বাজেট বিষয়ে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোনের প্রতিক্রিয়া
ব্যবসায়ী বান্ধব বাজেটে বাড়াবে বৈষম্য
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৯-০৬-২৪ ২০:০৫:১২
বাজেট হয় দেশের উন্নয়নের জন্য । কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। কিন্তু এ বছর যে বাজেট পেশ করা হয়েছে তা হচ্ছে ধনী ও ব্যবসায়ী বান্ধব । এখানে শ্রমিকদের জন্য কিছু নেই। কৃষকের জন্য বরাদ্দ নেই। শিক্ষার উন্নতির জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। ঋণ খেলাপিদের ও কালো টাকার মালিকদের পকেট আরো ভারি হবে। বাজেট প্রণয়নে জনগণের মতামত নেওয়া হয় না। জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করা হয় না। এই বাজেট মুক্তিযুদ্ধের দর্শনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে নাগরিক প্রতিক্রিয়া ও মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সোমবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন (ডিবিএম)। গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোনের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা মূল প্রবন্ধে প্রস্তাবিত বাজেটকে দায়সারা গোছের ও প্রথাবদ্ধ উল্লেখ করে বলেন এখানে দেশের মূল সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হয়েছে। বৈষম্য কমানোর দিকে নজর দেয়া হয়নি এবং মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়েও কিছু বলা হয়নি।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাহ বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে বলেন, বাজেট পেশের আগে জনগণের মতামত নেওয়া হয় না। জন প্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যদের সাথে আলোচনা করা হয় না। এমনকি সংসদীয় কমিটিগুলোতেও এ বিষয়ে মতমতা চাওয়া হয় না ।
তিনি প্রশ্ন রাখেন বাজেট আসলে প্রণয়ন করে কে? বাজেটে ধনীদের জন্য সুবিধা দেওয়া হয়। এই নীতি মুক্তিযুদ্ধের দর্শনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক । তিনি আরো বলেন, আগের অর্থমন্ত্রী তাও রাখ ঢাক করে চলতেন বলতেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রীর কোনো কিছু গোপন থাকছে না, প্রস্তাবিত বাজেটই এর প্রমাণ। অর্থমন্ত্রী বলছেন দেশ কানাডা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ কানাডা হওয়ার জন্য তো মুক্তিযুদ্ধ হয় নি। মুক্তিযোদ্ধাদের গরীবের কাতারে ফেলে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান তাদের অসম্মানের শামিল।
সরকারের অন্যতম শরীক দলের এই নেতা বলেন, মন্ত্রীরা প্রায়ই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলে যা হবে প্রযুক্তিভিত্তিক। শিক্ষায় কম বরাদ্দ দিয়ে, প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকদের মাসব্যাপি অনশন দিয়ে কীভাবে এই বিপ্লব হবে তা মাথায় আসে না। তিনি টাকা পাচার কারীদের নব্য রাজাকার বলে অবহিত করেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন বাজেট হয়েছে লূটেরা শ্রেণীর জন্য কারণ কালো টাকার মালিকরাই সুবিধা পাবে। তিনি বলেন, সরকার উন্নয়নের নহর বইয়ে দিচ্ছে, ঘরে ঘরে কর্মসংস্থান দিচ্ছে, অন্যদিকে কাজের খোঁজে ভূমধ্য সাগরে যুবকেরা জীবন দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন সরকারের উচিত দুর্নীতি অপশাসন অস¦চ্ছতা দূর করা, তা না করে এদেরই সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে ।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজ্জেকুজ্জামান রতন বলেন, বাজেট হয়েছে ব্যবসায়ী শিল্প মলিকদের স¦ার্থে এখানে শ্রমিকদের জন্য কিছু রাখা হয়নি। বাজেটের মূলমন্ত্র হচ্ছে ধনীরা আরো ধনী হবে গরীবেরা আরও গরীব। এটা গরীব মারার বাজেট। ‘তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য ১০০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বরাদ্দে তিন কোটি তরুণের জন্য কর্মসংস্থান কীভাবে হবে তার সঠিক কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতা আবদুল্লাহ আল কাফী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের ফলে জনগণের মধ্যে বৈষম্য বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ওপর দুই শতাংশ প্রণোদনা রাখার প্রশংসা করেন সিপিবির এই নেতা। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল কৃষকেরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। তারা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু বাজেটের তাদের জন্য কিছু বলা নেই। প্রকৃত কৃষকদের মাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকা ভর্তুকি প্রদানের দাবি জানান এই নেতা।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন¦য়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বাজেটের বরাদ্দ নিয়ে আলোচনার চেয়ে ব্যয়ের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। ১০০ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ৬০ টাকা লুটে নেওয়া হচ্ছে। তাই সরকারের নীতিতে পরিবর্তন না আসলে বরাদ্দ বাড়িয়েও লাভ নেই। সব লুট হবে। তিনি আরো বলেন, কর আদায় ব্যবস্থার আধুনিয়কায়ন প্রয়োজন। রাজস্ব¦ বোর্ড সেদিকে নজর না দিয়ে সহজ আয়ের দিকে ঝুঁকে থাকে। এতে যাদের কর দেওয়ার কথা তারা ফাঁকি দিতে পারে আর সাধারণ জনগণের ওপর করের বোঝা চাপে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, সংবিধানে অবৈধ উপার্যনের বিরোধীতা করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করা সরকার বার বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে, এটা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী নয়। তিনি পরিবেশ দূষণকারীদের ওপর দূষণকর আরোপের প্রস্তাব করেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিবিএম এর প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক জনাব নুরুল আলম মাসুদ এবং সভা পরিচালনা করেন একশন এইড বাংলাদেশের পরিচালক জনাব আসগর আরী সাবরি।