পোশাকশিল্পে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক জনবলের চাকরির সুযোগ

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৬-১২ ১৫:২৭:৫৫


 

দেশের সব ধরণের কর্মসংস্থানের মধ্যে সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হচ্ছে ‘তৈরি পোশাকশিল্প’। শিল্পপণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিদেশে রপ্তানিকাজে বিপুলসংখ্যক জনবলের দরকার হয়। প্রতিটি কারখানায় বেশ কিছু বিভাগ রয়েছে, যেমন—এইচআর বা মানবসম্পদ, অ্যাডমিন বা প্রশাসন, প্রডাকশন বা উত্পাদন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল বা মান নিয়ন্ত্রণ, ফিন্যান্স বা হিসাব ব্যবস্থাপনা, আইসিটি বা তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি, মার্কেটিং বা বিপণন, ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল, সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা, স্টোর ইত্যাদি। প্রতিটি পোশাক কারখানায় এ ধরনের পদে প্রতিবছর বড়সংখ্যক জনবল নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নানা কারণে প্রতিনিয়তই পদ খালি হচ্ছে। কাজের চাহিদার জন্য একদিকে নতুন জনবলের দরকার হচ্ছে, অন্যদিকে কর্মীদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কারণেও নতুন লোকের কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

যে সকল পদে নিয়োগ হয়

স্টালিং গ্রুপের লাইলা স্টাইল লিমিটেডের ম্যানেজার (এইচআর অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স) মো. শামীম ফেরদৌস জানান, ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার, জুনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার, এক্সিকিউটিভ অফিসার, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, ডেপুটি ম্যানেজার, ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, জেনারেল ম্যানেজার—পদগুলোতে সাধারণত সরাসরি নিয়োগ হয়। এসব পদে সাধারণত কাজের দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদে পদায়ন করে। প্রতিটি বিভাগেই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় বাছাইয়ের জন্য আলাদা আলাদা টিম থাকে।

মো. শামীম ফেরদৌস আরো জানান, পোশাক কারখানায় শ্রমিক পর্যায়ে বেশি নিয়োগ হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত কারখানায় অন্তত দুই থেকে পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করে। একটি মানসম্মত পোশাক তৈরি করতে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন কাটিং মাস্টার, হেলপার। এদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সুপারভাইজর, লাইন ম্যানেজার ও ইনচার্জ থাকেন। এঁরা সবাই শ্রমিক। কাজের মান, কাজের ধরন, শিক্ষাগত যোগতা (এসএসসি/এইচএসসি) ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একজন শ্রমিক পরবর্তী সময়ে ‘ইনচার্জ’ পর্যন্ত হতে পারেন।

চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে

নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘কর্মকর্তা’ পর্যায়ের পদগুলোতে যেকোনো বিষয়ে স্নাতক পাস হলেই আবেদন করা যাবে। ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসারের ক্ষেত্রে কোনো অভিজ্ঞতার দরকার নেই।

জুনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে দুই থেকে তিন বছর, এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার দরকার হবে।

সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, ডেপুটি ম্যানেজার, ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, জেনারেল ম্যানেজার—পদগুলোতে সাধারণত পাঁচ থেকে সাত বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও ডিরেক্টর পদে নিয়োগ দেওয়া হয় সাধারণত যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থীকে কর্তৃপক্ষের সুপারিশের ভিত্তিতে।

একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জয়া নন্দী জানান, আইসিটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রতিটি পদের জন্য ফ্রেসার ইঞ্জিনিয়ার নেওয়া হয়।

নিরাপত্তা বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সিপাহি, আনসারদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

বহুজাতিক গার্মেন্টপ্রতিষ্ঠান বিট বডি বাংলাদেশ লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের ম্যানেজার

