লোহার খনিতে কর্মসংস্থান হবে ভেবে খুশি এলাকাবাসী

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৬-২১ ১২:০২:৩৬


ভূতাত্ত্বিক অধিদফতরের জরিপে দিনাজপুরের হিলিতে আলীহাট ইউনিয়নের ইসবপুর গ্রামে মিলেছে উন্নত মানের লোহার খনির সন্ধান। যেখানে লোহার সঙ্গে মিশ্রিত রয়েছে কপার, অ্যালুমিনিয়ামসহ নানা ধরনের খনিজ সম্পদ। সীমান্তবর্তী এই লোহার খনি নিয়ে মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। খনি থেকে উত্তোলন শুরু হলে এখানে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে ভেবে খুশি স্থানীয়রা।

জানা যায়, ২০১৩ সালে সর্ব প্রথম দিনাজুপরের হাকিমপুর উপজেলার মর্শিদপুর গ্রামে লোহার খনির জরিপ কাজ শুরু হয়। সেখানে প্রায় চার মাস ড্রিলিং কার্যক্রম শেষে ফলাফল আসে এর নিচে লোহা, চুনাপাথরসহ নানা খনিজ পর্দাথ রয়েছে। তারপর থেকে দীর্ঘ ৬ বছর পর চলতি বছরের ২১ এপ্রিল আবারো একই ইউনিয়নের আলাদা একটি গ্রামে লোহার সন্ধানে জরিপ কাজ শুরু করে বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অধিদফতরের (জিএসবি) ৩০ সদস্যের একটি দল। তারা সেখানে ২৪ ঘণ্টা তিনটি স্পটে ড্রিলিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সেখান থেকে লোহার খনির সন্ধান পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের এলাকায় প্রথম বাংলাদেশের মধ্যে লোহার খনি বের হয়েছে এতে তারা খুব খুশি এবং আনন্দিত। এই খনির মাধ্যমে আমাদের এলাকা আগের থেকে অনেক উন্নত হবে বলেও আশা করেন তারা।

এলাকাবাসী বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের দাবি যখন লোহা খনি থেকে উত্তোলন করা হবে তখন যেন আমরা আমাদের জমির ন্যায্যমূল্য পাই। পাশাপাশি আমাদের এলাকার বেকার যুবকদের যেন এখানে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়।’

হাকিমপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক ইরফান আলী  জানান, এখান যে লোহার উপস্থিতি রয়েছে সেটি আমাদের দেশের একটি বড় অংশের চাহিদা মেটাবে। এটি উত্তোলন করলে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে, কেননা দেশে প্রতিবছর বিদেশ থেকে লোহা আমদানি করতে হয় বিভিন্ন শিল্পকারখানার জন্য। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের নষ্ট হয়।

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ড্রিলিং প্রকৌশলী) মাসুদ রানা বলেন, ‘আমরা (জিএসবি) এর ৩০ সদস্যের একটি দল আলীহাট ইউনিয়নের ইসবপুর গ্রামে ড্রিলিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এর ড্রিলিং কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ছিলো খনিজ সম্পদের মজুদ, বিস্তৃতি ও অর্থনৈতিক সম্ভ্যবতা যাচাই করা। আমার ১৩০০ ফিট গভীরে লোহা আকরিকের সন্ধান পেয়েছি। লোহা আকরিক কি পরিমান আছে এর বিস্তৃতি কতটুকু তা জানতে আমাদের আরও ড্রিলিং করতে হবে।’

অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মাসুম  জানান, আমরা সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে এই উপজেলার নয়াপড়া মর্শিদপুর এলাকায় লোহার আকরিকের সন্ধান পাওয়ায় যায়। আমরা ঢাকা অফিসে গিয়ে এসব পর্যালোচনা করে দেখি এই এলাকায় আরও খনন কার্যক্রম চালানো দরকার। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ২১ এপ্রিল আমরা ইসবপুর গ্রামে দ্বিতীয় পর্যায়ে খনন কাজ শুরু করি। এখানেও আমরা লৌহের আকরিকের একটা সন্ধান পেয়েছি। এখানকার লোহা খুবই উন্নত মানের। এখানে খনিজ সম্পদে লোহার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের ওপরে।’

তিনি আরও জানান, এটিই বাংলাদেশে প্রথম লোহার খনি। এই খনির পরিধি যদি চারিদিকে ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার স্কয়ারও হয় তবে বিশ্বের যে ১০টি বড় লোহার আকরিকের খনি আছে তার মধ্যে জায়গা করে নিতে পারে এই খনিটি। তবে খনিতে কি পরিমান লোহা মজুদ আছে তা জানতে আরও কিছু সময় লাগবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।