বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন: দক্ষিণ কোরিয়া

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৭-১৪ ১৭:৫১:৫৭


দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মি.লি ন্যাক-ইয়ন বাংলাদেশের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে তিনি অত্যন্ত ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেছেন। কোরীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে অবকাঠামো, জ¦ালানি এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতে আরও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

আজ (১৪ জুলাই) স্থানীয় এক হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘কোরিয়া-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম’-এ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এফবিসিসিআই এবং কেআইটিএ (কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এসোসিয়েশন) যৌথভাবে এ ফোরামের আয়োজন করে।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা জনাব সালমান এফ রহমান ফোরামে উপস্থিত ছিলেন। ফোরামে এফবিসিসিআই সহ-সভাপতিবৃন্দ, পরিচালকবৃন্দ, এবং এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি, সংগঠনের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানগণসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ি ও শিল্পপতিবৃন্দ অংশ নেন।

ফোরামের শুরুতে সকালে ‘কোরীয় সরকারের নতুন দক্ষিণ নীতি ও কোরিয়া-বাংলাদেশ সহযোগিতা কৌশল (Korean Government’s New Southern Policy and Korea-Bangladesh Cooperation Strategies)’ এবং ‘কোরিয়া-বাংলাদেশ সহযোগিতার সর্বোত্তম চর্চা (Best practices of Korea-Bangladesh Cooperation)’  বিষয়ে দু’টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সেশনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য মি. নাভাশ চন্দ্র মন্ডল এবং কোরিয়া পক্ষ থেকে কেটি করপোরেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিজ. ডল সুন জ ুপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। দ্বিতীয় সেশনে কেইপিজেডের সভাপতি জনাব জাহাঙ্গীর সাদাত এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক জনাব মোহাম্মদ এনামুল কবির প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব টিপু মুনশি কোরিয়াকে বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন যে, কোরীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বাংলাদেশ সফর দেশ দু’টির মধ্যে সকল ক্ষেত্রেই সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

শিল্পমন্ত্রী জনাব নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, কোরিয়া বাংলাদেশে ষষ্ঠ বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ। বিদেশি বিনিয়োগকারীদেও সহায়তায় শিল্প মন্ত্রনালয় তাদের কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ এবং কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌছেছে। বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার ব্যবসা পরিচালনা সহজ (ease of doing business) করার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেহেতু দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে তাই কোরিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে এফবিসিসিআই সভাপতি কয়েকটি সম্ভাবনাময় কাজের ক্ষেত্র উল্লেখ করেন:
ক. ইলেক্ট্রনিক্স, অটোমোবাইল, টেলিযোগাযোগ, জাহাজ নির্মাণ, রাসায়নিক ও স্টিল শিল্পে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহায়তা,
খ. হালকা, মাঝারি ও ভারি শিল্পের জন্য যৌথ উদ্যোগে উচ্চ প্রযুক্তির গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবন ,
গ. তৃতীয় শিল্প বিপ্লব থেকে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে উন্নীতকরণের এ লগ্নে প্রয়োজনীয় জ্ঞান বিনিময়,
ঘ. শিল্প, উৎপাদন এবং সেবাখাতে প্রকৌশল ও কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন কর্মী তৈরিতে যৌথ উদ্যোগ গ্রহন
ঙ. বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত ও কলা শাখার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় জ্ঞান বিনিময় এবং
চ. সমূদ্র অর্থনীতির বিকাশে যৌথ উদ্যোগ গ্রহন।

কেআইটিএ’র চেয়ারম্যান মি. ইয়াং জু কিমও ফোরামে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের শেষে বাংলাদেশ ও কেআইটিএ (কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এসোসিয়েশন)-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এবং কেআইটিএ’র চেয়ারম্যান মি. ইয়াং জু কিম স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

উল্লেখ্য যে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২৯৩.৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি করে এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৯৮১.২০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যগুলো হচ্ছে নীটওয়্যার, ওভেন গার্মেন্টস, ফুটওয়্যার, চামড়া এবং চামড়া জাতীয় পণ্য। আর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মুলত যানবাহন, বিমান, জাহাজ এবং এ সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ, ধাতু, মেশিনারী সামগ্রী, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি এবং কেমিকেল পণ্য আমদানি করা হয়।