মো. ফাইজার রহমান বলেন, ‘ফ্রেসাররা যদি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চায়, তাহলে প্রার্থীদের অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করতে হবে। পাশাপাশি ইংরেজিতে যোগাযোগ বা কথোপকথনে পারদর্শী হতে হবে। তথ্য-প্রযুক্তিতেও মোটামুটি জানাশোনা থাকতে হবে। কাজের সুবিধার জন্য এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল সম্পর্কে বিস্তর ধারণা থাকতে হবে। অন্যদিকে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ স্টাফের জানাশোনা কাউকে কিংবা রেফারেন্সের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

এসব প্রতিষ্ঠানে একেকজন শ্রমিক একেকটি মডেলের পোশাক তৈরি করেন। এইচএসসি পাস ও সাধারণ ইংরেজি বোঝে এমন শ্রমিককে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিই।’

আবেদন করার নিয়ম

পোশাক কারখানার নোটিশ বোর্ড ও ওয়েবসাইটের পাশাপাশি অনেক সময় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন জব পোর্টালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। মানবসম্পদ বিভাগে গিয়ে সরাসরি সিভি জমা দেওয়ার সুযোগও আছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। পদ খালি হলে সিভি দেখে যেকোনো সময় প্রার্থীকে ডাকা হতে পারে। বিভিন্ন পোশাক কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পোশাক কারখানায় নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা হয় না। সাধারণত দুই ধাপে ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। প্রার্থী যে পদ বা কাজের জন্য আবেদন করেছে, ভাইভায় সে সম্পর্কিত প্রশ্ন করা হয়। প্রথম ধাপের ভাইভায় টিকে গেলে দ্বিতীয় ধাপের ভাইভার জন্য ডাকা হয়। টেকনিক্যাল পদের প্রার্থীদের বাছাইয়ে অনেক সময় ব্যাবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।

বেতন ও অন্যান্য সুবিধা

বিভিন্ন পোশাক কারখানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসারের বেতন ১০ থেকে ১৮ হাজার; জুনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার ১৮ থেকে ২৫ হাজার, এক্সিকিউটিভ অফিসার ২৫ থেকে ৩৫ হাজার, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার, ডেপুটি ম্যানেজার ৫৫ থেকে ৭৫ হাজার, ম্যানেজার ৮০ হাজার টাকারও বেশি বেতন পান। এ ছাড়া অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, জেনারেল ম্যানেজার, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, ডরেক্টর পদেও বেতন সাধারণত কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও চাকরি প্রার্থীর চাহিদা অনুসারে বেতন নির্ধারণ করা হয়। কারখানায় শ্রমিক মজুরি আইন অনুসারে, সর্বনিম্ন মজুরি আট হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। একজন শ্রমিক সর্বোচ্চ বেতন পান ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা। এ ছাড়া কেউ যদি ওপরের পদে যেতে পারেন, তাহলে ২০ থেকে ২৮ হাজার টাকা বেতন পাবেন। কোনো কোনা কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতনের বাইরে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়।

শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে  যা যা লাগবে

শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স দেখা হয় না। তবে অষ্টম শ্রেণি বা জেএসসি পাস ও বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর হলে অগ্রাধিকার পায়। শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে ওপরের পদে যাওয়া যায়। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জয়া নন্দী জানান, নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘শ্রমিক নিয়োগ নীতিমালা’ অনুসরণ করা হয়। চাকরির জন্য কর্মীদের জীবনবৃত্তান্তের সঙ্গে ছবি, ভোটার আইডি কার্ড বা জন্মনিবন্ধন, ইউনিয়ন বা পৌরসভা থেকে নাগরিকত্বের সনদ জমা দিতে হয়। এগুলো দেখে প্রাথমিকভাবে শ্রমিক বাছাই করা হয়। কারখানাভেদে অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ শ্রমিক নেওয়া হয়। পুরনো কারখানায় সাধারণত নতুন শ্রমিক বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়। পোশাক কারখানায় অনেক সময় শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক চাপ সইতে হয়। কারণ একজন শ্রমিকের কারণে তৈরি পোশাকে ছোটখাটো কোনো ত্রুটি বায়ারদের চোখে ধরা পড়লে পুরো অর্ডারটাই বাতিল হয়ে যেতে পারে।