বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চীনের প্রতি আহবান
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৭-০৫ ১০:২৬:৪৩
বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসা এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের সব সম্ভাবনা খুঁজে বের করে কাজে লাগাতে চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলেও এসময় উল্লেখ করেন তিনি।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রোমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি)-এ চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠকে তার মূল প্রবন্ধে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সিসিপিআইটি চেয়ারপারসন গেও ইয়ান গোলটেবিল আলোচনায় স্বাগত বক্তৃতা করেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রফতানি খাত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে ।তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী বছরগুলোতে চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াবেন। তিনি বলেন, ‘এখন এমন অনেক ক্ষেত্রই রয়েছে যেখানে আপনাদের বিনিয়োগ সম্প্রসারিত করতে পারেন। বিশেষ করে উৎপাদন খাতে, যেমন- বস্ত্র ও চামড়া এবং মাঝারি ও ভারি শিল্প খাত, যেমন-কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং হাল্কা প্রকৌশল খাতে।’
চীন ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের বৃহৎ ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দুই দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার একটি বড় অংশই ছিল চীন থেকে আমদানি নির্ভর।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চীনের অত্যন্ত নিকট প্রতিবেশী এবং ভূ-কৌশলগতভাবে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মাঝে অবস্থিত। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম দেশ। বাংলাদেশে বিনিয়োগ ১৬ কোটির অধিক জনসংখ্যার বিশাল বাজারে কেবল সরাসরি প্রবেশাধিকারই নিশ্চিত করবে না, বরং পরোক্ষভাবে চীন তথা দক্ষিণ এশিয়ার ৩শ’ কোটির অধিক জনসংখ্যার বাজারেও প্রবেশাধিকার দেবে।’
বাংলাদেশকে একটি কঠোর পরিশ্রমী,দক্ষ এবং স্বল্প শ্রমব্যয়ের দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বল্প, দক্ষ এবং ম্যানেজমেন্ট গ্রেড শ্রমিকদের বেতন-ভাতা এদেশেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাইতে স্বল্পতম। বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য নানারকম প্রতিযোগিতামূলক এবং আকর্ষণীয় আর্থিক প্রণোদনার প্যাকেজও প্রদান করে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে- যখন ইচ্ছে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাওয়ার সময় মুনাফা এবং আসল নিয়ে যাওয়ার সুযোগ, আয়কর রেয়াত, নির্ধারিত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে আর্থিক প্রণোদনা,৭৫ হাজার ডলার বিনিযোগের ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ এবং ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নাগরিকত্বও প্রদান করে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘তৈরি পোশাক এবং বস্ত্র খাতে চীনের পর পরই বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ রফতানিকারক দেশ এবং এই তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উচ্চমান এবং দামের সুবিধার জন্য বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য ইতোমধ্যেই বিশ্বের মোট রফতানির দুই থেকে তিন ভাগ দখলে সমর্থ হয়েছে। আমরা বৃহৎ অর্থনীতির দেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত সেবা সমূহ রফতানি করছি। দেশের প্রথাগত জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প কারখানাগুলোকে জাহাজ নির্মাণ শিল্প কারখানায় রূপান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নত অনেক দেশেই ছোট এবং মাঝারি আকারের জাহাজ রফতানি করছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ১৪৫টি দেশে সাধারণ ওষুধ সামগ্রি রফতানি করছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির মাছ ও শাকসবজি উৎপাদনকারী ও চতুর্থ বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশে কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।’
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৩৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা রফতানি করেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ রফতানির পরিমাণ ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ চীনা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করে এবং এজন্যই চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশটিতে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। তিনি বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের নির্মাণ, গতানুগতিক ও বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অবকাঠামো উন্নয়নের মতো অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পই চীনা কোম্পানিগুলো বাস্তবায়ন করছে।’
গোলটেবিল বৈঠকে চীনা শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা বক্তব্য রাখেন। আরও বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট ফজলে ফাহিম, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মুনতাকিম আশরাফ, ভাইস প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান ও ইন্টারনেশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট রোকেয়া আফজল রহমান।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
গোলটেবিল বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, চীনের বাণিজ্য নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এতে অংশগ্রহণে তাদের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। তারা টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেনুফেকচারিং ও কন্সট্রাকশন সেক্টরের মত গুরুত্বপূর্ণ সব সেক্টরে বিনিয়োগ করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে প্রায় ৪০০ চীনা কোম্পানি কাজ করছে বলেও তিনি জানান। সূত্র: বাসস।