বর্তমানে বিশ্বে ৮২ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৭-১৬ ১৬:৫৮:০৮


বর্তমান সময়ে  বিশ্বের বিভিন্ন দেশে  ৮২ কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করে।প্রতিদিন তিন বেলা খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত খাবার তাদের নেই। এক বছর আগে এ সংখ্যা ছিল ৮১ কোটি ১০ লাখ। এ নিয়ে টানা তৃতীয় বছরের মতো বিশ্বে ক্ষুধার্তের সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে স্থূলতার হার। গত সোমবার রাতে ইতালির রোমে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত ‘২০১৯ সালে বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি : অর্থনৈতিক মন্দা ও দুরবস্থা থেকে সুরক্ষা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বের প্রতি ৯ জন মানুষের একজনই ক্ষুধার্ত। এটি আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধার্তের হার শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত (৫১ কোটি ৩৯ লাখ) মানুষ বসবাস করছে এশিয়ায়। ২৫ কোটি ৬১ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষ আফ্রিকায় এবং চার কোটি ২৫ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষ বসবাস করছে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে।

প্রতিবেদনের একটি অংশে মিয়ানমার থেকে বাস্তচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি তাদের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ স্থান পেয়েছে। একটি সারণিতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে অপুষ্টির হার বেড়েছে। ২০০৪-০৬ সালে বাংলাদেশে অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৩৮ লাখ। ২০১৬-১৮ সালে তা দুই কোটি ৪২ লাখে উন্নীত হয়েছে। তবে বেশ কিছু হিসাবে বাংলাদেশের উন্নতির তথ্য স্থান পেয়েছে ওই প্রতিবেদনে। যেমন—২০১৪-১৬ সালে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চরম ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা ছিল এক কোটি ৭৮ লাখ। ২০১৬-১৮ সালে এ সংখ্যা কমে এক কোটি ৬৮ লাখে নেমেছে। বাংলাদেশে মাঝারি বা চরম খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা ২০১৪-১৬ সালে ছিল পাঁচ কোটি ২০ লাখ। ২০১৬-১৮ সালে তা পাঁচ কোটি তিন লাখে নেমে এসেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী মাত্রাতিরিক্ত ওজনের (ওভার ওয়েট) শিশুর সংখ্যা ছিল দুই লাখ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সব অঞ্চলেই শিশুদের বিশেষ করে স্কুলে যাওয়ার বয়সী শিশুদের মাত্রাতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা বৃদ্ধির হার অব্যাহত রয়েছে। প্রতিটি মহাদেশেই পুরুষদের তুলনায় নারীদের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির হার বেশি। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি অপুষ্টির শিকার।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ), জাতিসংঘের জরুরি শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রধানরা গতকাল বিশ্বে ক্ষুধার্তের হার কমাতে প্রচেষ্টা জোরদার এবং আরো বেশি সমন্বয়ের তাগিদ দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনীতির গতি শ্লথ এমন অনেক দেশ, বিশেষ করে মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ক্ষুধার্তের সংখ্যা বাড়ছে। আয়বৈষম্য বাড়ছে এমন দেশগুলোতে ক্ষুধার্তের সংখ্যা বৃদ্ধির তথ্য মিলেছে এবারের প্রতিবেদনে।

সংঘাত, সহিংসতা ও ভাঙনের প্রভাব পড়েছে এমন দেশগুলোতে থাকে বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশ্রয়শিবিরের দোকানগুলো থেকে পণ্য কেনার জন্য রোহিঙ্গাদের যে ই-ভাউচার দেওয়া হয় তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ২০টি পণ্য কেনা যায়। এর মধ্যে ১২টি পণ্য কেনা বাধ্যতামূলক।