মনোনয়ন বানিজ্যের টাকা সুইস ব্যাংকে রেখেছে বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৯-০৬-৩০ ০৯:২৫:০১


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ সিটে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। সেই বাণিজ্যের টাকা কোথায় রাখল? খোঁজ করলে সুইস ব্যাংকের হিসাবে পেয়ে যাবেন।

আজ শনিবার (২৯জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থবিলের ওপর জনমত যাচাই-বাছাইয়ের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা একথা বলেন।

সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার প্রস্তাবের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন বললেন, সুইস ব্যাংকে টাকার কথা। ওনাকে আমি বলব, সুইস ব্যাংকের টাকায় কাদের নামে লিস্টটা এসেছে? উনি যেন একটু ভালো করে দেখেন। যাদের প্রশংসায় ওনারা পঞ্চমুখ আর যাদের কথা এত বেশি বলেন, তাদের নামটাই এসেছে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিএনপির কথাই বলছি  এমনও তথ্য এসেছে- ২০১৮ নির্বাচনে ৩০০ সিটে বিএনপি ৬৯২ জন প্রার্থীকে নমিনেশন দিল। একটা সিটে তিনজন, কোথাও তিনের অধিক নমিনেশন দিয়ে যে নির্বাচনী বাণিজ্যটা করল, সেই টাকাগুলো কোথায় রাখল? এই খোঁজ করলে সুইস ব্যাংকের হিসাবটা তিনি পেয়ে যাবেন।’

খেলাপি ঋণের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের কালচারটা কখন এসেছে? যখন থেকে এই দেশে মিলিটারি শাসন এসেছে। আর এই মিলিটারি শাসন কিভাবে এসেছে? ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে ও সেনা আইন লংঘন করে। অবৈধভাবে মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতা দখল করে যখন দল গঠন করতে গেল, তখন কিছু লোককে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিতে যেয়ে ব্যাংক থেকে অকাতরে ঋণ নেওয়া এবং ঋণ পরিশোধ না করার কালচারটা সৃষ্টি ।

এ বিষয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকের ইতিহাসে যান, দেখবেন সেই ১৯৭৫ সালের পর থেকে যে মিলিটারি ডিক্টেটর (জিয়াউর রহমান) ক্ষমতায় এসেছিল, তখন থেকেই কিন্তু এই খেলাপি ঋণের কালচারটা শুরু হয়েছে। এরপর একের পর এক একইভাবে ক্ষমতা দখল। কাজেই সেখান থেকে বের করে আনা অত্যন্ত কষ্টকর।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আবার মাঝে মাঝে যখন ইমার্জেন্সি সরকার আসল। ব্যবসায়ীরা কেউ জেলে, কেউ দেশ ছেড়ে ভাগতে বাধ্য। সেখানে দীর্ঘদিন তারা ইন্ডাস্ট্রি চালাতে পারছে না, ব্যবসা চালাতে পারছে না? এরকমভাবে নানা কারণে খেলাপিঋণ হয়েছে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে যদি একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলে, তখন কিন্তু এই খেলাপিঋণের কালচারটা আস্তে আস্তে চলে যেতে বাধ্য। সেটা যাতে যায় তার জন্য আমরা ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি এবং নিয়ে যাচ্ছি।’

কালো টাকা সাদা করার ব্যাপারে সংসদ নেতা বলেন, ‘অনেক সময় মানুষের অপ্রদর্শিত কিছু অর্থ আসে। কিন্তু ওই অর্থ কোনো কাজে লাগানো যায় না। তাকে যদি একটা সুযোগ দেওয়া যায়, তাহলে এই টাকাটা মূল ধারায় চলে আসে এবং জনগণের কাজে লাগে। সেইজন্যই এই সুযোগটা দেওয়া হচ্ছে। তবে এটা ঠিক, যদি আমরা দেখি এখানে দুর্নীতি বাড়ছে, সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করব। সেটা করার সুযোগ আছে। কারণ দুর্নীতিকে আমরা কখনই প্রশয় দেব না। দুর্নীতি-সন্ত্রাস-মাদক; এর বিরুদ্ধে অভিযান জিরো টলারেন্স। সেটা অব্যাহত থাকবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে ৪০ভাগ দরিদ্র ছিল, সেটা আমরা ২১ ভাগে কমিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র কমিয়ে এনেছি। এটা কমল কিভাবে? কারা কমাল? আমরা, এই আওয়ামী লীগই কমিয়েছি। এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের আয় বাড়ছে। গ্রামের মানুষেরও আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকে গ্রামের দিকে তাকিয়ে দেখুন। মানুষের আরও উন্নতি হোক, সেটাই আমরা চাই। সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে মানুষ ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে। সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। তবে যারা বিদেশে পাড়ি দিয়ে সেখানে বসে নানা রকম চক্রান্ত করছে, তাদের চক্রান্তের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করব কিভাবে? যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের হত্যা করার চেষ্টা করে, যারা মানি লন্ডারিং কেসে সাজাপ্রাপ্ত, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত এদের ব্যাপারে আরও কি করা যায়- সেটাই আমাদের ভাবতে হবে।

যে বাংলাদেশ ছিল একদিন তলাবিহীন ঝুড়ি, বাইরে গেলে বলা হত দরিদ্র্যের বাংলাদেশ; ঝড়-বৃষ্টির বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশকেই আজ এডিবিসহ বড় প্রতিষ্ঠান উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে স্বীকার করছে। কল্যাণ রাষ্ট্র না হলে এটা আমরা করলাম কিভাবে?’

আমাদের সংসদ সদস্যগণ জনমত যাচাইয়ের যে প্রস্তাবটা দিয়েছেন, এই প্রস্তাবটা কোনোমতেই গ্রহণ করতে পারছি না বলে দুঃখিত উল্লেখ করেন সংসদ নেতা।