আদালতের খাঁচায় ফেলে রেখে মুরসিকে হত্যা করা হয়?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-০৬-২০ ১২:১২:৫১
মিসরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি।মৃত্যুর দিনে মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি আদালত কক্ষে ২০ মিনিট অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছে তার পরিবার ও বন্ধুরা। তারা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট-এর কাছে দাবি করেছেন, সে সময় । অ্যাটর্নি জেনারেল এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই মিসরীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন মুরসি। গত ৭ মে তিনি আদালতে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, তার জীবন হুমকির মুখে। ১৭ জুন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, ‘আদালতের এজলাসে হঠাৎ পড়ে গিয়ে’ মুরসির মৃত্যু হয়েছে।
মুরসির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এজলাসের খাঁচায় বিনা চিকিৎসায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে মিসরের অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সরকারের দাবি, অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দীর্ঘদিন থেকে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি ও লিভারজনিত রোগে ভুগছিলেন মুরসি। কিন্তু কারাবন্দি এ রাজনীতিককে যথাযথ চিকিৎসা নিতে না দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় সামরিক জান্তা। ছয় বছর দিনে ২৩ ঘণ্টা নির্জন কারাগারই ছিল তার ঠিকানা। দিনে শুধু একবার এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটির সুযোগ দেওয়া হতো তাকে। ছয় বছরে মাত্র তিনবার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান মুরসি। শেষ দেখা হয়েছিল ২০১৮ সালে।
মৃত্যুর পর মুরসির দাফনেও বাধা দেওয়া হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে সারকিয়া প্রদেশের নিজ শহরে দাফনের আবেদন জানালে তা নাকচ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার ভোরে কঠোর গোপনীয়তায় রাজধানী কায়রোর নসর এলাকায় তাকে দাফন করা হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য ও মুরসির দুই আইনজীবী ছাড়া কাউকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। শুধু জানাজা, দাফনে বাধা দেওয়াই নয়; বরং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও পরিবারের সদস্যদের দেখাতে অস্বীকৃতি জানায় কর্তৃপক্ষ।
মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির (এফজেপি) নেতা মুরসি দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট। ২০১১ সালে আরব বসন্তের হাত ধরে আসা এক গণঅভ্যুত্থানে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক পদচ্যুত হন। পরের বছরেই নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন মুরসি। তামারুদ’ নামের একটি গোষ্ঠীর মাধ্যমে সাজানো এক বিক্ষোভ আয়োজন করে ২০১৩ সালে সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। মুরসির হাতে সেনাপ্রধান হওয়া আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি ক্ষমতায় বসেন।
মুরসিকে গ্রেফতার করে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম ও কাতারের কাছে রাষ্ট্রীয় তথ্য পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আদালতের মুখোমুখি করা হয়। তার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের কাছে তথ্য পাচারেরও অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের জুনে তথ্য পাচারের মামলায় মুরসিকে দোষী সাব্যস্ত করে নিম্ন আদালত। দেশের গুরুত্বপূর্ণ নথি পাচারের অভিযোগে মুরসিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।