের আবাস। স্লিম হওয়ার জন্য কত প্রচেষ্টা, কত ডায়েট কত জিম কত কিছু। কিন্ত মূলা খুব সহজেই আপনাকে আপনার চাহিদামত স্বাস্থ্যের অধিকারী করে তুলবে। মূলা মানুষের ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে তাছাড়া এতে ক্যালোরীর পরিমান খুব কম। আরো রয়েছে প্রচুর পরিমান আঁশ, পানি এবং হজমযোগ্য শর্করা।এটা ডায়েটিং এর জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান, কারন মূলায় ক্ষুধা নিবৃত্ত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে শরীরের মেটাবলিজমে সাহায্য করে ওজন কমায়।

ক্যান্সার:

ক্যান্সার শুনলেই আমরা ভয়ে শিউরে উঠি। আজ পর্যন্ত ক্যান্সারের পরিপুর্ন চিকিতসা আবিস্কৃত হাই লেভেল ভিটামিন সি,এন্টি অক্সিডেন্ট এবং শরীরের দুষন দূর করার ক্ষমতা সম্পন্ন মূলা ওরাল, পাকস্থলী, বৃহদন্ত, কিডনী এবং কোলন ক্যান্সার চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত। ক্যান্সারের সেল নির্মুলেও এর অবদান রয়েছে।

শ্বেতী রোগ:

আমরা দেখি শ্বেত রোগ নিয়ে ভয়াবহ এক মানসিক দুঃশ্চিন্তায় জীবন অতিক্রম করছে অনেকেই । সমাজে মুখ দেখানো তাদের জন্য অসহনীয়। কিন্ত রোগটি ছোয়াচে নয়, শরীরের রং উদপাদনকারী তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ায় এই বিপর্যয়। শ্বেত রোগের চিকিৎসায় মূলা অত্যন্ত কার্য্যকরী।এন্টি কারসেনোজিনিক উপাদান সম্বরদ্ধ মূলার বীজ আদার রস এবং ভিনেগারে ভিজিয়ে লাগাতে হবে। নাহলে কাঁচা মূলা চিবিয়ে খেলেও হবে।

স্কিনের সমস্যা:

প্রচুর পরিমান খনিজ এবং ভিটামিনে পুর্ন মূলা স্কিনের বিভিন্ন সমস্যায় অত্যন্ত উপকারী। বিভিন্ন ক্ষত সারানো ছাড়াও কাচা মূলা ফেস প্যাক এবং ক্লিন্সার হিসেবেও দারুন উপকারী।

পোকার কামড়:

মৌমাছির হুল অথবা যে কোন পোকা মাকড়ের কামড় দিলে মূলার রস লাগিয়ে দিবেন।সাথে সাথেই ফোলা এবং ব্যাথা কমে যাবে।

জ্বর:

জ্বর এবং এর কারনে শরীর ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে অত্যন্ত উপকারী সব্জী মূলা।

কিডনী রোগ:

কিডনীর অকার্যকরতায় মূলা অত্যন্ত্য উপকারী।কারন এতে রয়েছে সংক্রমন দূর, পরিস্কার করার ক্ষমতা এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো মূলার প্রচুর পানি কিডনীর ভেতরে জমে থাকা সমস্ত দূষনকে দূর করে দেয়।

শ্বাস নালীর সংক্রমন:

আমাদের শ্বাসনালী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারনে সংক্রমিত হচ্ছে। যেমন এলার্জি,ইনফেকশন, ঠান্ডা লাগা ইত্যাদি। মূলা এসব রোগ নির্মুল করে এছাড়াও বিভিন্ন সংক্রমন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

লিভার এবং গলব্লাডার:

লিভার এবং গলব্লাডার চিকিতসায় মূলা অত্যন্ত কার্যকরী। মূলা বিলিরুবিন, বাইলস,এনজাইমস,এবং এসিড উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রন করে থাকে।

এছাড়াও নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ, ক্ষুধা বৃদ্ধি, হুপিং কফ, গলায় ক্ষত, এসিডিটি, বমিভাব, মুত্রনালীর প্রদাহ এবং মাথা ব্যাথার জন্য অত্যন্ত উপকারী। কাঁচা মূলা আলসার এবং বিভিন্ন সংক্রমন থেকেও রক্ষা করে।

সতর্কতা:

যাদের থাইরয়েড গ্রন্থি, বুক জ্বলার সমস্যা আছে তাদের মূলা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

এত স্বস্থ্য ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মূলা সবার খাওয়া উচিৎ নিজের স্বাস্খ্য সুরক্ষায়।।

সানবিডি/ঢাকা/এসএস