মাশরাফি আরেকবার বলুক, “ধরায়ে দিবানে”: সামসুল ইসলাম
স্পোর্টস ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-০৬-২৯ ১৪:৪৮:৩৯
মো: সামসুল ইসলাম
ক্রীড়া ভাষ্যকার, বেতার ও টেলিভিশন
বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফি এক জিয়ন কাঠির নাম। তার হাতের ছোঁয়ায় তামা হয়ে যায় সোনা, সাদাসিধে বালক হয়ে উঠেন ক্ষেপাটে পুরুষ, যে কিনা আগপিছ না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিপক্ষের উপর।
প্রায় ১০ বছর ধরে সামনে থেকে অভিভাবকের মতোই ওয়ানডে দলটাকে আগলে রেখেছেন তিনি। তাঁর ক্যাপ্টেন্সিতে খেলছে টাইগার্স, জিতছে টাইগার্স। স্বপ্ন পূরণের পথে এক একটি বাধা এগিয়ে চলেছি আমরা। ক্রিকেট দলীয় খেলা এবং দলীয় চেতনায় একাট্রা হয়েই লড়ছে বাংলাদেশ। ম্যাচ বাই ম্যাচ রণকৌশলে ভালই এগুচ্ছে টিম টাইগার্স। শেষ চারে যাবার প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণে আগামী ২ জুলাই সামনে আসছে ভারত। এই দলের বিরুদ্ধে আমাদের ৩৬ ম্যচে আছে ৫ জয়। যার মধ্যে প্রথম দুটি জয়ে মাশরাফির ক্যারিস্মাটিক সাফল্য অগ্রগণ্য।
২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর মাশরাফির অলরাউন্ড পারফরমেন্স (৩৬ রানে ২ উইকেট এবং ৩৯ বলে ৩১ রান) দিয়েই প্রথমবারের মতো ভারত বধ করেছিলাম আমরা। এরপর ২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে ভারতকে নাস্তানাবুদ করতে বোলার মাশরাফি ৩৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে অনন্য অবদান রাখেন তিনি। দুবারই ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন মাশরাফি। ৩য় জয়টি আসে ২০১২ সালে ঢাকায়। ম্যাচসেরা ছিলেন সাকিব। আর ২০১৫ সালের হোম সিরিজে নবাগত তরুণ মুস্তাফিজ একাই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম দিপক্ষীয় সিরিজ জিতি আমরা। ভারতকে হারানো সেই পাঁচ ম্যাচের তিন নায়ক সবাই খেলছেন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে।
আমাদের সাত ম্যাচে আছে সাত পয়েন্ট, সেমিতে যেতে কে কাকে হারাবে, কে কার বিরুদ্ধে জিতলে আমাদের সুবিধা এই গবেষণা না করে আমাদের কাজ আমাদেরকেই করতে হবে। আর তা হলো পরের দুই ম্যাচে ভারত এবং পাকিস্তানকে হারানো। আর এই কাজটি অসম্ভব নয় বর্তমান বাংলাদেশ দলের জন্য। এটা যেমন আমরা বিশ্বাস করি, তেমনি আমাদের প্রতিপক্ষ এবং বিশ্ব ক্রিকেটও বিশ্বাস করে। আমাদের দরকার নির্দিষ্ট দিনে নিজেদের সেরা পারফরমেন্সটা তুলে ধরা এবং প্রতিপক্ষের দিনটা একটু খারাপ হওয়া। অর্থাৎ স্লাইস অব লাক আমাদের অনুকুলে থাকা। আর সেজন্য চাই সকলের প্রার্থনা। জানি সেটাও আমাদের সাথেই আছে।
বিশ্বকাপের শেষদিকে এসে মনে হচ্ছে, পিচে বল গ্রিপ করছে এবং স্পিন ধরছে। তাই এগুলো আর প্রতিদিন ৩০০+ রানের পিচ থাকছেনা, বিষয়টি মাথায় নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট যথার্থ পরিকল্পনা করুক। ভারত শেষ দুই ম্যাচে আগে ব্যাট করে ২২৪ এবং ২৬৮ রানে থেমেছে, এটিও মাথায় রাখা চাই। নিজেদের উপর আস্থা আর বিশ্বাস রাখুন। খেলুন ডাকাবুকা ক্রিকেট। জয়ে কিম্বা পরাজয়ে ছিলাম আছি থাকব সবসময় পাশে। স্কোয়াডে একজন বামহাতি স্পিনার থাকলে হয়তো আমাদের বোলিংটা আরো একটু ধারালো হতো। যা নাই তা নিয়ে আফসোস না করাই ভাল। মাহমুদুল্লাহর বোলিং অপশনটা বেশ মিস করছি, কিন্তু সেখানেও কিছু করার নেই কারন কাঁধের চোট তাকে সেই সুযোগ দিচ্ছেনা।
মাশরাফি এরআগে দলকে উদ্দীপ্ত করতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন, নানারকম টোটকা ব্যবহার করেছেন। এবারো তেমন কিছু করে দেখাক মাশরাফি।আরেকবার বলুক, “সামনে যারেই পাবো তারেই ধরাতে দিবানে”। ক্যাপ্টেন মাশরাফির সময়টা ভাল গেলেও পারফর্মার মাশরাফির সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছেনা। কে জানে হয়তো, মাশরাফি এবারের আসরে তাঁর সেরা পারফরমেন্সটা তুলে রেখেছেন শেষ দুম্যাচের জন্য। আমাদের সকলের প্রত্যাশা এবং বিশ্বাস মাশরাফির জিয়ন কাঠির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া টিম বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস লিখবে এবার।