দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৬-৩০ ১১:২২:১৩
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। চলতি বছরের মধ্যেই শেষ হবে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রথম ফেজের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ। এমনকি উৎপাদনে যাবে একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কাজের গতি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশের সর্ববৃহৎ এ অর্থনৈতিক অঞ্চল দৃশ্যমান হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
বঙ্গোপসাগর থেকে জেগে ওঠা ধু-ধু চরাঞ্চলে সমুদ্রের লোনাজলের প্রভাবে করা যেত না কোনো চাষাবাদ। গবাদিপশুর বিচরণ আর মাছ চাষে সীমাবদ্ধ ছিল এ জমির উপযোগিতা। সন্দ্বীপ চ্যানেলঘেঁষে জেগে ওঠা চরের কদরহীন এসব জমিই এখন দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগের রাজধানী শহর হিসেবে খ্যাতি পাচ্ছে। মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুর চর, শীল চর, মোশাররফ চর ও পীরের চর এলাকা, ফেনীর সোনাগাজী ও সীতাকুণ্ড অংশের ৩০ হাজার একর চরাঞ্চলজুড়ে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম এ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
জানা গেছে, ৭ হাজার ৭১৬ একর জমিতে ও সমুদ্রতীরে জেগে ওঠা ১৫ হাজার একর জমির মধ্যে চারটি মৌজায় ৬ হাজার ৩৯০ একর জায়গায় শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। চায়না হারবার কোম্পানির তত্ত্বাবধানে সেখানে নির্মাণ হচ্ছে অবকাঠামো, তৈরি হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ। এরই মধ্যে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি হয়েছে ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মিরসরাই ইপিজেড পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে চার লেনের আরো ১০ কিলোমিটার শেখ হাসিনা এভিনিউ। মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংযুক্ত হচ্ছে এ অঞ্চলের সঙ্গে। সমুদ্র উপকূলঘেঁষে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নৌবাহিনী ও চায়না হারবার কোম্পানি সাড়ে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করছে। কারখানায় পানি সরবরাহের জন্য দুই একর জমিতে তৈরি করা হবে জলাধার। সমুদ্রবন্দর নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
গ্যাস সরবরাহের জন্য ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন বসাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড স্থাপন করবে ১৫০ মেগাওয়াটক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়া ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের আরো একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার জন্য বেজার কাছে চাওয়া হয়েছে ৫০ একর জমি।
বেজা সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলে দেশী-বিদেশী শিল্পোদ্যোক্তাদের ৮৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। সেখানে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে বিনিয়োগ করতে চায় বসুন্ধরা, পিএইচপি, কেএসআরএম, বিএসআরএম, ঝেজিয়াং, কুনমিংসহ বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ। এছাড়া ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে সামিট চিটাগং পাওয়ার, ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রি, বিপিডিবি আরপিসিএল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চায় ১ হাজার কোটি টাকা, আরব-বাংলাদেশ ফুড ১০০ কোটি, গ্যাস-১ লিমিটেড ২০০ কোটি, ফন ইন্টারন্যাশনাল ২০০ কোটি, ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সাড়ে ৫০০ কোটি, আরমান হক ডেনিমস ১০০ কোটি ও অর্কিড এনার্জি ২০০ কোটি টাকা।
আরো জানা গেছে, সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে পিএইচপি গ্রুপ। পিএইচপি স্টিল ওয়ার্কস বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে সেখানে স্টিল মিল স্থাপন করবে। এ গ্রুপ ৫৬৪ একর জমিতে স্টিল মিলসহ বিভিন্ন খাতে দুই ধাপে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি ৫০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন। এতে আধুনিক পাল্প অ্যান্ড বোর্ড মিলসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপন ও ইকোনমিক জোনের উন্নয়নে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।
এ বিষয়ে বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ক্রমে দৃশ্যমান হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের কাজ। ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ প্রথম ফেজের কাজ শেষ হবে। উৎপাদনে যেতে পারে পাঁচটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা ভাগ্যবান, আমাদের এলাকায় এ রকম একটি শিল্পশহর প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এটি হলে মিরসরাই হবে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো শহর। ২০৩০ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে এ শিল্পশহর চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পুরো কাজ শেষ হলে এখানে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৩০ লাখ লোকের।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বেপজা ইকোনমিক জোন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।