ডিআইজি মিজানের সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৬-২১ ০৯:৫৬:২৮


পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।

দুদকের করা আবেদনে আদালতকে জানানো হয়, ডিআইজি মিজানের সম্পদের অনুসন্ধান শুরুর পর থেকেই তিনি তাঁর বৈধ আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ বিক্রি ও স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন। তাই অসাধু উপায়ে অর্জিত এসব সম্পদ বা সম্পত্তির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তা বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে অবস্থায় তাঁর এসব সম্পদ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করাও সম্ভব হবে না।

আদালতের আদেশে বলা হয়, ডিআইজি মিজানের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এ মুহূর্তে ক্রোক করা না হলে সেগুলো হস্তান্তর হওয়ার আশঙ্কা আছে। ফলে তাঁর স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হলো।

ডিআইজি মিজানের সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে বেইলি রিটজ ভবনের চতুর্থ তলায় ৫৫ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট, কার পার্কিং স্পেসসহ ৫৫ দশমিক ৫১ অযুতাংশ জমি, কাকরাইলে দুই কোটি ২০ লাখ টাকার একটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট, দোকান ও জমি। এসব সম্পত্তির মূল্য তিন কোটি ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬০ টাকা। এ ছাড়া ধানমণ্ডি সিটি ব্যাংকের হিসাবে রয়েছে ১০ লাখ টাকা।

আদালতের আদেশের পর দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, গত বুধবার আদালতে এ আবেদনের শুনানি হয়। তবে আদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার। ক্রোক করা সম্পত্তি যেন হস্তান্তর, বিক্রি বা মালিকানাস্বত্ব বদল করা না যায়, সে জন্য ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারের নিবন্ধন পরিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, তেজগাঁও শিল্প এলাকার ঢাকা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার এবং ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান, সাভার ও উত্তরার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে বলা হয়—ডিআইজি মিজানের অবরুদ্ধ করা ব্যাংক হিসাবে তাঁর নামে অর্থ জমা করা যাবে, কিন্তু কোনো অবস্থায়ই অর্থ তোলা যাবে না। সিটি ব্যাংকের ধানমণ্ডি শাখার ব্যবস্থাপক এ আদেশ প্রতিপালন করবেন।

মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আরো বলেন, ‘এখন মিজানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে। এসব সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা না হলে যদি সেগুলো স্থানান্তর করা হয়, তবে তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি হতো।’

ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। কিন্তু মিজান ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনে একটি অডিও টেপ ফাঁস করলে বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক। পরে গত ১২ জুন মিজানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদ। বুধবার তিনি আদালতে ডিআইজি মিজানের সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, ডিআইজি মিজান নামে-বেনামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল কাজ করছে।

এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় গত বছরের জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মিজানকে। এর চার মাস পর তাঁর সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক। এক হাত ঘুরে সেই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। এই অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান গত ৮ জুন দাবি করেন, তাঁর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বাছির। এর পক্ষে তাঁদের কথোপকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ একটি টেলিভিশনকে দেন তিনি। ওই অডিও প্রচার হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক। তখন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ডিআইজি মিজানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ঘুষ দেওয়াও ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে।

ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করে পুলিশ। হাইকোর্ট ডিআইজি মিজানের ক্ষমতার বিষয়ে সমালোচনা করে বলেন, তাহলে কি মিজান দুদকের চেয়ে বড়? এরপর দুদক তাঁর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আবেদন করে।

পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, ডিআইজি মিজানের ব্যক্তিগত কোনো কাজের দায় পুলিশ বাহিনী নেবে না। পুলিশ সদস্য হিসেবে বাড়তি কোনো সুযোগও তিনি পাবেন না। দোষী প্রমাণিত হলে সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিআইজি মিজানকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না—এ বিষয়ে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইনি প্রক্রিয়া চলছে।’